দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে হতাহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে আজ ঢাকায় বিক্ষোভ করছে বিএনপি। আর এ থেকেই সামনে আসছে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়টি। আসলে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের পেছনে যে বিএনপি-জামায়াতের হাত রয়েছে সেটা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে এখন। ধীরে ধীরে তাদের ভোল পাল্টাচ্ছে বিএনপি।
আল্লামা আহমেদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণ করে জুনায়েদ বাবুনগরী। বাবুনগরী এবং মামুনুলের রাজনৈতিক উচ্চ অভিলাষের কারণে তারা কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি সহ কওমি মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার যে কাজগুলো করেছে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যে উদারতা দেখিয়েছেন তা ভুলতে শুরু করে। তারা ধীরে ধীরে সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের বিপক্ষে তাদের অবস্থান এবং তাদের বিরোধীতার ফলে আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো যে হেফাজতে ইসলামের ওপর অন্য কোনো কিছু ভড় করেছে। এর ফলে তারা সরকারের বিরোধীতায় মশগুল। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে তারা যে ধরনের সহিংস বিক্ষোভ শুরু করে তা থেকে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যে তাদের ওপরে বিএনপি-জামায়াতের ভূত ভড় করেছে। আর এ জন্যই এরকম সহিংসতা করে জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মামুনুলরা রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসতে চাচ্ছেন। আর এ বিষয়ে হেফাজতেকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি হেফাজতের সঙ্গে গোপনে একটি জোট গঠন করেছে। সেখানে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিএনপি-জামায়াত আর লোক দিয়ে সহায়তা করছে হেফাজতের মতো সংগঠনগুলো। এতদিন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়ার নেতৃত্বে আড়ালে থেকে বিএনপি হেফাজতকে সমর্থন দিয়ে গেলেও এখন আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে তারা। বিএনপি হেফাজতের আন্দোলনের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পায়তারায় নেমেছে।
বিএনপি হেফাজতের আন্দোলনে প্রথমে সামনে থেকে সমর্থন না দিলেও পেছনে থেকে ঠিকই পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছিলো। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর ফাঁস হাওয়া অডিও থেকেই সেটি স্পষ্টতই প্রমাণিত। আর এখন প্রকাশ্যেই হেফাজতে সমর্থনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানান দিচ্ছে। তারা যে সব সময় মৌলবাদী গোষ্ঠিকে সমর্থন দিয়ে গেছে এবং বর্তমানেও দিচ্ছে সেটি তাদের এই বিক্ষোভ থেকে স্পষ্ট হয়।
হেফাজতকে এখনই কঠোরভাবে দমন করতে হবে: ১৪ দল
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে হেফাজতে ইসলামী চ্যালেঞ্জ করেছে এবং এই আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত বলে অভিযোগ করেছেন ১৪ দলের নেতারা। তাদের বিষয়ে যতই কৌশল অবলম্বন করা হোক, সনদ দেওয়া হোক আর যেভাবেই খুশি করার চেষ্টা করা হোক তারা তাদের রাজনৈতিক দর্শন থেকে সরে আসবে না। দমন করতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সর্ব শক্তি নিয়ে নামতে হবে। আইনি ব্যবস্থা নিয়ে এদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সোমবার (২৯ মার্চ) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় নেতারা একথা বলেন। ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের মধ্যে পুনর্গঠন ও পুনঃর্নিমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আগামী দিনে দেশ কীভাবে চলবে সেই নির্দেশনাও তিনি দিয়েছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফর নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে আমু বলেন, মোদীর বিষয়টি তারা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। এর আড়ালে তারা অপ্রকাশ্যে দিবসগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। দেশের উন্নয়নের সামনে বিকল্প কিছু না পেয়ে তারা ধর্মান্ধ স্লোগান দিচ্ছে। তবে এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা মনে করি না। তারা সুযোগ পেলেই সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নেয়। এই সাম্প্রদায়িকতার স্লোগান পাকিস্তান থেকেই চলে আসছে।
‘বারবার সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিয়ে দেশের ওপর আঘাত করতে চায়। হেফাজতই হোক বা তাদের আড়ালে জামায়াত-শিবির পাকিস্তানি শক্তি হোক। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার পরও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্ন এখানে এসেছে। এগুলোর বিষয় কর্ণপাত করতে সরকারকে অনুরোধ করছি। এদের ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। ’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, হেফাজতের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াতের লোক। মামুনুল হকের বাবা কে ছিলেন? তাদের অন্যরা কারা? আপস করে কখনো লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। রাজনীতিতে আজ যেটা শুরু হয়েছে তা অশনিসংকেত। আমাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে নামতে হবে। যতই খুশি করার চেষ্টা করি তারা কিন্তু তাদের রাজনৈতিক দর্শন থেকে সরবে না।
আরো বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, গণআযাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসকে সিদকার, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন সহ আরো অনেকেই।