মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির কক্সবাজারের কুতুপালং

বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
309 ভিউ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির কক্সবাজারের কুতুপালং

কক্সবাংলা রিপোর্ট :: মানবাধিকারের জন্য সুপরিচিত পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ এক এক করে তাদের সব দরজা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বন্ধ করে দিচ্ছিল। ঠিক তখন মিয়ানমারে নিপীড়িত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে এ দেশে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এখন কার্যত বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির। সীমিত সামর্থ্য, বিশাল জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আবারও নিজেকে অন্য অনেক পশ্চিমা দেশের চেয়ে মানবিক ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করেছে।

মিয়ানমারে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস শুধু ২০১৬ বা ২০১৭ সালের নয়, নিপীড়িতদের আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস বাংলাদেশের বেশ পুরনো। তবে ২০১৭ সালে মাত্র তিন মাসের মধ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। প্রবল ঝুঁকি জেনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের মানুষ যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিপদে আশ্রয় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যেমন মানবিক ও আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার মা) পরিচিতি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম বড় হত্যাযজ্ঞের কালিমা থেকে বাংলাদেশ বিশ্বকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিত, তাহলে ওই ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে প্রাণে মরতে হতো।

বাংলাদেশ শুধু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াই নয়, তাদের খাবার ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। মিয়ানমারে তাদের ফেরার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের জবাবদিহি নিশ্চিত করতেও উদ্যোগ নিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যত উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। লাখ লাখ রোহিঙ্গা যখন মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসছে, তখন সারা বিশ্বের দৃষ্টি এই সমস্যার দিকে। মিয়ানমার তখন দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে, কার্যত যুদ্ধ বাধাতে বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এই ফাঁদে পা দেয়নি, বরং কূটনৈতিকভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের দিকেই বিশ্বের দৃষ্টি রাখতে কাজ করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। কূটনীতির ক্ষেত্রেও এটি বেশ উদ্ভাবনীয় বিষয়। যেমন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও ফেরার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করছে, আবার একইভাবে বাংলাদেশ বহুপক্ষীয় ফোরাম বা বৈঠকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের জবাবদিহি ইস্যুতেও বাংলাদেশের ভূমিকা বেশ সাহসী। ইউরোপীয় ও মুসলিম বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদে একের পর এক প্রস্তাব আনছে। আবার মিয়ানমারের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখছে।

আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট, সংক্ষেপে আইসিসি) বিচারিক এখতিয়ার মিয়ানমার অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আইসিসিকে বলেছে, এ দেশের ওপর বিচারিক এখতিয়ার আইসিসির আছে। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কোন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো এবং দেশান্তরি হতে বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে সম্ভাব্য অপরাধগুলোর বিষয়ে আইসিসির প্রসিকিউটরের দপ্তর অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হওয়ায় সেখানে সংঘটিত সব অপরাধের বিচার করা ওই আদালতের পক্ষে কঠিন হবে—এই বাস্তবতা অনুধাবন করে বাংলাদেশ গাম্বিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, সংক্ষেপে আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে দায়ের করা সেই মামলায় অং সান সু চিসহ পুরো মিয়ানমার রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। কানাডা ও নেদারল্যান্ডস এখন সেই মামলায় গাম্বিয়ার পক্ষে যোগ দিচ্ছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে আইসিজে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা জেনোসাইড বন্ধে অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন। গত ডিসেম্বর মাসে আইসিজে আরেক আদেশে অন্তর্বর্তী আদেশ প্রতিপালন পর্যবেক্ষণে তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।

আইসিসি ও আইসিজেতে বিচারপ্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়। এই সময়ের মধ্যে যাতে মিয়ানমার তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করে না ফেলে সে জন্য জাতিসংঘ এরই মধ্যে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তকাঠামো সৃষ্টি করেছে। এই কাঠামো রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছে এবং বিভিন্ন আদালতকে তা সরবরাহ করছে। এই কাঠামো সৃষ্টির ভাবনা ও উদ্যোগের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বাংলাদেশ।

কক্সবাজারে যে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, তারাই একেকজন মিয়ানমারের জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ। আন্তর্জাতিক যে বিচারিক বা তদন্তকাঠামোগুলো রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান ও সংগ্রহ করতে চাচ্ছে, তাদের কক্সবাজারে সরেজমিনে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ।

কুতুপালংয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে শুধু আশ্রয়ই নয়, তাদের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার বরাবরই বলছে, প্রত্যাবাসন শুরু করতে তারা প্রস্তুত। বাংলাদেশও চায় রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। এরই মধ্যে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির ছেড়ে একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। রোহিঙ্গাদের কাছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চেয়ে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের আশ্রয়শিবির অনেক বেশি নিরাপদ।

 

309 ভিউ

Posted ২:২৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com