বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখীতে আশংকাজনকভাবে বাড়ছে মেধা পাচার

বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৯
214 ভিউ
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখীতে আশংকাজনকভাবে বাড়ছে মেধা পাচার

কক্সবাংলা ডটকম(১৫ অক্টোবর) :: বিদেশে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত ১২ বছরে বেড়ে হয়েছে প্রায় চার গুণ। ইউনেস্কোর ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকসের (ইউআইএস) তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী।

২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ হাজারে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের মতো প্রতিষ্ঠান যেখানে অদূর ভবিষ্যতে বৈশ্বিকভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার সম্ভাবনা দেখছে, সেখানে বাংলাদেশসহ কিছু দেশ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর এ প্রবাহ আগামী বছরগুলোয় আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এ বিদেশমুখিতার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীর প্রাচুর্য, দেশে উচ্চশিক্ষার অপ্রতুল সুযোগ এবং একই সঙ্গে দেশের বাইরে পড়ার খরচ জোগাতে সক্ষম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উন্মেষ। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ শ্রেণীর বিকাশ লক্ষ করার মতো। দ্য বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের অনুমান, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষ বছরে ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে। ফলে এ শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা ২০২৫ সাল নাগাদ ৩ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছবে, ২০১৫ সালে যেখানে সংখ্যাটি ছিল ১ কোটি ২০ লাখ।

নিম্ন জীবনমান, দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তাও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী করছে। বিদেশে পড়তে যাওয়া এসব তরুণের অধিকাংশই ধনী পরিবারের। আর তাদের পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি, যাদের অনেকেই পাঠ শেষে আর দেশে ফেরেন না।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ আয় করছেন। এ আয় তাদের সন্তানদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে বহির্গমনে উৎসাহিত করছে। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত আয়ে তারা সন্তানদের বিদেশে পড়াচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অনেকে কালো টাকা পাচার করার জন্যও সন্তানদের বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ অভিভাবকরা দেশ থেকে টাকা পাচার করে সন্তানদের বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করছেন। পাশাপাশি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। গত দুই দশকে দেশে অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সত্য, কিন্তু মানসম্মত প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। এ কারণেও অনেকে বিদেশমুখী হচ্ছেন। তবে বিদেশী ডিগ্রি মানেই যে ভালো, এমন নয়। উচ্চশিক্ষার নামে নামসর্বস্ব কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে এলে কোনো উপকার হবে না, বরং ডিগ্রির পাশাপাশি উদ্ভাবনী জ্ঞান আহরণকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

এ শতকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ডিগ্রিপ্রত্যাশী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও প্রতিবেশী ভারত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মালয়েশিয়াও তাদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে ডিগ্রি নিতে যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশের বর্তমান গন্তব্য মালয়েশিয়া। সাত বছরের ব্যবধানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৫০০ শতাংশ। ২০১০ সালে যেখানে মালয়েশিয়াগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭২২, ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৪৫৬ জনে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ এর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও বহুসংস্কৃতির সহাবস্থান। তাছাড়া দেশটিতে শিক্ষা ব্যয়ও তুলনামূলক কম। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেখানে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ পান। এখানে পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি এবং একই সঙ্গে এখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। রয়েছে বাংলাদেশী কমিউনিটি ও প্রবাসী শ্রমিকও।

তবে দুর্ভাগ্যবশত মালয়েশিয়ায় পড়তে যেতে আগ্রহী অনেক শিক্ষার্থীই প্রতারণা ও পাচারের শিকার হন। পাশাপাশি তারা প্রতারক এজেন্সির খপ্পরে পড়েন। ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, কয়েক হাজার বাংলাদেশী মালয়েশিয়ার ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হন। পরে তারা সেখানে অবৈধ শ্রমিক হিসেবে অবস্থান করেন।

এদিকে সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশীদের অবস্থান শীর্ষ ২৫-এ। ২০১৭ সালে দেশটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন ৬ হাজার ৪৯২ শিক্ষার্থী। এছাড়া ওই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৮ হাজার ৯৮৬, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ১১৬ ও কানাডায় ২ হাজার ২৮ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে পড়তে যান।

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় কতসংখ্যক বিদেশী শিক্ষার্থী পড়ছেন বা কতসংখ্যক মার্কিন শিক্ষার্থী অন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছেন, তার হালনাগাদ তথ্য দেয় ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের ওপেন ডোরস ডাটা।

ওপেন ডোরসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বস্তরের বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ছিলেন ৭ হাজার ৪৯৬ জন, যা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের চেয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। আর ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে অংশ নেয় ৬২ ও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ২৪ শতাংশ।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক বলেন, দেশে উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ শ্রেণীর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের দেশে পড়াশোনা করাতে চাইছেন না। ফলে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের একটি বড় অংশ পড়াশোনার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিদেশযাত্রায় দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, এমনটা বলা যাবে না। কারণ এ শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র অংশই ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসছে। এটি একধরনের মেধা পাচার। দেশে ভালো কর্মসংস্থান নেই। আবার শিক্ষার্থীরা দেশে ফেরত আসার তাগিদও অনুভব করছেন না।

214 ভিউ

Posted ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com