কক্সবাংলা ডটকম(৮ ডিসেম্বর) :: রামোস -২১ বছরের এই প্লেয়ারকে নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল গোটা ফুটবল দুনিয়া৷ মাত্র ২১ বছর বয়সে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করলেন পর্তুগালের গনসালো রামোস। এটা কাতার বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক। মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে রামোসের হ্যাটট্রিকে ভর করে সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে গুঁড়িয়ে শেষ আটের টিকিট পায় পর্তুগিজরা। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল পর্তুগাল। জার্মানিতে সেবার তারা চতুর্থ হয়েছিল।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে গনসালো রামোসের জাদুকরি পারফরম্যান্সে ভর করে সুইজারল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে পর্তুগাল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জায়গায় মূল একাদশে খেলার সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করলেন রামোস। ম্যাচের ১৭, ৫১ ও ৬৭ মিনিটে মিনিটে তিন গোল করেন রামোস। কাতার বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিট করে এ তরুণ তুর্কি এখন সবচেয়ে বেশি আলোতে।
উল্লেখ্য, মূল একাদশে প্রথমবার সুযোগ পেয়েই হ্যাটট্রিক করলেন রামোস। এর আগে সাকল্যে পর্তুগালের হয়ে তিনি খেলেন মাত্র ৩৩ মিনিট। এবার বিশ্বকাপ মঞ্চে নেমেই নিজেকে চেনালেন।
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক এল এই পর্তুগিজ স্ট্রাইকারের পা থেকেই৷ অথচ এই ফুটবলারের প্রথম দলে সুযোগ পাওয়ার কথাও ছিল না৷ লিভারপুলের তারকা ফুটবলার দিয়োগো জোটা-র চোটের কারণে তিনি দলে সুযোগ পান৷
গ্রুপ স্টেজের ম্যাচেও সেভাবে খেলানো হয়নি৷ মঙ্গলবারের মারকাটারি জয়ের ম্যাচটি পর্তুগালের জার্সি গায়ে রামোসের মাত্র চতুর্থ ম্যাচ৷ নিজের সুযোগের ভরপুর ফায়দা ওঠান তিনি৷
এই রামোস কে? এটাই এখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে৷ এবারের বিশ্বকাপে শেষ ষোলর ম্যাচের আগে আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁকে বড় একটা চিনত না কেউই৷ তাকে বেনফিকার উজ্জ্বলতম ভবিষ্যত হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ লিগের ম্যাচে ১১ খেলায় তিনি ৯ গোল করেছেন৷ বেনফিকার প্রস্তুতি পর্ব থেকে বিশ্বকাপের লড়াইয়ের মঞ্চে দুরন্ত ট্রান্সফর্মেশন তাঁর৷ এদিনের পর ইউরোপে খুব দ্রুত নাম করতে চলেছেন তরুণ তুর্কি৷
তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি ২০১৯ এ৷ তিনি অনুর্ধ্ব ১৯ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলের মালিক ছিলেন৷ মাত্র ১২ বছর বয়সে ২০১৩ সালে বেনফিকাতে যোগ দেন৷ তাঁর ফিনিশিং অ্যাবিলিটির জন্যেই কোচেদের তিনি বড় প্রিয়৷ পর্তুগাল দলে এতগুলো প্লে মেকার থাকলেও সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে বিশ্রাম দিয়ে তাঁকে খেলানো হয়৷
এ যেন ধূমকেতুর মতোই আবির্ভাব গনসালো রামোসের। গত মঙ্গলবার রাতে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে অনবদ্য এক হ্যাটট্রিক করেন পর্তুগালের ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার গনসালো রামোস। কিন্তু তার আবির্ভাবে কি বিদায়ঘণ্টা বেজে যাচ্ছে ফুটবলের মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর? পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী, আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেই তো রামোসকে পর্তুগালের মূল একাদশে নামান কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। আর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করলেন বেনফিকার এ স্ট্রাইকার। হয়তো এ আলোকোজ্জ্বল পারফরম্যান্সেই তিনি পূর্বসূরিকে বিদায়ের পথটাও দেখিয়ে দিলেন।
প্রথমবারের মতো মূল একাদশে নেমেই বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে হ্যাটট্রিকের ঘটনা ২০ বছরের মধ্যে প্রথম। সর্বশেষটি করেছিলেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা। এটি আবার ১৯৯০ সালের পর বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে প্রথম হ্যাটট্রিক। সর্বশেষ এ কীর্তিটা চেক রিপাবলিকের টমাস স্কুরাভির।
৩৭ বছর বয়সী রোনালদোর শোকেস ট্রফি আর নানা পুরস্কারে ভরা। সেখানে নেই শুধু বিশ্বকাপের ঝলমলে ট্রফিটা। এবার শেষ মিশনে সেই ট্রফি জয়ের পণ করেছেন তিনি। পর্তুগালও বিশ্বকাপ জেতেনি কখনো। সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রেখেছে পর্তুগিজরা। তাতে রোনালদোর স্বপ্নটাও বেঁচে থাকল। তবে এ মিশনের নেতৃত্বে তিনি আর থাকছেন না হয়তো। সর্বশেষ ম্যাচে ৭৩ মিনিটে হোয়াও ফেলিক্সের জায়গায় বদলি হিসেবে নামানো হয় রোনালদোকে। দলে জায়গা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় অধিনায়কের আর্মব্যান্ডও থাকছে অন্য কারো হাতে।
শেষ গ্রুপ ম্যাচে শেষ দিকে উঠিয়ে নেয়ায় রোনালদো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান, যা ভালোভাবে নেননি স্যান্টোস। পরের ম্যাচেই রোনালদোকে বেঞ্চে রেখে রামোসকে মাঠে নামান পর্তুগাল কোচ। তার এ সিদ্ধান্তেই বিশ্বকাপ ফুটবলে ২১ বছরের তরুণের ইতিহাস গড়ার সুযোগ তৈরি হয়।
অবশ্য স্যান্টোসের কথায় লাইফলাইন পেতে পারেন রোনালদো। পর্তুগাল কোচ বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ দলের শক্তি ও দুর্বলতা বিবেচনা করেই তিনি একাদশ ঠিক করবেন। তবে এটাও ঠিক, রামোস যে পারফর্ম করেছেন তাতে মরক্কোর বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তার জায়গা হারানো অকল্পনীয়ই বটে।’
স্যান্টোস বলেছেন, ‘আমার কাছে যেটা সঠিক স্ট্র্যাটেজি মনে হয়, আমি সেভাবেই খেলোয়াড় বাছাই করব, যেমনটি আমি সারাজীবন করে এসেছি।’
অনেকেরই ধারণা, স্যান্টোসের দলে রোনালদোর দিন হয়তো ফুরিয়ে আসছে। ৩৭ বছর বয়সী এ খেলোয়াড় সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করলেও তা অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে থাকা এক মহাতারকা কয়েক মিটারের ‘অন্যায্য’ সুবিধা নিতে চেয়ে ব্যর্থ হন। এটা অবশ্য চলতি বিশ্বকাপে প্রথম ঘটেনি। তার পা দুটি যে আর আগের মতো গতিময় নেই, শরীরও ঝিমিয়ে পড়ছে, তা স্পষ্ট। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ফুটবল ও বিশ্বকাপের ভবিষ্যৎ মহাতারকা হিসেবে নিজের নামটি এঁকে দিতে মাত্র ৭৪ মিনিট সময় নিলেন রামোস।
বলাবাহুল্য, আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ প্রথম মূল একাদশে নামেন রামোস। তিনি দেখিয়ে দিলেন, আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার ভবিষ্যৎ কেমন হবে। তার ফিনিশিং, বল রিসিভ করা ও বুঝতে পারার ক্ষমতাই বলে দেয়, পর্তুগিজ ফুটবলে তিনি স্থায়ী জায়গা করে নিতে চলেছেন।
Posted ২:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta