কক্সবাংলা ডটকম(২১ জানুয়ারী) :: ২১ জানুয়ারি ভারত সরকার বাংলাদেশকে ভারতে উৎপাদিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে প্রদান করেছে। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী এই ভ্যাকসিনগুলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে হস্তান্তর করেন। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে ভ্যাকসিনগুলি যথাযথ নিয়মানুসারে বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার পরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনার ধারাবাহিকতায় ভারতে ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হওয়ার (১৬ জানুয়ারি ২০২১ শুরু হয়েছিল) এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী প্রথমে নীতির অংশ হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতি ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। তিনি আরও বলেন যে, কোভিশিল্ডের ২০ লাখ ডোজ উপহার আসলে ভারতের দ্বারা প্রতিবেশী কোনও দেশকে দেয়া সবচেয়ে বড় পরিমাণ। কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন) চালানটি ভারতের পুনেতে অবস্থিত সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করেছে এবং উপহার দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার তার নিজস্ব কোটা থেকে কিনেছে।
হাই কমিশনার বলেন, ২১ জানুয়ারি একটি যুগান্তকারী দিন – বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে এই ভ্যাকসিনগুলি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদার হিসেবে ভারত এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অবদান রাখতে পেরে আনন্দিত। একসাথে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দুই দেশ কর্তৃক ইতোমধ্যে নেওয়া অনেক পদক্ষেপের মধ্যে ভ্যাকসিন উপহার সর্বশেষ উদ্যোগ। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহবানে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সার্ক নেতাদের একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছিলো। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সম্মিলিত ক্ষমতা, দক্ষতা এবং সংস্থান ব্যবহারের মাধ্যমে সহযোগিতার আহবান জানান। এর পরপরই সার্ক কোভিড-১৯ জরুরি তহবিল গঠিত হয়।
বাংলাদেশ থেকে আগত স্বাস্থ্যসেবাদানকারী, প্রশাসক ইত্যাদি পেশাজীবীরা ভারতের শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল ইনস্টিটিউট, যেমন- অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স (এআইএমএস) দ্বারা পরিচালিত অনলাইন সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণগুলিতে অংশ নেয়। হাই কমিশনার বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের জন্য এআইএমএস, ভুবনেশ্বরে বাংলা ভাষায় আয়োজিত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কোর্সটি ছিল এক দুর্দান্ত সাফল্য। ভ্যাকসিন সরবরাহকে সহজতর করার জন্য ১৯-২০ জানুয়ারি ভারত সরকার ‘ট্রেইন দ্য ট্রেনার’ নামক একটি ২ দিনব্যাপী অনলাইন কোর্সও পরিচালনা করেছে।
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের এই ২০ লাখ ডোজ উপহার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে হস্তান্তর করার পর হাই কমিশনার আশা প্রকাশ করেন যে, দু’দেশের এই ধরনের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মহামারীকে পরাজিত করা হবে এবং আমাদের জনগণের সুবিধার্থে অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, এই উপহার বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করবে। ভবিষ্যতে দুই দেশ একসঙ্গে পথচলা সুগম হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের মধ্যে করোনা সংক্রমিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ২০তম অবস্থানে। এখন করোনার টিকা আমদানিতে আমরা ভারতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী টিকা আমদানি করব।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছিল। আজ মহামারির সময় তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনার টিকা উপহার দিয়ে ভারত আবার বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বন্ধুত্ব এবং ভারতের জনগণ ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল।
তিনি বলেন, চলতি মাসে আরও ৫০ লাখ ভ্যাকসিন ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে। তখন মোট ৭০ লাখ ভ্যাকসিন আমাদের হাতে থাকবে। তখন ৩৫ লাখ মানুষকে একসঙ্গে ভ্যাকসিন দিতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১২ দিকে আজিমপুরে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যেমন সফল হয়েছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগেও তেমনি সফল হবে। করোনা টিকা নিয়ে গুজবে কান না দিতেও আহ্বান জানান তিনি।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, পরিবার পরিকল্যাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজ সাহান আরা বানু, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এন এনায়েত হোসেন, এইচইডি প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান সারোয়ার প্রমুখ।
Posted ৪:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta