নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১৪ জুন) :: পেকুয়ায় ৫ পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। এতে করে উপজেলার উপকুলবর্তী দুটি ইউনিয়নের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও আমাবস্যার ভরা তিথীতে সাগরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানির প্রচন্ড স্রোত ও জোয়ারের ধাক্কায় উপজেলার উপকুলবর্তী উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন অংশে টেকপাড়া পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে।
একইভাবে রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলীন হয়। প্রায় ৫০ ফিট ওই পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। বিলীন ওই অংশ দিয়ে গত দুই দিন ধরে সাগরের জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
এতে করে ওই ইউনিয়নের নতুনঘোনা, পালাকাটা, ও বদিউদ্দিনপাড়াসহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ধারিয়াখালী পয়েন্টে বেড়িবাঁধের ২০ ফিট অংশ বিলীন হয়। ওই অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে।
এ সময় মগনামা ইউনিয়নের ধারিয়াখালী কুমপাড়া, বাইন্নাঘোনা ও রকুরদিয়াসহ আশপাশের আরও কিছু গ্রামে পানি প্রবেশ করে। উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন অংশে টেকপাড়া পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। বেড়িবাঁধের পৃথক অংশ বিলীন হয়েছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, এ অংশে প্রায় ৭শ ফিট বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যায়। বিলীন ওই অংশ দিয়ে উজানটিয়া খালের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে টেকপাড়া, পূর্ব উজানটিয়া, সুন্দরীপাড়া,রুপালীবাজারপাড়া, মালেকপাড়া মিয়াজি পাড়াসহ এ ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। একই ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ায় পাউবোর বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, করিয়ারদিয়ায় প্রায় ৬ টি স্থানে বেড়িবাঁধ এর অংশ বিলীন হয়েছে।এরই মধ্যে পৃথক দুটি অংশ স্থানীয়রা মাটি ভরাট করে পানি আটকায়। গুদামপাড়া, কুমবাইশেরিয়া, রিপুজিঘোনা, নাপিতারঘোনা, লম্বাবাইশারি, ছোট বাইশারিসহ আরও একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাফর আলম চৌধুরী সহ স্থানীয়রা পানি আটকানোর কাজে ব্যস্থ। যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হক জিকু জানায়, শ্রমিক দিয়ে স্থানীয়রা বেড়িবাঁধে কাজ করছে।
ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় পর্যায় থেকে দ্রুত ছুটে গিয়ে বিধ্বস্ত অংশ মাটি ভরাট করে পানি আটকানো হয়েছে। একই ইউনিয়নের সুতাচোরা পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। এ অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি উজানটিয়ায় প্রবেশ করছে। এ সময় এ ইউনিয়নের পূর্ব ও উত্তর অংশে আংশিক প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েক দিনে অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নদী অববাহিকায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাতামুহুরী নদীসহ এর শাখা নদী সমুহতে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাতামুহুরী নদীর পানি উপচিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিন ও পূর্ব অংশের অধিক গ্রামে নতুন করে প্লাবিত হওয়ার শংকা দেখা দেয়।
এ ছাড়া বৃষ্টির পানিতে উপজেলার মগনামা, বারবাকিয়া, রাজাখালী, টইটং ও শিলখালী ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ী তিন ইউনিয়নে বিপুল গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সব ইউনিয়নের বহু শাক সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবাহমান ছড়া সমুহ এর উপর দিয়ে পানির প্রচন্ড ¯্রােতধারা তৈরী হয়েছে। ছড়ার কুল উপচিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। রাস্তাঘাট ও গ্রামীন অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে যায়।
উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের এর সাথে পেকুয়ার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ধারিয়াখালী অংশে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে।
ওই অংশ দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে করে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পূর্ব উজানটিয়া বিপুল এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। টেকপাড়া অংশে জোয়ারের পানি আটকানোর প্রচেষ্টা চলছে। মৎস্য চাষীদের সমন্বয়ে স্থানীয়রা পানি আটকাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেয়।
স্থানীয় মালেকপাড়ার আনোয়ারুল হোসেন এমজারুল নামের এক মৎস্য খামারী বাঁধ সংষ্কারের উদ্যোগ নেয়। তবে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাটি ভরাট কাজ কঠিন হয়েছে। এমজারুল জানায়, আমরা চেষ্টা করছি। তবে এ পরিস্থিতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি সবচেয়ে দায়ী।
Posted ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta