(কামরুল হাসান)
এসো বন্ধু এসো মালকা বানুর দেশে,
সমুদ্রের তীরে।তোমাকে বরণ করবে বলে-
বালুরেখার ঢালু বাঁকে,ঝাঁকে ঝাঁকে-
লাল কাঁকড়ারা বরণ কুলার ছবি আঁকে।
এসো বন্ধু এসো প্রবাল দ্বীপের কাছে,
এখানে বাগদা চিংড়ি ভেঁজে দিবে,রুপচাঁদারা হেসে হেসে।
ভাসবাসবে বলে এসো,নাফ কুমারীর কাছে।
আত্মাহুতি দিবে মাথিন,তোমাকেই ভালবেসে।
রাংকোটে দেখবে তুমি,সম্রাট অশোকের ছায়া। হিমছড়িতে ঝর্ণাজলে জলনৃত্যে জলমোহিনী,
নীলচোখিনি মোগল কন্যার কায়া।
বাঁকখালির ঐ বাঁকে বাঁকে চুখে মুখে,
জল-থামিতে জলবরণি জলহাওয়াদের মায়া।
এখানে জলকেলিতে ভিজে যায়,
ছেনেখামুখি রাখাইন কন্যার প্রাণ।
জলপরীরা খেতে দেয়,মহেষখালির-
রসে ভরা ঠোট রাঙানো পিঠাপান।
সোনাদিয়ার লোনাজলে জলসাঁতারে,
নাকে-মুখে মুহু মুহু নুনদরিয়ার ঘ্রাণ।
ঝিনুক বালিকা মালা গেঁথে গেঁথে,
শুনাবে তোমাকে -ঝিনুক বালার গান।
চাঁদপাখি তুমি ও এসো,কবি-চূঁড়া ভালবেসে। চাঁদরাতে কবিটং-এ এসো,জোসনায় ভিজে যেতে।
এসো সৈকত নগরে,ঝাউদরিয়ার ডানায় উড়ে।
সূর্য হাতে,ঝিনুকের মালা পরে।সমুদ্রস্নান সেরে- মালা বদল করে,যাবে যে তুমি কবিতা চত্বরে।
এসো প্রতীতি জগৎ অতিথি,
এসো সাগর কন্যার ঘরে।
পেতেছি বরণ কুলা,
দরিয়ানগরী কক্সবাজারে।।
পাখিরা এসো বাসা বাঁধো এইখানে,
জলকন্যার দেশে।
এখানে ঝর্ণাজলে বাগদা ইলিশ সাজে,
রুপচাঁদা বেশে।
মুখরসে মন-মজে,ঠোটরাঙা গিরিকন্যা সাধে
মিঠাপান।
বাঁকে বাঁকে মালকার কায়া,বাঁকখালিতে ভাসে
জলহাওয়াদের মায়া।
এখানে বরণমালা গাঁথে ঝিনুক বালিকা-
সৈকতে হাসে সোনালী কাতান,
প্রবালদ্বীপে নাফকুমারীর সফেনিক কলতান।
বঙ্গোপজলে জন্মদিনের পোষাক পরে জলকৈতর
হয়ে,জলসাঁতারে হও অমৃতের সন্তান।
এসো সিলকি বালুচরে,দেখ কুসুম সূর্য হাতে-
প্রিয়তমার মেহেদি রাঙা যুগল হাত।
যেখানে শামুকির সাথে লাল কাঁকড়া খেলা করে,
বালুকা ক্যানভাসে আঁকে ছবি।
আলপনা বরণি জাদিমুরা গিরিচূড়া পদ্মফুলের
বরণডালা হাতে রাক্ষাইন তরুনি,
গেঁথে আছে মোক্তার বলী ম্যামাচিং মাথিন আর আলকুমারীর প্রেম কাহিনী।
কবিপ্রান্তে জন্মতিথি ঝাউবিথি জন্মপিরিতি,
এখানে এসো বন্ধু,গেয়ে যাও নন্দন প্রিয়ার
মাঙ্গলিক গীতি।
সৃষ্টির উদ্ধাম নৃত্যে ব্রম্রন্ডলোকের প্রাণ-
সৃষ্টি মোহে কবিতির্থে,
এসো প্রতিতী জগৎ-অতিথি,
এসো স্রষ্টা সৃষ্টি অম্লান।।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ উখিয়া,কক্সবাজার।
সব্যসাচী লেখক কবি কামরুল হাসান। জন্ম ২০ মার্চ ১৯৬৪, দরিয়াপাড়, কক্সবাজার শহর। পিতা প্রয়াত ডা. নুরুল হক ও মাতা রোকেয়া বেগম। শৈশব থেকে খেলাধুলা, চিত্রকলা, অভিনয়সহ শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি একইসঙ্গে কবি, শেকড়সন্ধানী লেখক, গবেষক, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও সংগঠক।
রচিত ও নির্দেশিত নাটকসমূহ : খুকুড়ি, দ্রæহী পল্লান, কালাচাঁনের দোয়ারী, স্বপ্নসুখ। এই কবি মৈন কুমারী ও তমাটে কিশোর এবং জন্মজ্ঞাতি নামক ২টি কালজয়ী নাটক রচনা করেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহ : নাফকাব্য, রাখাইন কাব্যিয়া।
সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ : উর্মি, সৃষ্টি সৌন্দর্যের আরেক রূপ, আমরাও পারি, চিহ্ন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় স্মারক ২০১০, বিজয় স্মারক ২০১১, বিজয় স্মারক ২০১২, বিজয় স্মারক ২০১৪ প্রভৃতি। এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলা পিডিয়ায় ‘রাখাইন’ প্রকাশ। অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন।
পুরস্কার : কবি কোলকাতা সিটি করপোরেশন প্রদত্ত ‘সংস্কৃতি ও সম্প্রীতি ১৯৯৪’ পুরস্কার, ‘সাগরমুনি’ পুরস্কার ২০১০, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০১০, ২০১১ সালে ‘শব্দায়ন প্রদত্ত বর্ষসেরা কবি ও কবিতা পুরস্কার ১৪১৭’, কবি নুরুল হুদা সম্মাননা ২০১২, কক্সবাজার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ প্রদত্ত ‘জ্ঞানতাপস’ সম্মাননা ২০১২, লোকসংস্কৃতি বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা পুরস্কার ২০১৫ লাভ করেন। ওয়াইপো ও এশিয়াটিক সোসাইটি পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
Posted ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta