বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশে নিখোঁজদের কেন সন্ধান মেলে না ?

শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০১৭
411 ভিউ
বাংলাদেশে নিখোঁজদের কেন সন্ধান মেলে না ?

কক্সবাংলা ডটকম(৯ নভেম্বর) :: বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পরেও তাঁর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি এখনো।

মি. হাসানের এই নিখোঁজের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশে নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।

একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে এই বছরে প্রথম নয় মাসে ৫০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাদের পরিবার পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ বের করতে পারে না?

২০১১ সালের নভেম্বর মাসে এক সকালে সন্তানকে স্কুলে ছেড়ে আসার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কে এম শামীম আখতার।

বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূরে যেতেই কয়েকজন তাকে নিয়ে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। আজ ছয় বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু মি. আখতার আর বাড়ী ফেরেন নি।

মি. আখতারের স্ত্রী ঝরনা খানম বলছিলেন ঘটনার পর পরেই তিনি থানায় যান জিডি করতে। কিন্তু মিসেস খানম যে স্বামী নিখোঁজের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেভাবে পুলিশ জিডি করতে চায়নি।

পরে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তাকে জিডি করতে হয়। কিন্তু ঘটনার সাড়ে ছয় বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি তার স্বামীর কোন খোঁজ পাননি।

ঝরনা খানম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবখানে অভিযোগ নিয়ে গেছেন। যদিও তার দাবি মি. আখতারের একটা রাজনৈতিক পরিচয় ছিল সে কারণে হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মি. আখতারকে তুলে নিয়ে গেছে।

বাংলাদেশে নিখোঁজ, অপহরণ,গুম এসবের ঘটনা নতুন না। দেশে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।

বাংলাদেশে একজন নাগরিক নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ করতে কতটা সক্ষম?

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি মো. নুরুল হুদা বলছেন ‘মিসিং পারসন স্কোয়াড’ নামে একটা উইং থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে। সেটার মাধ্যমে শত ভাগ না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৯০ জন গুম হয়েছেন।

আর দেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই নয় মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ জন।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণে তারা দেখেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার জিডি করতে গেলেও যথেষ্ট সহযোগিতা পান না।

নিখোঁজদের পরিবারের অনেকের অভিযোগ রয়েছে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের স্বজনদের নিয়ে যাওয়া হয়।

কিন্তু পরে দীর্ঘ সময়, এমন কী বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না।

সাবেক আইজিপি মি.হুদা বলছিলেন, “অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে সেগুলো বের করা যায় তবে বিষয়টা সত্যিই উদ্বেগজনক।”

এদিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো বলছে গত আড়াই মাসে বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ মোট নয়জন নিখোঁজ হয়েছেন।

৩ দিনের ব্যবধানে চারজন নিখোঁজ

 বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার নিখোঁজের দিনই রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে আরো দুই ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজ এ দুজন হলেন আসাদুজ্জামান ও তার ছোট ভাই ফয়সাল রহমান। দুজনই পেশায় প্রকৌশলী।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নিখোঁজ আসাদুজ্জামানের স্ত্রী তানজিনা সাইদ। এর দুদিন আগে গত রোববার শাজাহানপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী।

নিখোঁজ আসাদুজ্জামানের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাকে এবং তার ছোট ভাই ফয়সালকে অফিসে যাওয়ার সময় কিছু লোক তুলে নিয়ে যায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসাদুজ্জামানকে ছেড়ে দেয়া হলেও এখনো বাড়ি ফেরেননি তার ছোট ভাই ফয়সাল।

বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে নিখোঁজ আসাদুজ্জামানের স্ত্রী তানজিনা সাইদ জানান, তার স্বামী ও দেবর দুজনই পেশায় প্রকৌশলী। তারা একটি বেসরকারি টেলিকম প্রযুক্তি কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত। জিডি করার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতায় বুধবার রাতে তার স্বামী আসাদুজ্জামান বাড়ি ফিরে আসেন। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তার দেবর ফয়সাল।

আসাদুজ্জামান ও ফয়সাল রহমান নিখোঁজের দুদিন আগে, অর্থাত্ গত রোববার শাজাহানপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর শোনার পর গতকাল মৃত্যুবরণ করেছেন গিয়াস উদ্দিনের বাবা আব্দুল মজিদ সরকার।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিখোঁজ ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে উত্তর শাজাহানপুরের ৫৯৪ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বারে।

গিয়াস উদ্দিনের বড় ভাই নজরুল ইসলাম জানান, গত রোববার সকালে স্ত্রীর কাছে কাঁচাবাজার দিয়ে বাদামতলী ফলের আড়তে যান গিয়াস উদ্দিন। দুপুরে তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পান স্ত্রী সুমি বেগম। পরে সুমির কাছ থেকে বিষয়টি জেনে আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সন্ধান না পেয়ে অবশেষে রাতে শাজাহানপুর থানায় গিয়ে একটি জিডি করেন সুমি।

গিয়াস উদ্দিনের নিখোঁজের ঘটনায় দায়ের হওয়া জিডির তদন্ত করছেন শাজাহানপুর থানার এসআই সঞ্জিত কুমার সরকার। তিনি বলেন, আমরা ঘটনার পর পরই তদন্ত শুরু করেছি। তাকে খুঁজতে প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য উপায়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গিয়াস উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার দুদিনের মাথায় নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার। তিনি পরিবারের সঙ্গে খিলগাঁও এলাকায় থাকতেন। নিখোঁজের রাতেই সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করেন। পরে তিনি র্যাব-৩-এর সহযোগিতা চাইলে তারা সিজারের ব্যবহূত ল্যাপটপ ও কম্পিউটার জব্দ করে তদন্ত শুরু করেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা) তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। সিজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। একসময় সাংবাদিকতাও করেছেন। পরে যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন। তার পিএইচডির বিষয় ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামের প্রভাব।

এর আগে গত ২২ আগস্ট বনানী ফ্লাইওভারের নিচ থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত আহমেদ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি অপহরণের মামলা করলেও এখনো তার খোঁজ মেলেনি। পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন সাদাত তার এক ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। তার গাড়িটি বিমানবন্দর সড়কের বনানী ফ্লাইওভারের নিচে পৌঁছার পর একটি মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। সে সময় মাইক্রোবাস থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন ব্যক্তি সৈয়দ সাদাত আহমেদকে অন্য একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।

সাদাত আহমেদ অপহরণের পাঁচদিনের মাথায়, অর্থাত্ ২৭ আগস্ট একই কায়দায় তুলে নেয়া হয় আরএমএম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে। তিনি বেলারুশের অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাশিয়ান গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রমের লোকাল এজেন্ট হিসেবেও কাজ করতেন। শিল্পায়ন ও রফতানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার কারণে টানা সাতবার কমার্শিয়ালি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন (সিআইপি) হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

অনিরুদ্ধ কুমার রায় নিখোঁজের পর তার সন্ধান পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় একটি জিডি করা হয়। ওই জিডিতে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ঘটনার দিন ঋণ গ্রহণসংক্রান্ত একটি বৈঠকে অংশ নিতে ওইদিন অনিরুদ্ধ কুমার রায় ৭২ গুলশান এভিনিউয়ে অবস্থিত ইউনিয়ন ব্যাংকে গিয়েছিলেন। ব্যাংক থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার আগ মুহূর্তে অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজন লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়।

নিখোঁজদের উদ্ধারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন পেশার। তাই হয়তো কেউ আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত কারণে নিখোঁজ হয়েছেন, আবার কেউ পারিবারিক বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেও নিখোঁজ হতে পারেন। সবকিছু মাথায় রেখেই তাদের উদ্ধারে তত্পরতা অব্যাহত রয়েছে।

411 ভিউ

Posted ১:০৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com