মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া :: সেলিনা বেগম (২৫) ও দিদারুল ইসলাম (৩৫)। দুইজনই চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। একে অপরকে ভালোবেসে পালিয়ে যায়। তিন মাস একসাথে কাটে একটি ভাড়া বাসায়। এসময় দুজনের মধ্যে শারিরিক সম্পর্ক তৈরী হয়। এতে সেলিনা অšঃÍস্বত্তা হয়ে পড়ে।
বিষয়টি স্বামী দিদারুল ইসলামকে জানালে কৌশলে সে সেলিনাকে ভাড়া বাসায় রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়।
পরে সেলিনা আশ্রয় নেয় কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে। অসহায় সেলিনা বেগম স্ত্রীর স্বীকৃতি ও তাদের শারিরিক সম্পর্কের ফলে জন্ম নেয়া তিন মাসের সন্তানের পিতৃ পরিচয় চেয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দিদারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন। পরে পুলিশ দিদারুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
পরে সোমবার (১৯ জুলাই) বিকালে আসামী পক্ষের আইনজীবি দিদারুল ইসলামের জামিন প্রার্থন করেন। এসময় চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে আসামী সাথে কথা বলতে চান। পরে জেল সুপার আসামী দিদারুল ইসলামের সাথে আদালতের বিচারকের সাথে কথা বলার আয়োজন করেন। উভয়পক্ষের আলাপ-আলোচনা শেষে আদালত একটি নির্দেশ প্রদান করেন।
এতে জেল সুপারের উপস্থিতিতে কারাগারে বিয়ের আয়োজন করে আসামী দিদারুল ইসলামের সাথে মামলার বাদী সেলিনা বেগমকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে পড়াতে নির্দেশ দেন। এর পর দিদারুলকে মুক্তি দিয়ে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করতেও বলেন।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী সেলিনা বেগমের আইনজীবি চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী মো.মিজবাহ উদ্দিন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেমুশিয়া বাজার পাড়ার আকতার আহমদের কন্যা সেলিনা বেগমকে (২৫) বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে পালিয়ে যায় একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাসপাড়ার মোহাম্মদ কালুর ছেলে দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকু (৩৫)।
এর পর চকরিয়ার বাটাখালী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় তুলে বেশ কয়েকমাস শারিরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এইসময়ে সেলিনা বিয়ের কাবিননামা সম্পাদন করতে চাপ দেয় দিদারুলকে। কিন্তু দিদারুল ইসলামে চালাকি করে সেলিনার অজান্তে তাকে ভাড়া বাসায় রেখে পালিয়ে যায়।
এই অবস্থায় সেলিনা স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ২০২০ সালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মামলা করেন (সিআর-৮১৯/২০২০, দন্ডবিধি-৪৯৩) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বিজ্ঞ বিচারক রাজীব দেব সেলিনার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশনা তদন্ত শেষে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে উঠে আসে সেলিনা এবং দিদারুলে মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শারিরিক সম্পর্ক হয়। এতে অন্তঃসত্বা হয়ে পড়েন সেলিনা বেগম। বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে আসামী দিদারুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। বর্তমানে দিদারুল ইসলাম কক্সবাজার কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
আসামী দিদারুল ইসলামের আইনজীবী মো. মুজিবুল হক বলেন, আদালতে আসামীর জামিন আবেদন করা হয় । আসামী জামিন পেলে পলাতক হওয়ার আশঙ্কায় শুনানীর সময় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার জেল সুপারের সাথে সংযুক্ত হন এবং আসামী দিদারুলকে উপস্থিত করিয়ে বিজ্ঞ বিচারক তার স্বীকারোক্তি এবং সম্মতি নেন। এ সময় আসামী দিদারুল আদালতকে কথা দেন সেলিনাকে বিয়ে করার।
আইনজীবী মুজিবুল হক আরও বলেন, এসব শর্তে আসামীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয় এবং জেল সুপারের উপস্থিতিতে কারাগারে দুইজনের মধ্যে ধর্মীয় রীতিমতো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আদালতকে অবহিত করারও আদেশ দেন আদালত।
আদালতের এই আদেশ শুনে ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, আদালতের এই আদেশের আমি খুব খুশি হয়েছি। আদালত এবং বিচারকের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের মানবিকতার কারণে আমি স্ত্রীর স্বীকৃতি এবং আমার তিনমাসের সন্তান মো. তামিম পিতৃ পরিচয় পেতে যাচ্ছে।
Posted ৩:৩২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta