কক্সবাংলা ডটকম(১৯ নভেম্বর) :: টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে। তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী ছিল প্রশাসন।
বিশেষ করে সিভিল প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার একটি সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রশাসনের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা করে সরকার প্রশাসনের আস্থাভাজন হয়েছিল।
তৃতীয় মেয়াদে এসে আওয়ামী লীগ সরকার অনেকটা প্রশাসন নির্ভর হয়ে পড়ে এবং সেখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের চেয়ে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব এবং গুরুত্ব বেড়ে যায়।
কিন্তু নানা কারণে এখন প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
আর দূরত্ব সৃষ্টির কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
১. পদোন্নতিতে বৈষম্য: প্রশাসনের ব্যাপারে সরকার যে সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রদান করেছে সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো একটি মুষ্টিমেয় সিণ্ডিকেট পাচ্ছে বলে জানা গেছে। যোগ্যতা এবং ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে পদোন্নতি হচ্ছে না, এমন অভিযোগ প্রশাসনের অন্দরমহলে কান পাতলেই শোনা যায়। বিশেষ করে যারা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আস্থাভাজন তারাই সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোটারি স্বার্থ অনুসরণ করা হচ্ছে। সরকার শুরুতে যেরকম যোগ্যতা এবং জ্যেষ্ঠতার নিরিখে পদন্নোতি কার্যক্রম গুলো পরিচালনা করতেন তা এখন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হয়েছে। ৯ম ব্যাচের, ১০ম ব্যাচের অনেক মেধাবী কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে ১১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের করা শুরু হয়েছে এটি প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিতদের সঙ্গে সরকারের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
২. প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতের নীরব মেরুকরণ: প্রশাসনে বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতের এক নীরব মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন সংকটে তাদের আসল রূপ প্রকাশ করছে। তাছাড়াও উচ্চতার প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছে এবং এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যে সিদ্ধান্তগুলো সরকারের জন্য ক্ষতিকারক। এরকম বেশকিছু সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারকদের নজরে এসেছে, যার ফলে আগে যেরকম প্রশাসনের উপর সরকার নির্ভর করত সে নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে।
৩. মন্ত্রী-আমলাদের দূরত্ব: প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের দূরত্বের একটা বড় কারণ তৈরি হয়েছে মন্ত্রী-আমলাদের দূরত্ব। প্রায় অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মন্ত্রীদের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এই সমস্ত বিরোধ গুলোতে আগে যেমন আমলাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হতো, এখন আর সে অবস্থা নেই। বরং রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের মধ্যে এক ধরনের দ্বৈরথ এখন দৃশ্যমান।
৪. মাঠ প্রশাসনের জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমস্যা: মাঠ প্রশাসনেও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমস্যা তৈরি হয়েছে প্রশাসনের। আর এটির আঁচড় গিয়ে লেগেছে সরকারের উপর। যার ফলে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রবণতা এবং জনপ্রতিনিধিদেরকে পাত্তা না দেওয়া ইত্যাদি ইস্যুগুলো ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এখন জনপ্রতিনিধিরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
৫. দুর্নীতি এবং জবাবদিহিতা: প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের দূরত্বের একটি বড় কারণ হলো দুর্নীতি এবং জবাবদিহিতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন যে, প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত থাকতে। কিন্তু এরপরও প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চেয়েছেন কিন্তু সেই হিসেবও এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
আর এসব নিয়েই সরকারের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
Posted ১০:৩৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta