কক্সবাংলা ডটকম(১৮ আগস্ট) :: সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরিভাবে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, র্যাব পুনর্গঠন না হলে এবং শর্ত পূরণ না হলে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না।
পিটার ডি হাস যখন এই বক্তব্য দিচ্ছেন ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্থানীয় মুদ্রায় রাশিয়া থেকে তেল কিনা যায় কিনা সেটি পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন যে, ভারত যদি তেল কিনতে পারে তাহলে বাংলাদেশ কিনতে পারবে কিনা। একনেকের বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এই বক্তব্য গণমাধ্যমে কাছে তুলে ধরেন। সাম্প্রতিক সময়ে যখন বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানামুখী চাপ দিচ্ছে ঠিক সেই সময় সরকারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতি অবস্থানের ব্যাপারে প্রকাশ্য সমালোচনা করছে। ফলে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের যে শীতলতা তা প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে।
অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন, সামনের দিনগুলোতে তা আরো বাড়বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রাসী হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত নিজের অর্থনৈতিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রাশিয়া থেকে তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নেবে এবং সেটি অবশ্যই নেতিবাচক হবে।
ডেমোক্রেটরা মার্কিন ক্ষমতা দখলের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা বিষয় সামনে এসেছে। যেমন জো বাইডেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেই যে গণতন্ত্র সম্মেলন ডেকেছিলেন, সেই সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাননি। এরপর বাংলাদেশের র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং র্যাবের বর্তমান এবং সাবেক সাত কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এরপর বাংলাদেশ সম্পর্কে যে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তার সবগুলোই একপেশে মনগড়া এবং বিশেষ মহল দ্বারা তৈরি করা বলেই সরকার মনে করছে। এই বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সেখান থেকে বিফলে এসেছেন। সেইখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেও মার্কিনীদের মন গলেনি।
এরপর তিনি ভোল পাল্টে ফেলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি সমালোচনাও করেন। এসব সমালোচনা ইতিবাচক ভূমিকা না রাখলেও দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে প্রকাশ্য করেছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ যখন একটি জটিল কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে ঠিক সেই সময় একটি বড় ধরনের প্রশ্ন সামনে উঠেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ কতটা আগ্রহী?
সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যেমন জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ তার পুলিশ প্রধানকে মনোনীত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জানেনা যে পুলিশ প্রধানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে কিনা। তার ভিসার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দেনদরবার চলছে, কিন্তু সেই দেনদরবারে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি।
সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এরকম আচরণ করতেই থাকে তাহলে একটি স্বাধীন সরকার কতটা বরদাস্ত করবে। সবকিছু মিলিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন সেটি নিষ্পত্তির কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। বরং সামনের দিনগুলোতে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে বড় ধরনের আগ্রাসী ভূমিকায় আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
বিএনপি এখন নিজের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং আন্দোলন করবে কিনা, কতদূর গভীর পর্যন্ত আন্দোলন করবে, কিভাবে আন্দোলন করবে, সরকারকে কতটুকু সমালোচনা করবে, কিভাবে সমালোচনা করবে ইত্যাদি সব বিষয়ে সুশীল এবং পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
গত কিছুদিন ধরেই সুশীল সমাজের একাংশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হচ্ছে এবং বিএনপি’র কি করা উচিত, কি ধরনের বক্তব্য দেয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে সুশীল সমাজের একাংশ। অন্যদিকে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাসের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করছে বিএনপি। আর এই দুই পরামর্শকের পরামর্শের দিকেই বিএনপি এখন তাকিয়ে আছে।
নিজের শক্তিতে নয়, বরং সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা নিয়েই বিএনপি একটা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বলে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন। বিএনপির কিছুদিন আগেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিল। এই আন্দোলনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে এবং এই সংলাপে ২২টি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকও করে বিএনপি।
কিন্তু এই বৈঠক শেষ হতে না হতেই বিএনপিকে বাদ দিয়েই কয়টি রাজনৈতিক দল মিলে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি মোর্চা তৈরি করে। ফলে বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের স্বপ্ন হোঁচট খায়। এরপর থেকেই বিএনপি এখন পশ্চিমা দেশ এবং সুশীলদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
Posted ৭:১৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta