শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বেপরোয়া ঋণ দিয়ে বেসরকারি ব্যাংক’র ভল্ট খালি

সোমবার, ০২ এপ্রিল ২০১৮
401 ভিউ
বেপরোয়া ঋণ দিয়ে  বেসরকারি ব্যাংক’র ভল্ট খালি

কক্সবাংলা ডটকম(১ এপ্রিল) :: বেপরোয়াভাবে ঋণ দিয়ে ভল্ট খালি করে ফেলেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এখন অতিপ্রয়োজনীয় খাতে ঋণ দেওয়ার মতো সামান্য অর্থও নেই বেশিরভাগ ব্যাংকে। তারল্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

আইনি বাধ্যবাধকতায় সংগৃহীত আমানতের মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে হতো। বর্তমানে ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে এ খাত থেকে ব্যাংকগুলো ১০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিতে পারবে।

অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের কারণে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ আটকে গেছে। এর বাইরে মালিকরা বিলাসী খরচ দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। অর্থ আদায় ও খরচ কমিয়ে তারল্য সংকট কাটানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা অলস তারল্য ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে তা কমে মাত্র ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ অলস তারল্যের বেশিরভাগ রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোয়।

বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় অলস তারল্য দূরের কথা, নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও নেই। সরকারি ব্যাংকে প্রায় লাখ কোটি টাকা অলস তারল্য থাকলেও অর্থের অভাবে ঋণ দিতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন মালিক ও এমডিদের সংগঠনের নেতারা।গত বছরের জুন থেকে ব্যাপক হারে ঋণ বিতরণ করেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

এ সময়ে আমানত বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের কম হলেও ঋণ বেড়েছে ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ হারে। ফলে ব্যাংকের তারল্য শেষ হয়ে গেছে। একদিকে আমানত সংগ্রহ কম হয়েছে, আবার আগের বিতরণ করা ঋণের টাকাও আদায় হচ্ছে নাÑ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

গত এক বছরে খেলাপি ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এই ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়েছে। এর বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো।

এই অবলোপন করার ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থাৎ ৪৫ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর আটকে গেছে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। এ টাকা থেকে সামান্যতম অংশ আদায় করেও তারল্য সংকট কাটানো সম্ভব।

কিন্তু ব্যাংকের মালিক ও এমডিরা এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না।এর বাইরে বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রধান নির্বাহীদের বেতন, অফিস সাজ্জসজ্জার পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছেন। অধিকাংশ ব্যাংকের মালিকরা প্রকৃত বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যে ব্যাংকের কাছে নিজস্ব সম্পদ ভাড়া দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

ব্যাংকের জন্য কেনাকাটায় যোগসাজশের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন মালিকরা। খরচ কমানোর বিষয়েও কোনো উদ্যোগ গ্রহণের কথা আসেনি মালিক বা সরকারের পক্ষ থেকে।বিভিন্ন কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। তারল্য সংকট কাটাতে আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে ব্যাংকগুলো।

এতে আমানতের সুদহার বেড়ে ৯ থেকে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগে এ হার ছিল ৩ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত। আমানতের বিপরীতে সুদহার বাড়ায় ঋণের সুদহারও সিঙ্গেল ডিজিট থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলে সুযোগ পান ব্যাংকের মালিকরা। তারা আইনের সংস্কারের দাবি জানাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত প্রভাব খাটিয়ে আইনে ছাড় আদায় করে নিয়েছেন ব্যাংকের মালিকরা।

ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, একটি ব্যাংকের কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট বেড়ে গেছে। ফলে হঠাৎ করে ঋণের সুদহার বেড়েছে।

তারল্য সংকটের কারণে সুদহার বেড়েছে। সুদহার কমানোর জন্য আমরা সরকারি সংস্থাগুলোর আমানত রাখা ও সিআরআর কমানোর জন্য বলেছি। সিআরআর ১ শতাংশ কমানোর ফলে ১০ হাজার কোটি টাকা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। এটি আমাদের নিজেদের জমানো অর্থ।

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি বলেন, সুদহার কমানোর জন্য ৩টি পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিচালন ব্যয় কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বেতনভাতা বাবদ অধিক খরচ, শাখা স্থাপন সাজসজ্জা ও অধিক পরিচালন ব্যয় কমাতে হবে। মালিকদের অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য বন্ধ করতে হবে।

এ ছাড়া খেলাপি ঋণ থেকে আদায় বাড়াতে হবে।সরকারি বিভিন্ন সংস্থা তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যাংকে জমা রাখেন। পরে সেই অর্থ নিয়ে প্রয়োজনীয় খরচ মেটান। নিয়ম অনুসারে এ অর্থের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংক জমা রাখা যাবে এবং ৭৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

ফারমার্স ব্যাংকে অর্থ জমা রেখে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিটিআরসিসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা অর্থ ফেরত চেয়ে পায়নি। এ ঘটনার পর অন্য ব্যাংক অর্থ তুলে নিয়ে সরকারি ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা শুরু করে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। এতে বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকট আরও ঘনীভূত হয়। তাই মালিক ও এমডিরা অন্তত ৫০ শতাংশ সরকারি আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার দাবি জানান। সেই দাবি মেনে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফারমার্স ব্যাংকের কাছে জলবায়ু তহবিলের ৫০৯ কোটি টাকা আটকে আছে, দিতে পারছে না। এভাবে জনগণের অর্থ দেওয়া ঠিক হবে না। তবু মন্ত্রী যখন বলেছেন তখন দেবে। আর যদি অর্থ দিতেই হয়, তা হলে আগের ২৫ শতাংশ বা তার চেয়ে সামান্য বেশি দেওয়া যেতে পারে; তবে তা কিছুতেই ৫০ শতাংশ হতে পারে না।এদিকে বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য সংকট হলেও সরকারি ব্যাংকে অলস অর্থ উদ্বৃত্ত রয়েছে।

মালিকরা দাবি করেছেন, অলস তারল্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে হবে। কোনো ব্যাংকের বেশি আছে কোনো ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে। এটি সমন্বয় করলেই সমস্যার অনেকটা কমে যাবে।

বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, সরকারি ব্যাংকের প্রচুর অলস অর্থ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমানত নিতে গেলে ১০ শতাংশ সুদ নিচ্ছেন। এটি না করে কস্ট অব ফান্ড ৫ শতাংশের সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে ৭ শতাংশ সুদে অর্থ আমানত দিতে হবে।

এ বিষয়ে খুব শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণ, যাচাই-বাছাই ছাড়া বেপরোয়া ঋণ এবং বিচারহীনতার কারণে ব্যাংকিং খাতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এসব জায়গায় হাত দেওয়া হচ্ছে না। এসব কারণে নীতিমালায় ছাড়ের উদ্দেশ্যে সংশয় থেকে যাচ্ছে।

এদিকে দেশের অধিকাংশ জনগণ কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান ১৫ শতাংশ। কিন্তু দেশের ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হলেও কৃষি খাতে কোনো ব্যাংক ঋণ দিতে চায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা করে মোট ঋণের মাত্র আড়াই শতাংশ কৃষি খাতে দিতে বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য সামান্য এ ঋণ দিতে চায় না ব্যাংকগুলো। তারা মোট ঋণের মাত্র ১ শতাংশ এ খাতে দিতে চায়। না দিতে পারলে তাদের কাছে কোনো জবাবও চাওয়া যাবে না বলে দাবি করেছেন ব্যাংকের মালিকরা। বর্তমানে জরিমানার বিধান রয়েছে।

401 ভিউ

Posted ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০২ এপ্রিল ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com