আব্দুল কুদ্দুস রানা :: ২০১৯ সালটা আমরা বিদায় দিয়েছিলাম নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে। বছরজুড়ে লেগেছিল নির্বাচন, অধিকার আদায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম, আগুনের বিভীষিকা, ছেলে ধরাসহ বিভিন্ন গুজব, সড়ক দুর্ঘটনা, দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে ছড়ানো উত্তাপ।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে আশা-হতাশার ২০১৯ সালের শেষ সূর্যকে বিদায় দিয়ে আমরা বরণ করে নিয়েছিলাম সম্ভাবনার ২০২০ সালকে। আশা ছিল ২০২০ সালটা সবার ভালোই ভালোই কাটবে। কিন্তু হলো উল্টোটা। `করোনাদগ্ধ’ উপাধি নিয়েই বিদায় নিল ২০২০ সাল।কয়েক ঘন্টা আগেই ২০২০ সালের শেষ সূযর্টা লাল আভা ছাড়িয়ে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ল। প্রথম আলো আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম করেছে ‘বিষন্নতার বছর, বিচ্ছিন্নতার বছর’ নামে। বছরজুড়ে ব্যক্তিজীবন কেটেছে শঙ্কা আর স্বজন হারানোর বেদনায়। মানুষের মনে ছিল ভয় আর অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের শঙ্কা।
যেকোনো বছরের তুলনায় ২০২০ সবার কাছে হয়ে ওঠে স্মৃতিবহ। আমার কাছেও ২০২০ অন্য একটা সালের মতই হত-যদিনা ‘করোনা’ শব্দটা যুক্ত না হত। করোনা আমার যতটুকু ক্ষতি করেছে, তার চেয়েও বেশি শিখিয়েছে করোনা। এই করোনা শিখিয়েছে, ভয়াল মহামারিতেও নিজের জীবন তুচ্ছ করে বিপদাপন্ন-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে, করোনা রোগীর সম্পর্শে গিয়ে আমাদের জীবন বাঁচানোর সাহস জুগিয়েছে, করোনা শিখিয়েছে মানুষের মধ্যে কে আপন, আর কে পর- তা পরখ করতে।
করোনা মহামারির শুরুতে সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্টান, কলকারখানা, ব্যবসাবাণিজ্য সবকিছু বন্ধ ছিল। কাজকর্ম চলে সীমিত পরিসরে। ব্যতিক্রম শুধু সাংবাদমাধ্যম। করোনা মহামারিতে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি সংবাদ মাধ্যমগুলো। করোনার ভয়ালচিত্র মানুষের ঘরেঘরে পৌঁছে দেওয়ার কঠিন দায়িত্ব পালন করে চলেছেন গণমাধ্যম যোদ্ধারাই। নিজের জীবন তুচ্ছ করে মাঠে ময়দানে সক্রিয় থেকে করোনার ভয়াল থাবা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সাংবাদিকেরাই। সম্মুখসারির একজন সহযোদ্ধা হিসাবে আমিও সেই কৃতিত্বের ভাগিদার। যদিও সাংবাদিকদের এমন ঝুঁকি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আগে ছিলনা। ছিলনা মহামারি সম্পর্কে পূর্বধরণা।
করোনায় বদলে গেছে-আমার তোমার সবার জীবন। করোনা আমাদের নতুন জীবন মানিয়ে চলতে শিখিয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি যোগাচ্ছে করোনা। সুন্দর সুস্থ জীবন ধরে রাখতে চাইলে আমাদের করোনাজীবন মানিয়ে চলার বিকল্প নেই। নইলে কিন্তু বিপদ আছে।
করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে এপযর্ন্ত ২০ লাখের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে মারা গেছে সাড়ে ৭ হাজার। এরমধ্যে সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ মানবিক কর্মে জীবন উৎসর্গকারীদের ভুমিকা ছিল অগ্রগন্য, মনে রাখার মত। বলতে গেলে ২০২০ সাল আমাদের কাছে এসেছিল মারাত্বক অভিশাপ হয়ে । মানুষের জীবন-জীবিকা, শিক্ষা,অর্থনীতিকে পঙ্গু এবং বিপর্যস্ত করে দিতে।
২০২০ অনেক ঘটনার সাক্ষি। বছরজুড়ে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষুব্দ ছিল দেশের মানুষ। আন্দোলনের মূখে ধর্ষণের সাজা হয়েছে মৃত্যুদন্ড। টেকনাফসহ কক্সবাজারে মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধ ও গোলাগুলিতে মারা গেছে অন্তত ২৪০ জন। মেজর সিনহা হত্যাকান্ড বদলে দেয় পুরোচিত্র। এখন বন্দুকযুদ্ধে কারো প্রাণ যায় না, ইয়াবা চোরাচালানও থেমে নেই, ধরা পড়ছে ইয়াবার বড়বড় চালান। বছরের শেষ দিকে কুষ্টিয়ায় জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। এরমাঝে পদ্মাসেতুর নির্মাণযজ্ঞ আশার সঞ্চার ঘটায় প্রাণ থেকে প্রাণে।
স্বাগত ২০২১
মানুষ বাঁচে আশা নিয়ে। আমরা আশাবাদি মানুষ। বিরুপ পরিস্থিতি থেকেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। ২০২০ সালের ভয়াল করোনা ২০২১ সালে এসে থেমে যাবে-এমন আশা করা বোকামি। নতুন বছরে আমাদের করণীয় হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে করোনা মোকাবিলা করা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। দূর থেকে পাশে থাকা। করোনা মহামারি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে সরকারের দিকে চেয়ে না থেকে সমাজের সকল স্তরের শ্রেণিপেশার মানুষের সন্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নইলে শিক্ষা,জীবিকার ক্ষেত্রে অসমতা দেখা দিতে পারে। ভ্যাকসিন গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমাদের জন্য নিরাপদ ব্যবহার তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক। মাস্ক ব্যবহার এখন বাধ্যতামূলক।
দুঃখের দিনে মানুষ ভাবতে ভালোবাসে। আমাদের ভাবনায় লাল সবুজের বাংলাদেশ। নতুন বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম সুবর্ণজয়ন্তি। নতুন বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হোক, করোনায় অভিশাপমুক্ত হোক সোনার বাংলা। ২০২০ সালের দুঃখ দুর্দশা, অশান্তি, হানাহানী, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, দুর্ণীতি, আগুন সন্ত্রাসের মত মহামারির কোনো কালো ছায়া যেন স্পর্শ না করে নতুন ২০২১ সালকে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
❤️সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা
আব্দুল কুদ্দুস রানা
৩১ ডিসেম্বর-২০২০
Posted ১:২৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta