সরকার এবং বিরোধী দল উভয়েই বলছে ডিসেম্বর মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এই ডিসেম্বরে মাসকে সতর্ক থাকতে হবে, আওয়ামী লীগ বলছে শুধু ডিসেম্বর নয় মার্চ মাস পর্যন্ত নানারকম ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে সরকারকে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিক নেতা বলছেন যে, সরকার নাজুক অবস্থায় চলে গেছে। এ অবস্থায় ডিসেম্বরে কিছু একটা গঠবে। কি গঠবে? সে সম্পর্কে বিএনপির নেতারা কোন কিছু বলেনি। ডিসেম্বর মাসকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে। জনগনের মধ্যেও এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
আর এর সবকিছুই সূত্রপাত হয়েছে গত ১২ নভেম্বর থেকে। ওই দিন, দিনে দুপুরে রাজধানীর ৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১১ টি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। বাসে আগুন দেয়ার পরপরই সরকার তৎপর হয়েছে। একাধিক মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই বিএনপি বিভিন্ন স্তরের নেতা, আরো কয়েকজন গ্রেপ্তারের অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ভাবে এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন। তারা যে সন্ত্রাসের রাজনীতি পথে আবার হাটছে সেটি আবার উল্লেখ করেছেন। এই সমস্ত উত্তাপ-উত্তেজনা এবং টানাপড়েনের মধ্যে আলোচনায় আসছে ডিসেম্বর মাস। ডিসেম্বর মাসে কি ঘটতে পারে তা নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডিসেম্বর মাসে অনেকগুলো ঘটনাই ঘটতে পারে। এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, আমাদের স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা রকম পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে সরকারকে। ডিসেম্বর মাসে যে ঘটনাগুলো ঘটতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন তার মধ্যে রয়েছে:-
১। সন্ত্রাস-সহিংসতা:
১২ নভেম্বর বাসে আগুনের ঘটনাটি ছিল একটি টেস্ট কেস, একটি ছোট্ট ঘটনা। ডিসেম্বর মাসে বড় ধরনের সন্ত্রাস এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারও এই আশংকা উড়িয়ে দিচ্ছে না। তারা মনে করছে যে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি দেখার জন্য এরকম একটি চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্তের মূল লক্ষ্য হলো সারা দেশে একটি বড় ধরনের অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করা।
২। গুম-খুন এবং বড় ধরনের নাশকতা:
যেহেতু সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আবার সংগঠিত হচ্ছে। সেহেতু আবার নতুন করে দেশে গুম খুন এবং বড় ধরনের নাশকতা, বড় ধরনের স্থাপনায় আক্রমণ ইত্যাদির ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেটার জন্য টার্গেট করা হয়েছে ডিসেম্বর মাস। জামাত শিবিরের কাছে ডিসেম্বর মাসটা অত্যন্ত বেদনাবহ মাস। কারণ এ মাসে তারা পরাজিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছে, মুক্তিযুদ্ধের কাছে। বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করেছিল । আর তাই ডিসেম্বর মাস এলেই বিএনপি-জামাত জোট নানা ষড়যন্ত্র করে এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য সচেষ্ট হয়। এই কারনেই এবার ডিসেম্বরও ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৩। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারঃ
নভেম্বর মাস জুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপিপন্থী কিছু অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা কুৎসা এবং মিথ্যাচার করছে, নানা রকম অপপ্রচার করছে। এ ধরনের অপপ্রচার গুলো ডিসেম্বর মাসে আরো বাড়তে পারে। সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানারকম বিষদগার করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে। এখন যেটি শুরু হয়েছে সেটি ডিসেম্বর মাসে আরো ব্যাপক বিস্তৃত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
৪। করোনা পরিস্থিতি:
ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে জাকিয়ে শীত বসলেই করোনা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই আশঙ্কা থেকেই সরকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ডিসেম্বর মাস অনেকেই মনে করছে যে, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার দুটোই বেড়ে যেতে পারে। আর এটি যদি বেড়ে যায় তাহলে সরকারকে এদিকেই নজর দিতে হবে।
৫। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি:
করোনা সংক্রমণ বাড়ুলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে। একদিকে বিদেশে রপ্তানি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের যে অভ্যন্তরীণ বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দাম আরো বাড়তে পারে। সবকিছু মিলে একটা অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে । আর এই সব কিছুকেই একত্রিত করে একটি মহল সরকার পতনের জন্য অন্য পথ বেছে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছে যে, এ ধরনের ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবসময় হয়েছে। আর এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে যেতে হবে।