কক্সবাংলা ডটকম(২৮ মার্চ) :: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিভিশন আবেদনের মাধ্যমেই তার সাজা বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন দুদকের আইনজীবী। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, রিভিশন আবেদনের মাধ্যমে সাজা বাড়াতে হলে আগে সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধন বা পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়বে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য আসামিদের প্রত্যেককে ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের রায় অনুসারে বেশ কিছু গ্রাউন্ডে খালেদা জিয়াকে অন্য আসামিদের থেকে কম সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু মামলার সহযোগী আসামিদের ১০ বছর, অথচ গ্রাউন্ড বিবেচনায় মূল আসামিকে পাঁচ বছরের সাজা আইন অনুমোদন করে না বলে মনে করেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
সহযোগী আসামিদের তুলনায় মূল আসামির সাজা কম হওয়ায় দুদক সংক্ষুব্ধ। এ কারণেই তারা বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের সাজা অংশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন দাখিল করেন। বুধবার (২৮ মার্চ) ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত তা গ্রহণ করেন।
একইসঙ্গে এ মামলায় খালেদা জিয়াকে দেওয়া বিচারিক আদালতের সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চেয়ে মূল আসামি (খালেদা জিয়া) এবং সরকারকে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এ মামলার শুনানিতে দুদকের সাজা বাড়ানোর রিভিশনের বিষয়ে আপত্তি তোলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। শুনানিতে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এটা একটা বিশেষ মামলা, বিশেষ আইনের মামলা।’
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, ‘এখন একটি মাত্র পথ খোলা আছে— দুদক এই মামলার রায়ে (বিচারিক আদালতের রায়) ক্ষুব্ধ হলে রিভিশন না করে, তাদের আপিল করতে হবে। আর রিভিশন করতে হলে আইনটি পরিবর্তন ও সংশোধন করে নিয়ে আসতে হবে।’
কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের মতে, বিদ্যমান আইনেই খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে আইনের কোনও পরিবর্তনের দরকার নেই। তিনি জানান, শুনানিতে তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) বলেছেন, ফৌজদারি আইনের (ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৮) ১০ (১)(এ) ধারায় দুদকের রিভিশন করার সুযোগ নেই। সাজা বাড়াতে হলে আপিল আবেদন করতে হবে।
দুদকের এই আইনজীবী বলেন, ‘ফৌজদারি আইনের ওই ধারায় বলা আছে, কোনও বিশেষ জজ আদালত, দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত অথবা সহকারী দায়রা জজ আদালতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে। যেহেতু সেখানে আপিলের কথা বলা হয়েছে, সেহেতু সেখানে রিভিশন আবেদনও করা যাবে।’ কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দুদকের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আইনটি দেখেছি। এটা একটা বিশেষ আইন।। তাই বিদ্যমান আইনে রিভিশন আবেদনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো একেবারেই অসম্ভব।’
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ মনে করেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে দুদক যে রিভিশন আবেদন করেছে, তা এক ধরনের অনিয়ম। কিন্তু এর পরও দুদক রিভিশনের মাধ্যমে সাজা বাড়াতে চাইলে তাদেরকে আইন পরিবর্তন করতে হবে। নয়তো দুদককে তাদের আবেদন প্রত্যাহার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো সম্ভব নয়— এটাতো তার পক্ষের আইনজীবীরা বলবেনই। ওরা এও বলবেন, তোমরা (দুদক) আপিলে যাও। আবার আপিলে গেলে বলবেন, রিভিশনে যাও। এখন রিভিশন করেছি দেখে বলছেন, আপিলে যাও।
তাদের (খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের) ক্ষেত্রে এসব কথা নতুন নয়। এই আইনের কোনও পরিবর্তনের প্রশ্নই আসে না। বিদ্যমান আইনে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো সম্ভব। আর সে কারণেই আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে রুল জারি করেছেন।’
Posted ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta