কক্সবাংলা ডটকম(২৯ জুলাই) :: বিএনপির অন্যতম মুখর নেতা ছিলেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব। অসুস্থ হয়েও হাতে ক্যানলা নিয়ে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতেন। এভাবে তাকে দেখে অভ্যস্ত কিন্তু গত তিন মাস তার মুখে রা নেই। তিনি কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন।
অসুস্থ থাকার পর বাড়িতে যান এবং বাড়ি থেকে দু-একদিন দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে টুকটাক কথা বলেছেন কিন্তু তারপর আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এখন বাড়ীতেই।
এর মধ্যে তিনি করোনার টিকা নিয়েছেন, যে করোনার টিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচকদের অন্যতম রুহুল কবির রিজভী। রুহুল কবির রিজভী যখন করোনার টিকা নিলেন তখন বোঝা গেল যে তিনি খানিকটা সুস্থ হয়েছেন। তিনি যে এখন এত অসুস্থ নয় তা বোঝা যায় টুকটাক বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি কথাবার্তাও বলেন।
কিন্তু দলের পক্ষ হয়ে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেওয়া, সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা কিংবা নাটকীয় ঢঙ্গে তির্যক কথা বলার সেই রুহুল কবির রিজভী এখন নেই। কোথায় হারিয়ে গেলেন তিনি? কেন তিনি কথা বলছেন না? এই প্রশ্ন শুধু সাধারণ মানুষের নয় বিএনপির মধ্যে এই প্রশ্ন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।
জানা গেছে যে, শুধু অসুস্থতা নয় বরং বিভিন্ন কারণে অভিমান এবং ক্ষোভ থেকেই রুহুল কবির রিজভী এখন নীরবতা অবলম্বন করছেন। তার অভিমান এর প্রথম কারণ হলো যে, তিনি যখন অসুস্থ ছিলেন তখন বিএনপির কেউই তার পাশে দাঁড়াননি।
দু-একদিন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার খোঁজখবর নিয়েছেন, একদিন-দু`দিন তার বাড়িতে গেছেন কিন্তু বাকি সময় বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বেশিরভাগই তার কোন খোঁজ খবর নেননি। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রুহুল কবির রিজভী খবর নিয়েছেন, তারা দেখা করতে গেছেন কিন্তু সিনিয়র নেতারা তার সাথে তেমন কোন যোগাযোগ রাখেনি।
এমনকি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে রহস্যময়। এই পুরো সময় তারেক জিয়া রিজভীর একবারও খোঁজ নেননি বলে বিএনপিতে চাউর আছে এবং এটি রিজভীকে সবচেয়ে দুঃখিত করেছে।
দ্বিতীয় কারণ, রিজভীর অনুপস্থিতিতে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয় এমরান সালেহ প্রিন্সকে। এমরান সালেহ প্রিন্স বিএনপিতে কেবল একজন সুবিধাবাদী নেতাই না, সংস্কারপন্থীও বটে। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর যারা বিএনপিকে ভাঙ্গতে চেয়েছিলেন এবং যারা খালেদা জিয়াকে দল থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন তাদের অন্যতম সহযোগী ছিলেন এমরান সালেহ প্রিন্স। এজন্য তাকে দল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। রিজভীর প্রশ্ন দলের এত নেতা থাকতে প্রিন্সকে কেন দলের দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হল এবং এটি তিনি মেনে নিতে পারেননি। এ কারণেই অভিমান করে তিনি নীরবে-নিভৃতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
তৃতীয় কারণ, দলের কর্মকাণ্ড। বিএনপি আসলে কি করছে, বিএনপির রাজনীতি কি এটাও রিজভী বুঝতে পারছেন না। রিজভী তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠকে বলেছেন, বিএনপি কিসের রাজনীতি করছে তা এখন আমার বোধগম্য নয়। যেটা বুঝিনা সেটা করবো কিভাবে।
আর এই তিন কারণে রুহুল কবির রিজভী এখন এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছেন। তাকে না দেখা যাচ্ছে বক্তব্য-বিবৃতিতে দিতে, না দেখা যাচ্ছে দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে। তবে বিএনপির কোন কোন নেতা বলার চেষ্টা করছেন যে, রুহুল কবির রিজভীর সত্যি গুরুতর অসুস্থ এবং তার স্বাস্থ্যগত দিকটি সবার আগে দেখা প্রয়োজন।
আর এ কারণেই এখন রিজভী সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। তবে বিএনপির সাথে তার কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যে যাই বলুক না কেন গোপনে বলেছেন যে, রিজভীর মত নেতা বিএনপিতে যখন নীরব থাকে তখন বুঝতে হয় যে বিএনপি মৃতপ্রায়।
Posted ৫:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta