শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বৃষ্টিপাতহীন তীব্র গরমের উত্তাপে কক্সবাজারে প্রতিদিন ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
53 ভিউ
বৃষ্টিপাতহীন তীব্র গরমের উত্তাপে কক্সবাজারে প্রতিদিন ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন

বিশেষ প্রতিবেদক :: গ্রীস্মের তীব্র গরমে কৃষিপণ্য উৎপাদনসহ নানা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লবণ। বৃষ্টিপাতহীন গরমের উত্তাপে লবণের উৎপাদন বেড়েছে। প্রতি তিনদিনে দেশে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক লাখ টন। স্বাভাবিক সময়ে লবণ উৎপাদনে সময় লাগে ৬-১০ দিন।

তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় দ্রুত লবণ উৎপাদন হচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি ও মেঘমুক্ত আকাশ পাওয়া গেলে দু-তিনদিনেই পরিপক্ব লবণ ঘরে তুলছেন চাষীরা। সবশেষ এক সপ্তাহ ধরে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় লবণ উৎপাদন হচ্ছে।

সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় নভেম্বর থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়। চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদন কিছুটা ধীরগতির হলেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন বেড়েছে। মৌসুমের শেষ আড়াই মাসে বার্ষিক উৎপাদনের অর্ধেক লবণ উৎপাদন হয়েছে।

সর্বশেষ এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩৫ হাজার টনেরও বেশি উৎপাদন হয়েছে। এ হিসাবে প্রতি তিনদিনে উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক লাখ টন। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে মৌসুম শেষে দেশে লবণ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়বে কৃষক।

উৎপাদিত লবণের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এক সপ্তাহ আগেও কক্সবাজারে দৈনিক গড়ে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হতো।

কক্সবাজারে ৪১ হাজার চাষি, ১ লাখ শ্রমিকসহ জেলার অন্তত ১০ লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৬০ টাকায়।

তবে চাষিরা জানিয়েছেন, উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণের দাম কিছুটা কমছে, যার কারণে তাঁরা হতাশ।

গত শনিবার সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, লবণমাঠে ব্যস্ত রয়েছেন শ্রমিকেরা। উৎপাদিত লবণ মাঠের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

মহেশখালীর কুতুবজুম এলাকায় আমজাদ হোসেন নামের এক লবণচাষির সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, তাপপ্রবাহ বাড়ার কারণে সমুদ্রের লোনাপানি মাঠে বিছানো পলিথিনে জমানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লবণে পরিণত হচ্ছে। সকালে পানি জমিয়ে বিকেল হতেই চাষিরা লবণ কুড়িয়ে নিতে পারছেন। গরমের কারণে উৎপাদিত লবণের গুণগত মানও তুলনামূলক ভালো।

আমজাদ হোসেন আরও বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে টানা প্রচণ্ড গরম পড়ছে। তাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হলেও লবণচাষিরা খুশি। তবে লবণের দাম এই সময়ের মধ্যেই মণপ্রতি ১০- ১৫ টাকা কমে গেছে।

কুতুবদিয়া মহেশখালীর বাইরেও টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া এবং সদর উপজেলার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায়ও গরমের কারণে লবণের উৎপাদন বেড়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের নয়াপাড়ার চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি তিন একর মাঠে লবণ উৎপাদন করছেন।

গত শুক্রবার দুপুরে তিনি ৪৫ মণ লবণ বিক্রি করেছেন, প্রতি মণ ৩৪৫ টাকা দামে। মণপ্রতি লবণ উৎপাদনের বিপরীতে তাঁর খরচ হচ্ছে ২১০ টাকা।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার চাষি সুলতান আহমদ আড়াই একর  জমিতে লবণের চাষ করছেন। লবণের দাম কমে যাওয়ায় তিনি হতাশ।

সুলতান আহমদ বলেন, বেশি লবণ উৎপাদিত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে উৎপাদন বাড়ার কোনো সুফল চাষিরা পাচ্ছেন না।

টেকনাফের জাদিমুরা এলাকার চাষি আবদুল মান্নান বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে নির্ধারিত মজুরির চেয়ে শ্রমিকদের ১০০-১৫০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, তাঁর এক ইউনিয়নে এক হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে।

গত বছর এপ্রিলে টানা কয়েক দিন কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি লেগেছিল। তখন সাত দিন লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এবার আবহাওয়া লবণ চাষের অনুকূলে রয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, মেঘহীন রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া লবণ উৎপাদনে সবচেয়ে উপযোগী। একাধিক ঘূর্ণিঝড় ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে মৌসুমের শুরুতে লবণ উৎপাদনের গতি ছিল শ্লথ। যার কারণে মজুদ সংকটে দেশে দাম বাড়তে থাকে। আপৎকালীন হিসেবে এক লাখ টন লবণ আমদানিও করা হয়।

শুরুতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও গত এক মাসে দিনভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে উৎপাদন।

বিসিকের তথ্যানুযায়ী, দেশে এ বছর ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর (বিসিকের নিবন্ধিত) জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। এসব জমিতে চাষ করছেন ৪০ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক। দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী চলতি বছর ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন লবণের চাহিদা ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৪৩২ টন। গত বছরের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৮৯৭ টন। অর্থাৎ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়তি উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৫ টন।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৬২ বছরের ইতিহাসে ৬৬ হাজার ৪২০ একর জমিতে রেকর্ড ২২ লাখ ৩০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। গত বছর ৩৯ হাজার ৪৬৭ চাষী লবণ মাঠে উৎপাদনে ছিল। ২০২২ সালে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। এ বছর আগামী মে মাসের মাঝামাঝি কিংবা শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

পুরো মৌসুম উৎপাদন পাওয়া গেলে এই ধারাবাহিকতায় আরো অন্তত সাত-আট লাখ টন লবণ উৎপাদন হবে। সেক্ষেত্রে ৬৩ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে লবণ উৎপাদনের রেকর্ড তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন বিসিক কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক ও কক্সবাজারের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের প্রধান মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, ‘আবহাওয়া শুষ্ক ও তীব্র গরমের কারণে লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে। আগে আট-নয়দিনে লবণ পরিপক্ক হলেও এখন ২৪ ঘণ্টা কিংবা ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে লবণ তুলতে পারছেন কৃষকরা।

গ্রীষ্মের উত্তাপ বেশি হওয়ায় সকালে মাঠে সামুদ্রিক পানি জমানো হলে রাতেই শক্ত দানায় রূপান্তরিত হচ্ছে লবণ। এ কারণে প্রতিদিন ৩০ হাজার টনেরও বেশি লবণ উৎপাদন করছেন কৃষক।’ এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে লবণের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।

বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, কৃষিপণ্য উৎপাদনে বড় বাধা গরম। তাপদাহে পোলট্রি, মৎস্য, চা, খরিপ-১ মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু সমুদ্রের নোনা পানি শুকিয়ে লবণ উৎপাদন হওয়ায় গরম আশীর্বাদ হিসেবে হাজির হয়েছে খাতসংশ্লিষ্টদের জন্য।

বাড়তি উৎপাদন হওয়ায় মাঠে ও পাইকারি বাজারে লবণের দাম কমেছে মণপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা। সর্বশেষ ২১ এপ্রিল মাঠ পর্যায়ে ক্রুড (অপরিশোধিত) লবণ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৩২০ টাকা। যদিও বিগত বছরের একই সময়ে লবণের মাঠ পর্যায়ের দাম ছিল ৩৯০ টাকা।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল কবির বলেন, ‘গরমের কারণে ভালো মানের লবণ উৎপাদন হওয়ায় ঘাটতি থাকবে না। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে লবণের আপৎকালীন মজুদ গড়ে তোলা উচিত বিসিকের।’ এতে মিল মালিকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি কৃষকও উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি।

বিসিক সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি মৌসুমে (নভেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস) জেলার টেকনাফ, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, চকরিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে।

এসব মাঠে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।

গত শুক্রবার পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন। চলতি বছর দেশে লবণের জাতীয় বার্ষিক চাহিদা ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।

বিসিকের লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, শুক্রবার মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বেচাবিক্রি হয়েছে ৩৪০-৩৫০ টাকায়। দৈনিক লবণ উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। লবণের উৎপাদন বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে।

চাষিরা জানান, বাড়তি উৎপাদনের আশায় তাঁরা মৌসুমের শুরু থেকেই শতভাগ মাঠে পলিথিন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।

সনাতন পদ্ধতির তুলনায় পলিথিন প্রযুক্তিতে লবণের উৎপাদন আড়াই গুণ বেশি হয়। সমুদ্রের লোনাপানি মাঠের পলিথিনের ওপর জমিয়ে সূর্যতাপে শুকিয়ে লবণ উৎপাদন করা

 

53 ভিউ

Posted ১:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com