কক্সবাংলা ডটকম(৭ মার্চ) :: বাঙালি বিদ্রোহী। বাঙালি নরম মানসিকতার। কিন্তু দুর্জয় ঘাঁটির অধিকারী। যে বঙ্গভূমি বনলতা সেনকে খোঁজে দারুচিনি দ্বীপের দেশে, সেই ভূমি বাঁশবন, লাউমাচা, ধানজমি, ইটভাটা, নদীর তীরে রক্তাক্ত মুক্তি সংগ্রামে নেমে পড়ে। দ্রোহ-ক্রান্তিকালের সেই লাশে ঢাকা রাজপথ পেরিয়ে জন্ম নেয় বাংলাদেশ।
সেই মহা বিজয়ের স্পর্ধিত বার্তা দিয়ে বিশ্বকে স্তম্ভিত ও পাকিস্তানি সেনা, সরকারকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার দিন ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছিল লড়াইয়ের কথা।
পাঁচ দশক আগে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ( এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) থেকে জলদগম্ভীর স্বরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল- প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।” কেঁপে গিয়েছিল পাকিস্তান সরকার।
শুরু হল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সরাসরি সংঘর্ষ-মুক্তিযুদ্ধ। তারই ফল ১৯৭১ সালেই তীব্র রক্তাক্ত লড়াই, ৩০ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যুর পথ বেয়ে বাংলাদেশের জন্ম। এই সংঘর্ষে ভারত সরকার প্রত্যক্ষ সাহায্য করে বাংলাদেশি মুক্তি বাহিনিকে। ঢাকায় ভারতীয়-মুক্তিবাহিনি যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনা।
বাংলাদেশের জন্মের এই ইতিহাসের অন্যতম চরিত্র শেখ মুজিবুর রহনান। চলতি বছর তাঁর জন্ম শতবর্ষ বা মুজিব বর্ষ পালন করছে বাংলাদেশ সরকার। সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অর্ধশতাব্দী। পাঁচ দশক পুরনো এই ভাষণ বিশ্বের গণজাগরণের সালতামামিতে সর্বাধিক উদ্দীপনাময় বক্তৃতার একটি।
সেদিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পাক সেনাকে বলেছিলেন, ‘…সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব।
১৮ মিনিটের ভাষণ। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান (এখন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সেই ভাষণ সম্প্রচার করে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’
বাংলাদেশের ইতিহাসবিদদের দাবি, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণই ছিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। এরপরেই ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো-এর তরফে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানকে এই বাংলাদেশের মাটিতেই সামরিক হামলায় সপরিবারে খুন হতে হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ঘটনা। তখন তিনি তাঁর স্বপ্নের দেশের সর্বময় শাসক। মুজিব শতবর্ষে এটিও সমান আলেচিত।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রধানমন্ত্রী এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। খবর বাসসের
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এ সময় তার বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন। পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী উপ প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের এ দিনে তার জ্বালাময়ী ও আবেগঘন বক্তৃতায় দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ স্বাধীনতাকামী জনগণের সমাবেশে কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
Posted ১:১৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ মার্চ ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta