কক্সবাংলা ডটকম(২০ আগস্ট) :: সম্প্রতি ছাত্রলীগের একটি পোস্টার ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা সামাজিক মাধ্যম হয়ে ছড়িয়েছে মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচে। রাজনৈতিক মহলে এখন আলোচনা-সমালোচনার বিষয় সেই পোস্টার। এমনকি সংগঠনটির সাবেক নেতারাও তা নিয়ে সমালোচনায় মুখর। অনেকে আবার ছাত্রলীগের এ কর্মকাণ্ডের নাম দিয়েছে ‘ইসলামী ছাত্রলীগ’!
ওই পোস্টারটি ছাপানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে।
যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই পোস্টারটি তাদের নয়। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ এমন অপপ্রচার চালিয়েছে।
তবে তাদের এ দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সংগঠনটির সাবেক কয়েকজন নেতা বলছেন: যেখানে মধুর ক্যান্টিনকে মনে করা হয় ছাত্রলীগের দ্বিতীয় অস্থায়ী কার্যালয়, দিন-রাত সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদচারণা থাকে। তারপরও কিভাবে একটি বিতর্কিত পোস্টার মধুর ক্যান্টিনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে?
এই প্রশ্নের কোনো উত্তর এখন পর্যন্ত দিতে পারেননি ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব।
আগামী ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের ওই আয়োজনের পোস্টারটিতে কোথাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়নি। পরিবর্তে রয়েছে: ‘‘পবিত্র কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিলে’ সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, প্রধান অতিথি মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ। কুরআন তেলওয়াতে শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী, সাইদুল ইসলাম আসাদ, তাওহীদ বিন আলী লাহোরী, সাইফুল ইসলাম আল হুসাইনী, তরিকুল ইসলাম, সাইফুর রহমান তুরকী ও তারেক জামিল।
হামদ-নাতে জাগ্রত কবি- মুহিব খান, আনিছ আনসারী, হাফেজ এমদাদুল ইসলাম, মামুন আনসারী, কাজি আমিনুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, এনামুল কবির, সফিউল্লাহ বেলালী, ইসহাক আলমগীর, হাসনাত রায়হান, ইশতিয়াক আহমাদ।’’
এমনকি এই পোস্টারের কোথাও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানটিও ব্যবহৃত হয়নি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তাদের কেউই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের কেউ কেউ বলেন: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অসাম্প্রদায়িক চেতনার আদর্শ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব ধর্ম রয়েছে। আমরা যেমন নিজ নিজ ধর্মকে ভালোবাসি, ঠিক তেমনই অন্যের ধর্মকেও শ্রদ্ধা করি।
‘‘১৫ আগস্ট ওই কালো রাতে জাতির পিতাকে ঘাতক বুলেট আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়। আমার অতীতে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সারাদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজিয়ে কাঙ্গালী ভোজ করে এ দিনটি পালন করেছি। ব্যক্তি উদ্যোগে আলাদা আলাদা ভাবে দোয়া মহফিল ও প্রার্থনার আয়োজন করে থাকে। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে ছাত্রলীগের আয়োজনে এ ধরনের ধর্মীয় আবরণের পোস্টার আমাদের অবাক করেছে।’’
কেউ আবার একধাপ এগিয়ে বলছেন: ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কেন বাজানো হয়? যেন তার চেতনা-উপলব্ধি আমরা সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু সত্য বলতে ছাত্রলীগের এ পোস্টার আমাদের আবাক করেছে। এখন নাকি ছাত্র শিবিরও ১৫ আগস্ট পালন করে। শুরুতে আমরা ভেবে ছিলাম এটা ছাত্র শিবিরের পোস্টার।’
বর্তমান ছাত্রলীগের নেতৃত্বের প্রতিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা। তবে তাদের কেউই নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের কেউ কেউ বলেন: তথাকথিত সিন্ডিকেট ভাঙতে নেত্রী এবার নিজেই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করেছেন। তাই তাদের বিষয়ে আমরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাই না। তারা রাজনীতিতে এতোটাই উদাসীন যে অধিকাংশ জাতীয় কর্মসূচিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে এক সঙ্গে পাওয়া যায় না।
‘‘এমনকি নেত্রীর নির্দেশে ডেঙ্গু মোকাবিলায় যখন আওয়ামী লীগ দেশ জুড়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি দিলো। কর্মসূচি শুরুর দিন তাদের ডেকেও পাওয়া যায়নি। যেখানে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন উপস্থিত ছিলো; সেখানে দু’দিন আগ থেকে কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণে আওয়ামী লীগ সভাপতির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দিয়েও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাউকে পাওয়া যায়নি।’’
এমন পরিস্থিতিতে আবার পোস্টার কাণ্ড ক্রুব্ধ করেছে আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দকে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাদের বক্তব্য। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্টারটি শেয়ার করে লিখেছে: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রলীগে আপনাকে স্বাগতম।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশিক রণ ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন: মাশাআল্লাহ এই প্রথম ছাত্রলীগের অসাধারণ ডিজাইন, অসাধারণ অতিথিবৃন্দ এবং অসাধারণ কনসেপ্টসহ কিছু একটা দেখলাম! এই ধরনের পোস্টার পল্টনে দেখা যায়।
যার মাথা থেকে এমন দারুণ আইডিয়া বের হয়েছে এবং যেভাবে সবাইকে খাওয়াতে পেরেছে তাতে তাকে ভবিষ্যৎ ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চাই। শুভ কামনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
এদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহ-সম্পাদক এস.এম মামুন ছাত্রলীগ সভাপতির ফ্যান পেজ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের টুইটার পেজের কিছু স্ক্রিনশট পোস্ট করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন ছাত্রলীগ যতই অস্বীকার করুক পোস্টারটি তাদেরই। তিনি তার পোস্টে লিখেছেন: ভাবা যায় শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুই জানতেন না!!! মিডিয়াকাতর নেতারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফাইড টুইটার পেইজ থেকে পোস্টটি সরাতে ভুলে গেছেন! ভাইয়ের সমর্থক গোষ্ঠী এখনও হয়তো বুঝতেই পারেন নি যে কি হয়েছে!
ভুল হলে তা স্বীকার করার সাহস, শক্তি বা মানসিকতা যাদের নাই তাদের কাছ থেকে ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতা কর্মীরা কি শিখবে!!!
কপটতা,টাউটারি, বাটপারি, ছাড়া আর কি!!!