কক্সবাংলা ডটকম(১০ জুলাই) :: ধসে পড়া উপহারের ঘর নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৫টি টিম এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে ঘুরছেন। তারা এই ঘর ধসে পড়ার কারণ উদ্ধারের জন্য কাজ করছেন। এই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন।
উল্লেখ্য যে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক গৃহহীন মানুষকে একটি করে ঘর দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গৃহহীন প্রতিটি মানুষকে দুই শতাংশ জমির ওপর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৩ হাজার ঘর বানানো হয়েছে এবং হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু ঘর বানানোর পর পরই দেখা যায় যে এই ঘরগুলো ত্রুটিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে ঘরগুলো ভেঙে পড়ছে, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কোথাও কোথাও উপহার দেওয়ার আগেই ঘরগুলো ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়েছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগ এক রকম প্রশ্নের মুখে পড়েছে এবং এটি যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যই ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, উপহারের ঘর ধসে পড়ার জন্য দায়ী কারা?
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যে টিমগুলো পরিদর্শন করছেন তারা মূলত খুজতে চাচ্ছেন যে, এই ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি হয়েছে কিনা, নির্মাণসামগ্রী ঠিকমতো দেয়া হয়েছে কিনা ইত্যাদি। কিন্তু যারা আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত তারা বলছেন যে, এই ঘর নির্মাণের পরিকল্পনাটি উদ্যোগ ছিল। কিন্তু অতি উৎসাহী আমলাদের জন্য এই উদ্যোগের শুরুতেই একটা ভুল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তারা মনে করছেন যে, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট একটি মজবুত ও টেকসই ঘর ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বানানো সম্ভব নয়।
তারা বলছেন যে, এরকম একটি ঘর বানানোর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সাড়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করা উচিত ছিল। তাহলেই এই ঘরগুলো টেকসই হবে। এই ঘরগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে যে পূর্ব প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা করা উচিত ছিল বিশেষ করে এরকম একটি ঘর নির্মাণে কত টাকা খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে একটি প্রাক্কলিত হিসেব করা দরকার ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা এবং এই প্রাক্কলিত হিসেব করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলেই তারা মনে করেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি হয়নি সেটাও অনস্বিকার্য।
অনেকগুলো ঘর সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে যে, ঘরগুলোতে যেভাবে নকশা দেওয়া হয়েছিল এবং যে প্রক্রিয়ায় নির্মাণ করার কথা ছিল সেই নকশা এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ইতিমধ্যে ২২টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ঘরের ত্রুটি ধরা পড়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, যেগুলোতে এখন ত্রুটি ধরা পড়েনি সেগুলো বেশিদিন টেনশন হবে না। কারণ এখানে বাড়িগুলো বানানোর ক্ষেত্রে ব্যায় সাশ্রয়কেই মূল বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রগুলো বলছে যে, তারা এই ব্যাপারটিতে শূন্য সহিষ্ণুতা নিয়েছেন। তারা দুটি বিষয় এখানে দেখছেন। প্রথমত যে যারা এই ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছেন, অনিয়ম করেছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
দ্বিতীয়ত এই ঘরগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে যদি কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে, টেকসই বাড়ি নির্মাণের জন্য যদি আরও অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে সেটিও তারা সংশোধন করবেন। প্রশ্ন উঠলো যে, শুরু থেকেই একটি ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা কেন ছিল না। বাংলাদেশে বহু টাকা বিভিন্ন ভাবে অপচয় হয়। সেখানে একটি গৃহহীন মানুষকে সারা জীবনের জন্য একটি ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি খরচ করে টেকসই ঘর দিলে কি অসুবিধা হতো? এখন এই ভঙ্গুর ঘর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী`র উদ্যোগকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন কারা?
Posted ৮:৩৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta