কক্সবাংলা ডটকম :: শ্রীলংকার ফর্ম ঢাকায় টেনে আনল বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল।
২০ জুলাই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তানকে দাপটে হারাল লিটন দাসের দল, যারা সদ্যই শ্রীলংকায় ২-১-এ সিরিজ জিতে দেশে ফিরেছে।
আগে ব্যাটিং করতে নামা পাকিস্তানকে ১১০ রানে অলআউট করার কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। এ রান তাড়া করতে নেমে ২৭ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
এ নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ২৩ বারের মোকাবেলায় চতুর্থবারের মতো পাকিস্তানকে হারানোর কৃতিত্ব দেখাল বাংলাদেশ।
চার জয়ের তিনটিই এসেছে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে, বাকিটি গুয়াংঝু এশিয়ান গেমসে। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি।
২০১৫ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এক ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছিল স্বাগতিকরা। যদিও তিন ম্যাচের তিনটি সিরিজের প্রতিটি জিতেছে পাকিস্তান। এবার বাংলাদেশের সামনে অপূর্ব সুযোগ এসেছে।
রাজসিক এক বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সালমান মির্জার করা ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলটি শর্ট পিচ করেছিল, যেটিকে লং-অন অঞ্চল দিয়ে সীমানাছাড়া করে স্বাগতিকদের জয় নিশ্চিত করেন জাকের আলী। তখনো ২৭ বল খেলা বাকি, হাতে ৭ উইকেট।
এমন বিলাসিতা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কবে দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ তা হয়তো সমর্থকদেরও মনে করতে কষ্ট হবে।
দাপটে জয়ের এ সুযোগটা তৈরি করে দিয়েছেন বোলাররা। টস জিতে বোলিং বেছে নেয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারে সাইম আইয়ুবকে ফিরিয়ে প্রথম সফলতা পায়। মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ।
পরের ওভারে মোহাম্মাদ হারিসকে আউট করেন স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান। এরপর অষ্টম ওভারের মধ্যে অধিনায়ক সালমান আগা, হাসান নওয়াজ ও মোহাম্মদ নওয়াজকে সাজঘরে ফিরিয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ।
তানজিম হাসান সাকিবের বলে উইকেটকিপার লিটন দাসকে ক্যাচ দেন সালমান আগা। এরপর হাসান নওয়াজকে ফেরান মুস্তাফিজ। একটু পরই মেহেদী হাসান ও লিটনের যুগলবন্দিতে রানআউট হয়ে যান মোহাম্মাদ নওয়াজ (৪৬/৫)।
পঞ্চম উইকেট পতনের পর নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে লড়ছিলেন ফখর জামান। তিনি শুরুতে প্রচণ্ড মারমুখী খেললেও দ্রুত বেশকিছু উইকেটের পতন হলে নিজেকে গুটিয়ে নেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি, ১২তম ওভারে হয়েছেন রানআউট।
তখন দলের রান ৭০ আর তার নামের পাশে ৩৪ বলে ৪৪ রান। ফখরের আউটে পুরোপুরি কর্তৃত্ব নিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। আব্বাস আফ্রিদি (২২) ও খুশদিল শাহ (১৭) জুটি বেঁধে ৩৩ রান যোগ করলেও পরে তাসকিন আর মুস্তাফিজ মিলে পাকিস্তানকে ১১০ রানে গুটিয়ে দেন।
রান তাড়া করতে নেমে ৭ রানের মধ্যে তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস বিদায় নিলে দুশ্চিন্তায় পড়ে স্বাগতিকরা। যদিও পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয় দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকদের চাপমুক্ত করেন। দুজন ৬২ বলে ৭৩ রান যোগ করে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান।
তাওহীদ ৩৭ বলে ৩৬ রান করে যখন সাজঘরের পথ ধরেন তখন দল জয় থেকে মাত্র ৩১ রান দূরে। এরপর জাকের আলীকে নিয়ে ১৮ বলে ৩২ রানের হার না মানা জুটিতে দলের জয় নিশ্চিত করেন ইমন। জাকের আলী ১০ বলে ১৫ ও ইমন ৩৯ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৫৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ইমন।
৭ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৭ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে অবিশ্বাস্য জয় পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। টাইগারদের এ জয়ের অন্যতম রূপকার পারভেজ হোসেন ইমন। তিনি ৩৯ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৫৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন।
দলকে জেতানোর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইমন বলেন, ‘আমাদের দল জেতায় অবশ্যই খুশি। আমি সত্যিই অনেক খুশি।’ বিপর্যয়ের পর ইনিংস পুনর্গঠন করতে পারার অনুভূতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিবাচক থাকতে চেয়েছি এবং সিঙ্গেল নেয়ার দিকে মনোযোগী হয়েছি। আবার যখন আমি ছক্কা মেরেছি তখন কিন্তু দারুণ উপভোগও করেছি।’
জয় শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস বলেছেন, ‘মিরপুরে অনেক খেলেছি বলে এখানের উইকেট সম্পর্কে আমরা ভালো করেই জানি। এখানে ব্যাট করা সহজ নয়, কিন্তু আমরা যেভাবে ব্যাট করেছি তা দারুণ ছিল। সম্ভবত শিশিরের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে বল ভালোভাবে ব্যাটে আসছিল।
এর আগে আমরা দারুণ বোলিং করেছি, আর দ্রুত উইকেট নিতে পেরেছি। এটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
আগামীকাল একই মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতলেই সিরিজ নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। সেদিন ব্যর্থ হলে বৃহস্পতিবার আরেকটি সুযোগ পাবে লিটন দাসের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১১০/১০ (ফখর জামান ৪৪, আব্বাস আফ্রিদি ২২, খুশদিল শাহ ১৭; তাসকিন ৩/২২, মুস্তাফিজ ২/৬)।
বাংলাদেশ: ১৫.৩ ওভারে ১১২/৩ (ইমন ৫৬*, তাওহীদ ৩৬, জাকের ১৫*; সালমান ২/২৩, আব্বাস ১/১৬)। ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: পারভেজ হোসেন ইমন (বাংলাদেশ)। সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ।
Posted ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta