কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জুলাই) :: নিউ ইয়র্কে নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ খুনের ঘটনায় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীকে গ্রেফতার করেছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি)। পুলিশ সূত্রের বরাতে এনওয়াই ডেইলি নিউজ এখবর জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ফাহিমের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী তাইরিজি ডেভন হাসপিলের যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। মামলাটি তদন্তের এনওয়াইপিডির হেট ক্রাইম টাস্কফোর্সকে যুক্ত করা হয়েছে।গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, ফাহিম সালেহর ব্যক্তিগত সহকারী টেরেস তাঁর কয়েক লাখ ডলার চুরি করেছেন। তারপরও সালেহ বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি। ডলার ফেরত দিলে তিনি কিছু ডলার তাঁকে (টেরেস) দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, ফাহিম সালেহকে স্থানীয় সময় সোমবার কোনো এক সময়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী ওই দিন চলে যাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার আবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন। এরপর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে মরদেহ টুকরা করে বড় আকারের ব্যাগে ভরে ফেলেন। হত্যার আলামত মুছে ফেলারও চেষ্টা করেন।
আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস মামলার অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত হওয়া দুই কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে হাসপিলকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হতে পারে। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিমের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই একজনকে শনাক্ত করার কথা জানা গিয়েছিল পরদিনই। নিউইয়র্ক পুলিশ বৃহস্পতিবার লোকটিকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আবোলতাবোল বকতে থাকেন বলে জানা যায়।
একটি সূত্রমতে, এমন আটক করার ঘটনায় পেশাদার খুনিরা সাধারণত পাগলামোর অভিনয় করে থাকেন। বিচারের সময় আইনগত সুবিধা পাওয়ার জন্যই তাঁরা এ ধরনের আচরণ করে থাকেন। পুলিশ বিভাগের অপরাধ নিয়ে কাজ করা এক কর্মকর্তার মতে, স্বাভাবিক প্রটোকল অনুযায়ী আটক ব্যক্তিকে মনস্তত্ত্ববিদের কাছে নিয়ে যেতে হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গ্রেপ্তারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে।
এনওয়াইপিডির হাতে আটক ব্যক্তি ফাহিমের পরিচিত ছিলেন। পুলিশের সূত্র ধরে নিউইয়র্কের ‘আই উইটনেস নিউজ চ্যানেল সেভেন’ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তি ফাহিমের সঙ্গে কাজ করতেন। তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক কোনো লেনদেন ভালো যায়নি বলেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন বলে এর বেশি কিছু জানা যায়নি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, খুনি খুবই পেশাদার। এ জন্য পাগলের ভান করছেন। তাঁকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আটক ওই ব্যক্তির কাছ থেকে পুরো ঘটনার তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করছে নিউইয়র্ক পুলিশ। ফাহিম সালেহকে মিলিয়নিয়ার সিইও উল্লেখ করে আমেরিকাসহ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের টানা সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমেও একজন বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে তাঁর পরিচিতি দিয়ে আলাদা সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। ফাহিমের হত্যাকাণ্ড নিউইয়র্ক পুলিশের জন্য হাইপ্রোফাইল মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, ফাহিম সালেহকে খুন করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। খুনি পেশাদার হলেও কাজটা ঠিকমতো শেষ করতে পারেননি। ফাহিমের সঙ্গে লিফটে ওঠা ব্যক্তিকে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টেই ঢুকতে দেখা গেছে। অ্যাপার্টমেন্টের দরজা দিয়ে লিফটে করে নেমে আসার কোনো ভিডিও চিত্র পাওয়া যায়নি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফাহিমের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ জন্য ‘টেসার গান’ নামের চেতনালোপকারী বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে শুরুতেই ফাহিমকে কাবু করে ফেলেন ঘাতক। তারপর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অটোসপি রিপোর্টে দেখা গেছে। পরে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ফাহিমের দেহ টুকরা টুকরা করা হয়েছে। ব্লিচ দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা ভারী প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢোকানোর সময় লবি থেকে বা বাইরে থেকে কেউ ফাহিমের খোঁজ করতে আসেন। হত্যাকারী ফাহিমের মরদেহ টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভর্তি করে। এই ফাঁকে ধুয়েমুছে রক্ত পরিষ্কার করেন। ঘটনাস্থলে তেমন রক্ত পাওয়া যায়নি। কেউ আসছে বা দরজায় বেল দিচ্ছে, এমন ঘটনার পর হত্যাকারী সাত তলা অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান। এ জন্য তাঁকে চাবি ব্যবহার করতে হয়েছে। ফলে ঘাতকের এ ধরনের আপৎকালীন এক্সিট পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত,মাত্র ৩০ বছর বয়সে মিলিয়নারের খাতায় নাম লেখান ফাহিম সালেহ। সেই মিলিয়ন ডলার ‘ম্যান’ ৩৩ বছর বয়সে হয়ে গেলেন প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলারের মালিক। নিজের কর্মদক্ষতা ও মানুষের কল্যাণে উজ্জীবিত তরুণ ব্যবসার শুরুতে কিছুটা হোঁচট খেলেও এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
স্বপ্নবাজ এই তরুণ বাংলাদেশি আমেরিকানের নাম ফাহিম সালেহ। বাংলাদেশে অ্যাপ রাইড শেয়ারিং পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা। পরে নাইজেরিয়াতে ‘গোকাডা’ রাইড শেয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তিনি। ১৪ জুলাই বিকেলে নিউইয়র্ক নগরের ম্যানহাটনে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ তাঁর খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করেছে।
বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে ফাহিমের দেহ কয়েক টুকরা করা হয়েছে বলে নিউইয়র্কের পুলিশ জানায়। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার হরিসপুরের সন্তান নিউইয়র্ক সিটি সংলগ্ন পোকিপস্পিতে বসবাসরত আইবিএমের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ আহমেদের একমাত্র ছেলে ফাহিমকে নির্দয়ভাবে হত্যার সংবাদ গভীর বেদনার সঙ্গে
শীর্ষস্থানীয় মার্কিন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হচ্ছে। ফাহিমের এমন হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ স্তম্ভিত, শোকের ছায়া নেমে এসেছে কমিউনিটিতে।
বাংলাদেশ থেকে সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যতের সন্ধানে আমেরিকায় এসে বসতি গড়া পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী, উদ্যমী ও সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে মার্কিন ধারাতে বিশেষ স্থান করে নিয়েছিলেন ফাহিম।
Productivity 🙌 pic.twitter.com/Gg8TCEI0vQ
— Fahim Saleh (@fahims) November 4, 2019
Posted ৯:২০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta