শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিতর্কিত ই-কমার্স ইভ্যালির নয়া কৌশল

রবিবার, ২৯ আগস্ট ২০২১
300 ভিউ
বিতর্কিত ই-কমার্স ইভ্যালির নয়া কৌশল

কক্সবাংলা ডটকম :: অগ্রিম টাকা ও পণ্য নিয়ে কাস্টমার ও সেলারদের অনিশ্চয়তায় ফেলার পর এবার নিজ কর্মীদেরও জিম্মি করছে বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি।

প্রত্যেক কর্মীকে মাসে ৫০ লাখ টাকার নতুন সেলার আনার টার্গেট দিয়ে ২৩ আগস্ট এক সভায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, যারা প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকার সেলার আনতে পারবেন না, তারা যেনো চাকরি ছেড়ে চলে যান।

জুলাই থেকে বকেয়া থাকা বেতন-ভাতা আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের আগে হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ইভ্যালির বিভিন্ন স্তরের একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মাসে ৫০ লাখ টাকার সেলার আনার টার্গেট দেওয়া কিংবা নভেম্বরের আগে স্যালারি না দেওয়া কথা ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা’। এমন কোন কথা তিনি বলেননি।

“যেহেতু কিছু কর্মী চাকরি ছেড়েছে, তাই তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এমন কথা বলতে পারে”- যোগ করেন তিনি।

ইভ্যালির একাধিক কর্মী জানান, গত ২৩ আগস্ট ওই সভায় কর্মীদের মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, “টি-১০ অফারে পাওয়া অর্ডার ছাড়া ইভ্যালির হাতে আর কোন ব্যাক-আপ নেই। তাই অক্টোবর-নভেম্বরের আগে কেউই স্যালারি আশা করবেন না। এতে যাদের ইচ্ছা চাকরি করেন, না হলে চলে যান।”

আর যারা থাকবেন, তাদের প্রত্যেককে মাসে ৫০ লাখ টাকার বাকিতে পণ্য দেওয়ার মতো সেলার বা মার্চেন্ট আনতে হবে। এক্ষেত্রে পুরনো সেলার বাদ দিয়ে নতুন সেলার আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এর আগে ১৯ আগস্ট ইভ্যালির বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে এক সভায় তিনি বলেছিলেন, আগামী দু-তিন মাসের আগে বেতন দেওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।

কোম্পানিটির একজন কর্মকর্তা জানান, জুন মাসের বেতন জুনিয়র কর্মকর্তাদের জুলাই মাসে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিনিয়র কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়নি। আর জুলাইয়ের বেতন কেউই এখনও পাননি।

গত ১১ আগস্ট কোম্পানিটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে সব কর্মীকে একটি ফরম ইমেইল করে বলা হয়, পুরো বেতন দেওয়া সম্ভব নয়।

কর্মীদের ন্যূনতম কী পরিমাণ টাকা জরুরি প্রয়োজন তা জানিয়ে ফিরতি ইমেইল পাঠাতে বলা হয়। কর্মীরা ফিরতি ইমেইল পাঠালেও এখন পর্যন্ত কাউকে কোন টাকা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে রাসেল বলেন, “মে মাসের স্যালারি সবাই জুনে পেয়েছে। জুনের স্যালারি কিছু এমপ্লয়ি ফুল ও কিছু আংশিক স্যালারি পেয়েছে, যা জুলাইতে দেওয়া হয়েছে। জুনে আমরা সিনিয়ররা কেউই বেতন নেইনি।

অক্টোবর- নভেম্বরের আগে বেতন হবে না- এমন কথাও বলেননি বলে দাবি করেছেন মোহাম্মদ রাসেল।

তিনি বলেন, “যারা চাকরি ছাড়ছেন, তাদের সার্ভিস বেনিফিট দেওয়ার মতো অবস্থা এখন আমাদের নেই। আমরা পরে দেব বলে তাদেরকে জানিয়েছি।”

ইভ্যালির একটি বিভাগের প্রধানের পদ থেকে চাকরি ছেড়েছেন, এমন এক কর্মকর্তা বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে কোন কর্মকর্তা সেলার আনার পর ওই সেলার থেকে পণ্য নিয়ে তার পাওনা পরিশোধ করা হয় না। তখন ওই সেলার যে কর্মকর্তার মাধ্যমে ইভ্যালির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, পাওনা আদায়ের জন্য ওই কর্মকর্তার ওপর চাপ দেন। অনেকের বাসায়ও হুমকি যাচ্ছে।”

এ অবস্থায় কোন কর্মকর্তার পক্ষে নতুন করে সেলার আনা সম্ভব নয়। এ কারণেও অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। তার বিভাগের অনেক কর্মকর্তাই চাকরি ছেড়েছেন বলে জানান তিনি।

বকেয়া বেতন কবে পাওয়া যেতে পারে, কর্মীদের এমন প্রশ্নে ইভ্যালির মানবসম্পদ বিভাগ (এইচআর) বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের আগে বকেয়া বেতন পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

কোন কর্মকর্তা চাকরি ছাড়ার নোটিশ দিলে, নোটিশকালীন সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের কোন সার্ভিস বেনিফিট দেওয়া হচ্ছে না।

ইভ্যালির একজন কর্মকর্তা জানান, “আমি দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। এই বেতন পাওয়ার জন্য আমি আরও তিন-চার মাস ফ্রিতে কাজ করতে রাজী নই। তাই আমি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল নিজে গত ৫ জুন সাড়ে ৪ লাখ টাকা বেতন পেয়েছেন। গত এপ্রিল মাসে ঈদ-উল ফিতরের সময় তিনি নিজের সাড়ে ৪ লাখ টাকা বেতনের পাশাপাশি সমপরিমাণ বোনাস নিয়েছেন। এছাড়া, ঈদের সময় ওভারটাইম ডিউটি হিসেবে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা নিজের স্যালারি একাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন।

রাসেল বলেন, “আমি সর্বশেষ মে মাসের বেতন জুনে নিয়েছি। ওই সময় সবাই তাদের বেতন পেয়েছে।”

তিনি বলেন, “পরিচালন ব্যয় কমাতে আমরা কিছু এমপ্লয়ি কমাচ্ছি।”

ছাঁটাই না করে কীভাবে কর্মী কমাচ্ছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা কাউকে ছাঁটাই করছি না। কর্মীরা টাইমলি স্যালারি চায়। আমরা দিতে পারছি না। তাই তারা চলে যাচ্ছে। আমরা তাদের ধরে রাখতে পারছি না।”

ইভ্যালির কর্মকর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপে অল এমপ্লয়ি গ্রুপ, ট্রিম গ্রুপ, অফার গ্রুপসহ অনেকগুলো গ্রুপ ছিল। কোম্পানিটির প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের আলাদা আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও রয়েছে। হোম অফিসের সময়কালে এসব গ্রুপে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ছাড়াও কোম্পানির লেনদেনের বিভিন্ন তথ্যসহ এক্সেল ফাইল লেনদেন করতেন কর্মকর্তারা। সেসব গ্রুপ ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়েছে কর্মকর্তাদের।

ইভ্যালির একজন কর্মকর্তা জানান, গত ১৯ আগস্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন হঠাৎ করেই ইন্টারনাল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলো ডিলিট করে প্রমাণ হিসেবে তার স্ক্রিনশট পাঠাতে বলেন। তার নির্দেশনা মতো গ্রুপগুলো ডিলিট করে স্ক্রিনশট পাঠানো হয়েছে।

পরে আবার নতুন করে গ্রুপ খুলতে নির্দেশনা দেন শামীমা। সে মোতাবেক নতুন গ্রুপ খুলে তাতে এমডি-চেয়ারম্যানকে যুক্ত করা হয়েছে।

“কর্মীদের হাতে কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের কোন তথ্য যাতে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতেই তাৎক্ষণিকভাবে সকল গ্রুপ ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়েছে,” বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান ওই কর্মকর্তা।

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ডিলিট করার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করে মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, “পুরনো অনেক এমপ্লয়ি এসব গ্রুপে যুক্ত থাকায় গ্রুপগুলো ডিলিট করে নতুন গ্রুপ খোলা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর দুই থেকে তিন মাসের আগাম সময় নিয়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে পণ্য সরবরাহের লোভনীয় বিভিন্ন ‘অফার’ দেওয়া শুরু করে ইভ্যালি। তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি, প্রাইভেটকারসহ নানা পণ্যের ক্রেতাদের সমারোহ ঘটেছিল ইভ্যালিতে।

স্বল্প মূল্যের এসব পণ্যের জন্য টাকা নেওয়া হতো অগ্রিম। কিন্তু কিছু ক্রেতাকে পণ্য দিয়ে বাকিদেরকে অপেক্ষায় রাখার কৌশল নিয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপর মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

এদিকে  বৃহস্পতিবার(২৬ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া দায়-দেনার হিসাবে দেখা যায়, দুই লাখ ১৪ হাজার গ্রাহক ইভ্যালির কাছে পণ্য কেনার জন্য বুকিং দিয়েছেন। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত বুকিং বাবদ গ্রাহকরা ইভ্যালির কাছে ৩১০ কোটি টাকা পাবেন।

সূত্র বলছে, দুই লাখ ১৪ হাজার গ্রাহকের মধ্যে অধিকাংশই তাদের মূল টাকা ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে  ইভ্যালির কল সেন্টার থেকে গ্রাহকদের বলা হচ্ছিল, অচিরেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সংকট আরও বাড়ছে। সর্বশেষ ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব তলবের পর যমুনা গ্রুপও প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। যমুনা গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে ইভ্যালির সঙ্গে  সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা না দিলেও আপাতত প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করবে না। এমন পরিস্থিতিতে ইভ্যালির অধিকাংশ কর্মী চাকরি খুঁজতে শুরু করেছেন। অবশ্য অধিকাংশ কর্মী ঈদের আগে বেতন বোনাস কিছুই পাননি। ঈদের পরেও তাদের বেতন হয়নি।

ইভ্যালির কল সেন্টারে চাকরি করা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একদিকে বেতন নেই, অন্যদিকে মানুষের সঙ্গে অনবরত মিথ্যা কথা বলতে হয়। প্রতিদিন একশ কল ধরলে তার ৯৯টি কলেই গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার অনিশ্চয়তা ও কান্নাকাটি শুনতে হয়েছে।

কল সেন্টারের সবার প্রায় একই বক্তব্য- আমরা গ্রাহকদের অনবরত একই কথা বলে গেছি- আপনার পণ্যটি নিয়ে কাজ হচ্ছে, অচিরেই পেয়ে যাবেন। অনেকে অনবরত এই ধরনের মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকতে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

এদিকে যেসব কর্মীর বাসায় ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ছিল গত সপ্তাহে তাদের কাছ থেকে সেগুলো বুঝে নিয়েছে ইভ্যালি। ১৮০ জনের মতো কর্মী ছিল ইভ্যালির কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে। তাদের সবাইকে চাকরিতে আর না যেতে বলা হয়েছে।

300 ভিউ

Posted ৩:৪৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৯ আগস্ট ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com