কক্সবাংলা ডটকম(১৬ এপ্রিল) :: হেফাজতের পক্ষ থেকে গতকাল একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। জুনায়েদ বাবুনগরী ছাড়াও হেফাজতের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এই বিবৃতিতে হেফাজতের নেতাদের নির্যাতন, নিপীড়নের প্রতিবাদ করেছেন এবং তারা বলেছেন যে, এরকম নির্যাতন, নিপীড়নের ফলে `আল্লাহ`র গজব` নামবে।
হেফাজতের এই সব বিবৃতিতে এখন আর মানুষ ভীত হয় না। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও হেফাজতের এই সব বিবৃতিতে উত্তেজিত হয় না। হেফাজতের এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ৫ জন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন।
হেফাজতের সূত্র থেকে বলা হয়েছে যে, বিভিন্ন পর্যায়ে হেফাজতের শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হেফাজতের একাধিক নেতা বলছেন যে, জুনায়েদ বাবুনগরীর যারা ঘনিষ্ঠ, বেছে বেছে তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে।
হেফাজতের বাবুনগরীপন্থী একজন নেতা বলেছেন যে, ডানা ছেটে খাঁচায় ভরা হচ্ছে বাবুনগরীকে।
কারণ জুনায়েদ বাবুনগরীর যারা ডান হাত, বাম হাত হিসেবে পরিচিত, যারা জুনায়েদ বাবুনগরীর উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের মদদ জোগায় এবং বাবুনগরীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়, সরকার খুব সূঁচালোভাবে তাদের গ্রেফতার করছে।
যার ফলে জুনায়েদ বাবুনগরীর ডানা কাটা যাচ্ছে। আর এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে যখন জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হলে প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না।
হেফাজতের নেতারাও বুঝতে পারছেন যে, সরকার নিচ থেকেই গ্রেফতার অভিযান শুরু করছেন। অর্থাৎ মাঠে যারা প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখাতে পারবে, সন্ত্রাস করতে পারবে, কর্মীদেরকে উত্তেজিত করতে পারবে তাদেরকে আগে ধরা হচ্ছে।
এই ধারাবাহিকতা যখন শেষ হবে তখন জুনায়েদ বাবুনগরীকে ধরা হলে কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ হবে না। সেই কৌশলেই সরকার এগুচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে হেফাজতের অন্তত ৫০ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হেফাজতের এই সব নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত সাতজন। এই সমস্ত গ্রেপ্তারের প্রেক্ষিতে হেফাজতের অস্তিত্ব নিয়ে যেমন সংশয় দেখা দিয়েছে তেমনি হেফাজতের পুনুরুত্থান ঘটে কিনা এই গ্রেফতারের মাধ্যমে সেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বিশেষ করে হেফাজতের নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে হেফাজতের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন যে, আন্দোলন দমনের জন্য যে গ্রেফতার হয়রানি করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তবে জুনায়েদ বাবুনগরী কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিলেও এখন পর্যন্ত কঠোর তো দূরের কথা, হেফাজত বড় ধরনের কোন প্রতিবাদও করতে পারেনি।
সরকারের বিভিন্ন মহল মনে করছে, হেফাজত আসলে এরকম গ্রেপ্তারের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলনা। ২০১৩ এর পর থেকে তাদের মধ্যে একটা ধারণা হয়ে গেছিল যে, তারা বিচারের ঊর্ধ্বে। তারা যাই করুক না কেন সরকার তাদের বিচার করবে করবে না। আর এই কারণেই তারা সবসময় যাই করুক না কেন তাদের তাদের বিচার হবে না। আর এই বাস্তবতায় হেফাজতের মধ্যে এক ধরনের উগ্রবাদ এবং সরকারকে কথায় কথায় চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রবণতা দেখা দিয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তারের ঘটনাটা হেফাজতের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এবং আচমকা। আর এ কারণে অনেকে মনে করছেন যে, হেফাজত এই আচমকা আঘাতে হতবিহবল হয়ে পড়েছে এবং অনেকটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় চলে গেছে। তবে হেফাজতের শিক্ষার্থীরা হলো তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে তারা হয়তো এই গ্রেফতারের নিজেদের সংগঠিত করতে পারে এবং বড় ধরনের একটি আন্দোলনের চেষ্টা করতে পারে। সেটি যদি তারা পারে তাহলে তা হবে তাদের জন্য উত্থান।
তবে হেফাজতের অনেক নেতাই স্বীকার করছেন যে, বর্তমান সময়টা ভালো সময় নয়। কারণ একদিকে রোজার মাস, অন্যদিকে করোনার কারণে লকডাউন। হেফাজত আসলে একটি বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে এমন কথা বলছেন হেফাজতের একাধিক নেতা। তারা মনে করছেন যে, সরকার যে সময় গ্রেপ্তার করছে সেই সময় হেফাজত চাইলেও কোন কিছু করতে পারছে না। কারণ রমজান মাসে মাদরাসার ছাত্ররা রোজা রাখে, আবার লকডাউনের কারণে চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
কিন্তু হেফাজতই মনে করছে যে, যদি সরকার যদি এরকম করতেই থাকে তাহলে বাধ্য হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে হবে এবং তখন হেফাজত তার আগের রূপে ফিরে আসবে। ঈদের পরেই এরকম একটি আন্দোলনের প্রচ্ছন্ন হুমকি হেফাজতের কোনো কোনো নেতা দিচ্ছেন।
আর এটা যদি হেফাজত শেষ পর্যন্ত করতে পারে তাহলে এটি হবে হেফাজতের উত্থান এবং হেফাজত বাংলাদেশে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। আর এই ধরপাকড়ের ধারায় যদি হেফাজত নিশ্চুপ থাকে, হেফাজত যদি ক্রমশ সংকুচিত হয়, বিভক্ত হয়, তাহলে হেফাজতের ধারার পতন হবে। কাজেই এই ধরপাকড়ের প্রতিক্রিয়া কি হবে, হেফাজতের উত্থান হবে না পতন হবে সেটি বুঝতে ঈদের পর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
Posted ১:২৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta