মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশী টাকার ইতিহাস

শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৭
1330 ভিউ
বাংলাদেশী টাকার ইতিহাস

কক্সবাংলা ডটকম(২৮ অক্টোবর) :: অর্থই অনর্থের মূল। তারপরও এই অর্থই সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। অর্থের প্রত্যক্ষ রূপ হলো টাকা বা নোট। সে প্রাচীনকাল থেকে মানুষ টাকা বা লেনদেনের মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে এবং বিভিন্ন উপায়ে এর ব্যবহার শুরু করে। কখনো বা গাছের পাতা দিয়ে, আবার কখনো বা তামার তৈরি ধাতব খন্ড দিয়ে লেনদেন করেছে। ধীরে ধীরে সভ্যতা আর দক্ষতার উন্নয়নে আজ কারখানায় তৈরি কাগজ খন্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এর নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও কাজ কিন্তু একই। বাংলাদেশে টাকা, ভারতে রুপি, ইউরোপে ইউরো ইত্যাদি নামে প্রচলিত।

‘টাকা’ শব্দের উৎপত্তি

ভাষাবিদগণের মতে, সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভুত ‘টাকা’ শব্দটি। সংস্কৃত শব্দ ‘টঙ্ক’, যার অর্থ রৌপ্যমুদ্রা, থেকে এসেছে টাকা। আগে যেকোনো ধরনের মুদ্রা বা ধাতব মুদ্রা বুঝাতে টাকা শব্দটির প্রচলন ছিল। অর্থাৎ টাকা দ্বারা সবসময়ই অর্থকে বোঝানো হয়েছে। বাংলায় এর প্রচলন শুরু চতুর্দশ শতকে। বাংলা ভাষার একটি অংশ হিসেবে বাঙালিরা সব ধরনের কারেন্সি বা নোট বা মূলধন বোঝাতে ‘টাকা’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় ভারতীয় রূপিকেও প্রশাসনিকভাবে টাকাই বলা হয়।

১ টাকার নোট; source: deshinewsbd.com

বাংলাদেশে টাকার ইতিহাস

বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালে হলেও শুরুটা ছিল ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। তখন দেশে পাকিস্তান রূপির প্রচলন ছিল, যেটিকে কাগজে-কলমে টাকাও বলা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা বেসরকারিভাবে পাকিস্তানি টাকার একপাশে ‘বাংলা দেশ’ এবং অপর পাশে ‘Bangla Desh’ লেখা রাবার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতেন। ১৯৭১ সালের ৮ জুন পাকিস্তান সরকার এই রবার স্ট্যাম্প যুক্ত টাকাকে অবৈধ এবং মূল্যহীন ঘোষণা করে। জানা যায় এরপরেও ১৯৭৩ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত এই রাবার-স্ট্যাম্পযুক্ত পাকিস্তানি টাকা চলেছিল সারা দেশে।

১৯৭২ সালে ছাপানো ১০০ টাকার নোট; source: Prothom Alo

এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ১৯৭১ সালে এবং নতুন মুদ্রা প্রচলনের ঘোষণা দেয়া হয়। তাতে সময় লেগেছিল তিন মাসের মতো। তাই ঐ সময়ে পাকিস্তানি রুপিই ব্যবহৃত হতো। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশি কারেন্সিকে ‘টাকা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।

নিজস্ব কাগুজে মুদ্রার আবির্ভাব

১৯৭২ সালে প্রথম কোষাগার মুদ্রা বের করা হয় ১ টাকার নোট। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এ নোটের চল ছিল।

বাংলাদেশের প্রথম নোট; source: prothom alo

১৯৮২ সালে ছাপানো ১ টাকার নোট; source: beshto.com

১৯৭২ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংক আরো তিনটি নোট চালু করে- ৫ টাকা, ১০ টাকা এবং ১০০ টাকার। ৫ টাকার নোটটি প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা হলেও বর্তমানে তা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যু করা হয়।

১৯৭২ সালে ছাপানো ৫ টাকার নোট; source: Prothom Alo

১৯৭৫ সালে ৫০ টাকার ব্যাংক নোট বাজারে আসে। ১৯৭৭ সালে ৫০ টাকার ব্যাংক নোট এবং ১৯৮০ সালে ২০ টাকার ব্যাংক নোটের সাথে পরিচিত হয় দেশবাসী।

২ টাকার নোটটি পরিচিতি পায় ১৯৮৯ সালে। ২০১২ সালে রাশিয়ার একটি অনলাইন এন্টারটেইনমেন্ট আউটলেটে পোলের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নোট হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২ টাকার এই নোটটি।

২ টাকার নোট; source: mycollecionavik

২০০০ সালে সরকার কর্তৃক অস্ট্রেলিয়ান ডলারের আদলে ১০ টাকার পলিমার নোট বের করা হয়। কিন্তু এ নোট জনপ্রিয়তা লাভে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়।

১০ টাকার পলিমার নোট; source: banknoteindex.com

২০০৮ সালে সরকার কর্তৃক চালু হয় ১,০০০ টাকার নোট।

২০১১ সালে ছাপানো ১০০০ টাকার নোট; source: mediabd

টাকায় জাতির জনকের প্রতিকৃতি

২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পরপর কয়েকটি ব্যাংক নোট ইস্যু করে যার ভেতরে ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা এবং ১,০০০ টাকার নোট ছিল। এই নোটগুলোতে সামনে বামপাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখমন্ডলের প্রতিকৃতি এবং ডানপাশে ঐ প্রতিকৃতির জলছাপ এবং মাঝখানে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতির জলছাপ যুক্ত করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত ৫ টাকার নোট; Source: Pinterest

এরপর ২০১২ সালের ৭ মার্চ ১০ টাকা, ২০ টাকা এবং ৫০ টাকার ব্যাংক নোটেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং জলছাপ ও মাঝখানে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতির জলছাপ যুক্ত করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত ১০ টাকার নোট; source: pinterest

২০১২ সালে ইস্যুকৃত টাকায় আরো বিশেষত্ব আনতে ১০ টাকার নোটের পেছনে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ছবি, ২০ টাকার নোটের পেছনে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের ছবি এবং ৫০ টাকার নোটের পেছনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা বিখ্যাত পেইন্টিং ‘মই দেয়া’ যুক্ত করা হয়।

নতুন ২০ টাকার নোট; source: lelong.com

স্মারক নোট

পরিচিত এবং ব্যবহৃত এসব নোটের বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন সময় কিছু নোট ইস্যু করা হয় স্মারক হিসেবে।

ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মারক ৬০ টাকা নোট; source: Prothom-alo

২০১১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৪০ টাকার স্মারক  নোট বের করে। এই নোটের সামনের পিঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি এবং পেছনের পিঠে ছ’জন সেনানায়কের ছবি যুক্ত করা রয়েছে। আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এতে ইলেক্ট্রোটাইপ ১০ এর জলছাপ রয়েছে যার অর্থ- ১০টাকার অতিরিক্ত নোটগুলোর কাগজ দিয়ে এটি বানানো হয়েছে। গাঢ় লাল রঙ, কমলা রঙ এবং সবুজ রঙের সমাহারে বানানো এ নোট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যথাক্রমে ১২২ মি.মি. ও ৬০ মি.মি.।

৪০ টাকার স্মারক নোট; source: robertsworldmoney.com

২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারিতে ‘ দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড’ এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৫ টাকার স্মারক নোট বের করে। নীল, বেগুনী এবং লালের সমাহারে তৈরি এ নোটের সামনের দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি, বাংলাদেশের পূর্ববর্তী টাকার ডিজাইন এবং ব্যবহৃত স্ট্যাম্পস, তিনটি হরিণ এবং একটি দোয়েল পাখি। এর অপর পৃষ্ঠে রয়েছে সিকিউরিটি প্রিন্টিং অফিসের হেডকোয়ার্টারের ছবি। আর এই নোটে ছিল ইলেক্ট্রোটাইপ ১০ এর জলছাপ, অর্থাৎ ১০ টাকা ব্যাংক নোটের অতিরিক্ত কাগজে এটি মুদ্রিত। দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে এটি যথাক্রমে ১২৩ মি.মি. এবং ৬০ মি.মি.।

২৫ টাকার স্মারক নোট; source: rankcurrencey.com

আবার ৮ জুলাই, ২০১৩-তে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে লাল এবং নীল রঙের সমাহারে স্মারক ১০০ টাকার নোট বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৪০ মি.মি. দৈর্ঘ্য এবং ৬২ মি.মি. প্রস্থের এ নোটের সামনে অষ্টাদশ শতকের অশ্বারোহীর টেরাকোটা ফলক এবং পেছনে জাতীয় জাদুঘরের প্রতিকৃতি মুদ্রিত রয়েছে।

স্মারক ১০০টাকার নোট; source: mediabd.net

সরকারি নোট এবং ব্যাংক নোটের পার্থক্য

১০ টাকার চেয়ে কম মূল্যের টাকাগুলো সরকার কর্তৃক ইস্যু করা হয় এবং এতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থসচিবের স্বাক্ষর থাকে। এগুলো হলো সরকারি নোট। যেমন- ২ টাকা, ৫ টাকা ইত্যাদি।

অপরদিকে ১০ টাকা এবং এর চেয়ে অধিক মূল্যের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু হয় এবং এগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। এগুলো হলো ব্যাংক নোট। যেমন- ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা ইত্যাদি।

৫০ টাকার নোটের সাথে জড়ানো একটি ছোট গল্প

৭ মার্চ, ২০১২-তে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত যে নতুন ৫০ টাকার নোটটি বাজারে আনা হয়, সেইদিনই আবার বাজার থেকে তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি ছিল একটি বানান ভুলের মাশুল। নোটটির পিছনের পিঠে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নামের বানান ভুল ছাপা হয়েছিল (আবেদিন স্থলে আবেদীন)। ২.২৫ কোটি সংখ্যক নোট ছাপা হয়েছিল এই ভুল নিয়ে। পরবর্তীতে বাজার থেকে তুলে নিয়ে সংশোধনীর মাধ্যমে পুনরায় বাজারে আসে এই নোট।

ভুল ছাপানো ৫০ টাকার নোট; source: eurokolikot

পূর্বে ছিল- ‘মই দেয়া’ জলরং চিত্র, শিল্পী জয়নুল আবেদীন।

সংশোধিত ৫০টাকার নোট; source: flickriver

সংশোধনী- ‘মই দেয়া’ জলরং, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন।

1330 ভিউ

Posted ১২:৫৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com