এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১৬ মার্চ) :: কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনের মাধ্যমে অবশেষে কারামুক্ত হয়েছেন ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুন ব্যবসায়ী শেখ এইচ এম আহসান উল্লাহ। দীর্ঘ একমাস কারাভোগের পর আহনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি জামিনে এসে আবারও ফিরেছেন ফাইতং অঞ্চলের গণমানুষের মাঝে। শুরু করেছেন মানুষের কল্যানে আগের মতো সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতার কর্মযজ্ঞ।
নিছক একটি ঘটনার জেরে কারাগারে যাওয়া ও তিল তিল করে গড়ে তোলা তাঁর রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুন্ন করার পেছনে বড় ধরণের চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন আহসান উল্লাহ। তাকে ফাঁসাতে চক্রান্তের মাধ্যম হিসেবে কতিপয় মহল ডির্ভোসপ্রাপ্ত এক নারীকে দাবার গুঁিট হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার চকরিয়া সিটি সেন্টারস্থ অফিসে ঘটনার বিশদ বর্ণনা তুলে ধরেছেন তিনি।
ফাইতং ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের মহেশখালী পাড়া গ্রামের (ধইন্যাছড়ি) বাসিন্দা হাজি গোলাম চোবাহানের ছেলে শেখ এইচ এম আহসান উল্লাহ। জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন ছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু সেখানে অর্থ ও প্রাচুর্যের মাঝখানে থাকলেও তিনি এলাকার গণমানুষের কল্যানে কাজ করতে ছিলেন সবসময় উদগ্রীব। পাশাপাশি ছিল পরিবারের টান। এ অবস্থায় প্রায় পাঁচবছর আগে সৌদি আরবের ব্যবসা অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে তিনি ফিরে আসেন গ্রামে। শুরু করেন এলাকার মানুষের জন্য কল্যানমুলক সব ধরণের কাজ।
ইতোমধ্যে ফাইতং ইউনিয়নে একাধিক মসজিদ মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন আহসান উল্লাহ। কিছু কিছু এলাকায় নিজের অর্থায়নে নতুন মসজিদ মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করে দিয়েছেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সম্পৃক্ত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে।
শুরুতেই গতি সঞ্চার ঘটে ফাইতং ইউনিয়ন ও ইউনিট আওয়ামীলীগ এবং সহযোগি সংগঠনের রাজনীতিতে। কারণ দলের প্রতিটি অনুষ্ঠানে আহসান উল্লাহ ভুমিকা রাখেন স্বেচ্ছাসেবকের। প্রয়োজনে দেন আর্থিক সহায়তা। আর এসব কারনে তিনি আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন বান্দরবানের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা বীর বাহাদুর এর। যার আর্শিবাদে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন আহসান উল্লাহ।
আওয়ামীলীগ নেতা আহসান উল্লাহ বলেন, সৎভাবে ইটভাট ও ওভারসীজ ব্যবসা করে সুন্দরভাবে জীবন যাপন এবং ফাইতং আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক গতিশীলতা ফেরাতে আর্থিক, মানষিকভাবে সহযোগিতা করতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি বড় ধরণের চক্রান্ত শুরু করে কতিপয় মহল। তাদের ধারণা, আমার উত্থান যে কোনভাবে প্রতিহত করতে না পারলে অদুর ভবিষ্যতে তাদের সম্ভাবনা বাঁধাগ্রস্থ হবে। সেইজন্য ওই মহলটি আমাকে ফাঁসানের জন্য পরিকল্পিতভাবে দাবার গুঁিট হিসেবে ব্যবহার করে আমার ভাইয়ের ডির্ভোসী স্ত্রী সেফায়েতুন নেছাকে। তাকে দিয়ে ইয়াবার নাটক তৈরী করে পুলিশে খবর দেয় ওই মহলটি। পরে চকরিয়া থানা পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।
আহসান উল্লাহ বলেন, আমার বড়ভাই আহমদ উল্লাহ’র সাথে প্রেমের সম্পর্কের সুত্রধরে ২০১৪ সালের ২৪ জুন নোটারীমুলে বিয়ে হয় মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের বলিরপাড়া গ্রামের আলী আহমদের মেয়ে শেফায়েতুন নেছা’র। প্রায় আটমাস সংসার হলেও দুইজনের মধ্যে বণিবনা না হওয়ায় ২০১৫ সালের ১১ মার্চ নোটারীমুলে উভয়পক্ষের স্বজন ও স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ের বাকি মোহরানা, খোরপোষসহ সকল দাবি বুঝে নিয়ে তালাকনামার মাধ্যমে বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটনো হয়।
দীর্ঘদিন বাগের বাড়িতে থাকার পর শেফায়েতুন নেছা নিজের ভুল বুঝতে পেরে ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ আবারও নোটারীমুলে আমার ভাই আহমদ উল্লাহকে বিয়ে করেন। এরপর তাদের সংসারে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। দ্বিতীয় বিয়ের পর সংসার জীবন ভালভাবে অতিবাহিত হলেও ফের বেপরোয়া চলাচল শুরু করে শেফায়েতুন নেছা। তাকে আমার পরিবার ও আমার মা বারবার অনুরোধ করেন ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে। কিন্তু শেফায়েতুন নেছা কারো কথা শুনেনা। এ অবস্থায় অনেকটা অতিষ্ট হয়ে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে শেফায়েতুন নেছা’র পরিবারকে খবর দেয়া হয়। উভয়পক্ষের সিদ্বান্তের আলোকে তার ভগ্নিপতির মাধ্যমে শেফায়েতুন নেছাকে বাপের বাড়িতে সম্মানের সাথে পৌঁছে দেয়া হয়।
আহসান উল্লাহ বলেন, বাপের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কিছুদিন পর শেফায়েতুন নেছা বাদি হয়ে নানা ধরণের অভিযোগ তুলে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও’র নির্দেশে হারবাং পুলিশ ফাঁিড়র তৎকালীন এসআই আতিক উল্লাহ সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে নোটারীমুলে বিয়ে এবং মোহরানা, খোরপোষসহ সকল দাবি বুঝে নিয়ে বিয়ের বিচ্ছেদ হওয়ার বিষয়টি ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এরই মধ্যে শেফায়েতুন নেছা বাদি হয়ে ২০১৭ সালে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারা মতে একটি সিআর মামলা (৩৪৩) দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় স্বামী আহমদ উল্লাহকে। ওই মামলায় আদালত যাবতীয় তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বাদির আনীত অভিযোগ প্রমাণিত করতে না পারায় ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর মামলাটি খারিজ করে দেন।
আওয়ামীলীগ নেতা আহসান উল্লাহ অভিযোগ করেছেন, আইনী প্রক্রিয়ায় আমার ভাইয়ের সাথে তাঁর স্ত্রী শেফায়েতুন নেছার ডির্ভোস কার্যকর হলেও ফাইতং ইউনিয়নের কতিপয় মহল তাকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে আমার পরিবার ও আমার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ তাঁরা ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে দিয়ে ইয়াবা নাটক তৈরী করে আমাকে ফাঁসাতে পুলিশে খবর দেয়। ওইদিন বিকালে চকরিয়া থানা পুলিশ আমাকে ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করে। পরদিন আমাকে তিনশত পিস্ ইয়াবা উদ্ধার সংক্রান্ত মামলার আসামি হিসেবে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত আমাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
আহসান উল্লাহ দাবি করেন, আমাকে গ্রেফতারে পুলিশের কোন ধরণের অযাচিত উদ্দেশ্য ছিলনা। মুলত ওই মহলটি ডির্ভোসি নারীর ভ্যানেটি ব্যাগে ইয়াবা দিয়ে আমার গাড়িতে তুলে দেয়। পরে পুলিশকে খবর দেয়।
তিনি বলেন, আইনী প্রক্রিয়ায় আমি গত ১২ মার্চ কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনের মাধ্যমে কারামুক্ত হই। কিন্তু এখনো আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কী অপরাধে আমাকে এতবড় ক্ষতির শিকার হতে হলো, কেন কতিপয় মহলটি আমাকে ফাঁসাতে এ ধরণের চক্রান্তের আশ্রয় নিলো। আমি এসব চক্রান্তের সুবিচার নিশ্চিত করতে প্রিয় ফাইতং ইউনিয়নের জনগনের কাছে তুলে দিলাম।
Posted ১১:৫৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta