বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভারতের পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোন পথে

রবিবার, ১৪ আগস্ট ২০২২
204 ভিউ
ভারতের পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা  কোন পথে

কক্সবাংলা ডটকম :: ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘদিন ধরেই বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজেকে পরাশক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে দেশটি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বিভিন্ন সময়ে দেশটির এ উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করেছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশটির কাছে পরাশক্তি হয়ে ওঠার ধারণা এখনো ‘গ্রেট’ আর ‘গ্রেটনেসের’ মধ্যেই আটকে রয়েছে। এ উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এখনো কার্যকর কোনো পথ খুঁজে বের করতে পারেনি ভারত।

ইন্দোপ্যাসিফিকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তির বিপরীতে যে কয়টি দেশ এখন ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াস চালাচ্ছে তার অন্যতম ভারত। নয়াদিল্লির পশ্চিমা মিত্ররাও এখন এ অঞ্চলে চীনকে মোকাবেলায় ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। তবে এখনো অর্থনৈতিক ও সার্বিক সক্ষমতার দিক থেকে চীনের চেয়ে বহুদূর পিছিয়ে ভারত।

দুই দেশের জনসংখ্যা প্রায় সমান হলেও চীনের অর্থনীতির পরিসর ভারতের তুলনায় কয়েক গুণ। ভারতের জিডিপির আকার ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি, যেখানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের জিডিপির আকার ১৮ লাখ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

‘গ্রেট পাওয়ার’ হয়ে ওঠার ভারতীয় আকাঙ্ক্ষা বাস্তব রূপ পেতে দেশটির এখনো অনেক দূর যেতে হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, এশিয়ার পরাশক্তি চীনের সঙ্গে শক্তির ভারসাম্য রক্ষা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের সম্ভাবনা অনেক। তার পরেও পরাশক্তি হয়ে উঠতে হলে দেশটিকে এখনো অনেক বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

এজন্য সবার আগে জাতীয় সম্পদ বাড়ানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন জায়গার দখল নিতে হবে দেশটিকে। বাণিজ্যিকভাবে ও বিনিয়োগের দিক থেকেও নিজের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে দেশটিকে।আবার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অর্থনৈতিক সংযোগ তৈরি করতে পারেনি দেশটি।

ইস্ট এশিয়া ফোরামের প্রধান সম্পাদক এবং ক্যানবেরাভিত্তিক অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্রফোর্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসির ইস্ট এশিয়ান ব্যুরোর প্রধান পিটার ড্রিসডেইল এবং ইস্ট এশিয়া ফোরামের বিশেষজ্ঞ চার্লি বেইনসের মতে, ইন্দোপ্যাসিফিকের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে চীনের অন্যতম প্রতিপক্ষ ভারত এখন মনোযোগ কাড়ছে।

উত্সাহী মিত্ররা এখন পর্যন্ত দেশটির ‘লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাকে’ কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে ঠিকই। কিন্তু রাজনৈতিক বিনিময়ের অংশ হিসেবে অর্থনৈতিক যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলোয় দেশটির বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা তেমন একটা নেই। এগুলো বড়জোর দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

চীন-ভারতের মধ্যকার ব্যবধান সম্পর্কে তাদের অভিমত হলো, যদি চীনের অর্থনৈতিক বর্ধনশীলতা এ মুহূর্তে পুরোপুরি থমকে যায়, এর বিপরীতে ভারত বছরে ৭-৮ শতাংশ হারে বাড়তে থাকে এবং দেশটির প্রতি এক দশকে আয় দ্বিগুণে দাঁড়ায়; তার পরেও ২০৫০ সালের আগে চীনকে ধরতে পারবে না ভারত।

চীন এ মুহূর্তে যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উত্কর্ষের গর্বে গর্বিত, সেটি অর্জন করতে না পারলে ভারতের আকাঙ্ক্ষা শুধু আকাঙ্ক্ষাই থেকে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এখনো ভারতকে স্রেফ দোদুল্যমান শক্তি বা নিজেদের কার্যসিদ্ধির মাধ্যম হিসেবেই দেখছে। যদিও ভারতীয়রা এখন বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আরো মর্যাদাপূর্ণ ও স্বাধীন ভূমিকা রাখতে চাইছে।

এশিয়া টাইমসে সম্প্রতি তাদের এ পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়।

বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার বিরোধপূর্ণ ভূরাজনীতিতে একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান ভারতের। দেশটির মধ্যে আঞ্চলিক থেকে বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা পূর্ণমাত্রায় বিরাজমান। ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য আনার মতো প্রভাবকের ভূমিকাও নিতে পারবে দেশটি। এ নিয়ে দেশটির সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও এ আকাঙ্ক্ষা পূরণের সম্ভাব্য পথ সম্পর্কে ধারণা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের ভাষ্যমতে, দেশটির সরকার জনসাধারণের মধ্যে এ আকাঙ্ক্ষা খুব ভালোভাবেই তৈরি করতে পেরেছে। যদিও দেশটির সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে এখনো কার্যকর কৌশল তৈরি করে ওঠা যায়নি। দেশটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনেক। সস্তা শ্রমের সরবরাহও আছে অনেক। ২০২০ সালেও দেশটির জনসংখ্যার ২৬ শতাংশের বয়স ছিল ১৫ বছরের নিচে।

আবার এর বিপরীতে দেশটিতে এখন কর্মহীনতার হার বাড়ছে। ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৪৫ শতাংশই কৃষি খাতের। যদিও দেশটির মোট জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৪ শতাংশ। যান্ত্রিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে খাতটির শ্রমিকরাও এখন কর্মহীন হয়ে পড়ছেন।

সে হিসেবে কৃষি খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির বড় একটি অংশ এখন ছদ্ম কর্মহীনতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আবার দেশটির অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের বড় একটি অংশ বছরের দীর্ঘ সময় বেকার থাকে। দেশটির আনুষ্ঠানিক শ্রম পরিসংখ্যানে এ সাময়িক কর্মীদের বেকারত্বের তথ্যও তেমন একটা পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যেও এখন কর্মহীনতা বাড়ছে। উপযুক্ত কাজ বা চাকরির খোঁজেও দেশটির তরুণদের দীর্ঘ সময় বেকার বসে থাকতে দেখা যায়। ভারতের শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার (এলএফপিআর বা লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট) ৪৫ শতাংশের আশপাশে। যেখানে দেশটির প্রতিযোগী অন্যান্য দেশে তা ৬০ শতাংশের বেশি।

আবার আনুষ্ঠানিক খাতও এখন স্থায়ী কর্মীর চেয়ে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে বেশি। সরকারি বা বেসরকারি সবখানেই এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক এসব কর্মী আয় করছেন তুলনামূলক কম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

পরিবারের আয় কমায় অনেক শিশু এখন স্কুলের ব্যয় বহন করতে না পেরে কম বয়সেই লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে। স্বাস্থ্য খাতেও দেশটির জনগণের প্রবেশাধিকার তুলনামূলক কম। জনসাধারণের বড় একটি অংশ গোটা জীবনই কাটিয়ে দিচ্ছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। শিক্ষা এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতও এখনো অবহেলিত রয়ে গিয়েছে।

তবে এখনো দেশটির সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, চীনে শ্রমব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশটি থেকে অনেক শিল্প এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এদিক থেকে ভারতের লাভবান হওয়ার বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।

দেশটি এখন সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থানে বিদেশী বিনিয়োগে গড়ে ওঠা শিল্প স্থানান্তরে মনোযোগ দিচ্ছে। আবার বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের দিক থেকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির সুফল কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশটির সামনে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতোই ভারতের পক্ষেও দ্রুত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। এজন্য দেশটিকে এখন কার্যকর বিনিয়োগ ও বাণিজ্য কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি কার্যকর বাজার সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব করে তোলার জন্য জাতীয় বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়াতে হবে।

এসব পরিবর্তন ও সংস্কার বাস্তবায়নের পথে বেশকিছু বাধাও রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, চীন-মার্কিন দ্বৈরথ, রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান এবং এর ধারাবাহিকতায় অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা বৈশ্বিক জ্বালানি ও খাদ্যের বাজার, চীনের সঙ্গে বৈরিতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশে দেশে সুদহার বৃদ্ধি ও কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে ধীরগতির পুনরুদ্ধারের মতো বিষয়গুলো দেশটির নীতিনির্ধারকদের যথাযথ কৌশল নির্ধারণের পথে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিজস্ব শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে দেশটির বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট সব বাধা দূর করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সস্তায় কাঁচামাল আমদানির দুয়ার খুলে গেলে শিল্প খাতে নিজের সক্ষমতা ও সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে পারবে ভারত। একই সঙ্গে দেশটির উৎপাদন খাতও সম্প্রসারণশীল শ্রমশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়ে উঠবে। বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার হিস্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। অর্থনৈতিক কূটনীতিতেও এর প্রতিফলন থাকা অপরিহার্য।

—এশিয়া টাইমস অবলম্বনে

204 ভিউ

Posted ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৪ আগস্ট ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com