শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভারতে করোনা সুনামি নিয়ে চিন্তিত সারা বিশ্ব

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১
296 ভিউ
ভারতে করোনা সুনামি নিয়ে চিন্তিত সারা বিশ্ব

কক্সবাংলা ডটকম :: ভারতের হাসপাতালগুলো এরই মধ্যে করোনা রোগীতে প্রায় পূর্ণ। শয্যা খালি নেই সেগুলোর কোনোটিতেই। সদ্য মৃতদের সত্কারের জন্য বড় চাপ তৈরি হয়েছে শ্মশান ও কবরস্থানগুলোতে। হাসপাতালে ভর্তির জন্য হোক আর শেষযাত্রার জন্য হোক, ধরতে হচ্ছে বিশাল লম্বা লাইন। সেই সঙ্গে আছে ওষুধের স্বল্পতা, অক্সিজেনের অভাব, চিকিৎসাকর্মী ও সরঞ্জামের অপ্রতুলতা। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রতি তিনজন কভিড-১৯ রোগীর একজন ভারতের। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রবাহে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ভারতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।

গতকাল সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সংক্রমণের হার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ একদিনে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে ২ হাজার ৭৬৭ জন।

বিশেষ করে দেশটির রাজধানী দিল্লির অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। শহরটির বেশির ভাগ হাসপাতালেই আর কোনো জায়গা খালি নেই। ফলে নতুন কোনো রোগীকে ভর্তি নিচ্ছে না তারা। আবার পুরনো রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে টান পড়তে পারে ভেবেই অনেক হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। অক্সিজেন সুবিধাসংবলিত অ্যাম্বুলেন্সগুলোরও অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে রোগীদের হাসপাতাল পর্যন্ত নিতেও বিপদে পড়ছেন পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসকরা বলছেন, দিল্লির একজন আক্রান্ত ব্যক্তি এখন তাদের সংস্পর্শে আসা ১০ জনের মধ্যে নয়জনকে আক্রান্ত করছে, যা গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি।

করোনা চিকিৎসায় ভারতে এমন বেশকিছু ঘটনার কথা জানা গেছে, যেখানে কেবল হাই ফ্লো অক্সিজেন বা উচ্চ চাপযুক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারায় রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। চারদিকে শুধু হাহাকার। যে যেভাবে পারছে, যেখানে পারছে অক্সিজেন বা হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেতে পরিচিতদের কাছে সাহায্য চাইছে। কিন্তু এসবই এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরাও পরিস্থিতির কাছে অসহায়। পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়া না গেলে তাদের আসলে কিছু করার থাকে না। কেরালা রাজ্যের কভিড টাস্কফোর্সের চিকিৎসক এ ফাথাহুডেন বলেন, ভেন্টিলেশন ও বি-প্যাপ মেশিনের ঠিকমতো কাজ করার জন্য উচ্চ চাপযুক্ত তরল অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। অক্সিজেনের চাপ কমে গেলে রোগীর ফুসফুসে তা পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না। ফলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শুধু দিল্লি বা কেরালাই নয়, পুনে, নাসিক, লক্ষেৗ, ভোপাল, ইন্দোর, এলাহাবাদসহ ভারতের বেশির ভাগ শহরের দৃশ্যই কমবেশি এ রকম। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে করোনা পরীক্ষাগারগুলোর সক্ষমতাও শেষ হয়ে গেছে। চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে বাড়িতেই যেমন মারা যাচ্ছেন, তেমনি রোগীর চাপের কারণে পরীক্ষা করানোর সুযোগটুকুও তারা পাচ্ছে না।

ভারতে করোনা সুনামি নিয়ে সারা বিশ্ব চিন্তিত

শুধু হাসপাতালই নয়, শ্মশান বা কবরস্থানগুলোও স্থান সংকটে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে গণচিতার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে মৃতদেহ সত্কারের জন্য। অস্থায়ী শ্মশানও তৈরি করতে হয়েছে।

করোনা মহামারীর প্রথম বছরটি কোনোভাবে সামলে উঠেছিল ভারত। কিন্তু দ্বিতীয় বছর শুরু হতেই সবকিছু যেন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে মার্চ থেকে রীতিমতো সংক্রমণের বিস্ফোরণ শুরু হয়েছে। বি.১.৬১৭ নামের ভ্যারিয়েন্টের কারণে পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে প্রায় ৬১ শতাংশ নমুনায় এ ভ্যারিয়েন্টের দেখা মিলছে। এ বৈশিষ্ট্যযুক্ত করোনাভাইরাসকে ডাবল মিউট্যান্টও বলা হয়। এটির সংক্রমণ আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ।

সামনের দিনগুলো আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার (পিএইচএফআই) এপিডেমিওলজিস্ট গিরিধর আর বাবু বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এটা করোনাভাইরাসের শেষ ঢেউ নয় এবং এটাই শেষ মহামারী নয়। ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। কারণ বিশ্বের কোনো একটি অংশে যদি রোগ নিয়ন্ত্রণকে অবহেলা করা হয় বা রোগ নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে তা অন্য প্রান্তের মানুষদেরও বিপদের মুখে ফেলে দেয়। গোটা দেশের কভিড-১৯ পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদান কর্মসূচির বিস্তার ঘটানোর ওপর জোর দেন তিনি।

ভারতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ মারা যাচ্ছে কারণ তারা কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ করেনি। অনেকেই আছে যারা পরীক্ষা করার ও চিকিৎসার সুযোগও পাননি। ভারতের ভয়াবহ অবস্থা আসলে একটি সতর্কবার্তা। একটি ভাইরাস কী করতে পারে তার প্রমাণ এটি।

এমন বাস্তবতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের মানুষকে টিকা গ্রহণ করতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝড় গোটা ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। অবশ্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পর কম সমালোচনার মুখেও পড়েনি মোদি প্রশাসন।

ভারতের এ দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্রুতই সহায়তা পাঠানোর কথাও জানিয়েছে তারা। হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারত সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা পাঠানোর জন্য দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের মধ্যে আলোচনা চলছে। দি ইউএস চেম্বার অব কমার্স এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রশাসনকে তাদের সংরক্ষণাগারে থাকা লক্ষাধিক অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অতিসত্বর ভারত, ব্রাজিল ও অন্যান্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশে পাঠাতে অনুরোধ করেছে।

ওয়াশিংটনের কাছে ভারতের জন্য অক্সিজেন, অতিরিক্ত পরীক্ষা কিট ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পিপিই পাঠাতে অনুরোধ করেছেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশিস ঝা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা বাড়তি টিকা ভারতসহ অন্যান্য আক্রান্ত দেশে পাঠাতেও অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখন উচিত কাঁচামালের ওপর তাদের রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা ঠিক করবেন, কোন উপায়ে এ সংকটে তাদের পাশে থাকা যায়।

এক বিবৃতিতে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ভারতের মানুষের এ ভয়াবহ অবস্থার বিষয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, জার্মানি ভারতের পাশে থাকবে এবং জরুরি ভিত্তিতে তাদের জন্য সহায়তা পাঠাবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও ভারতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন উপায়ে ভারতের মানুষকে সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। যদিও ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ বর্তমানে নিষিদ্ধ রয়েছে, তবু সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ভেন্টিলেশন ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে ভারতের পাশে থাকবে দেশটি।

বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি ভারতের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তাদের চিরবৈরী দেশ পাকিস্তানের মানুষ। ভারতের পাশে দাঁড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরব হয়েছে পাকিস্তানি নেটিজেনরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে পাকিস্তান স্ট্যান্ডস উইথ ইন্ডিয়া লিখে নিজেদের পাশে থাকার কথা জানান দিচ্ছে তারা। বেসরকারিভাবে পাকিস্তানের কিছু সংস্থা অ্যাম্বুলেন্সের মতো সামগ্রী দিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি আসলে গোটা বিশ্বের জন্যই দুঃসংবাদ। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদন কেন্দ্রটি ভারতের পুনে শহরে অবস্থিত। সেরাম ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানটি অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ দেয়া কোভ্যাক্স জোটের টিকাও এখানে উৎপাদন হওয়ার কথা।

কিন্তু দেশটির সাম্প্রতিক পরিস্থিতিই জটিল। এ পর্যন্ত দেশটির মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেছে। ফলে গত মার্চে ভারত দেশের বাইরে টিকা রফতানি না করার ঘোষণা দেয়। উল্টো অ্যাস্ট্রাজেনেকার জন্য যে টিকা তৈরি করা হয়েছিল, তা তাদের দেশেই ব্যবহার শুরু করে। এছাড়া মার্কিন প্রতিষ্ঠান নোভাভ্যাক্সের জন্য টিকা উৎপাদনের কথা ছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের। কিন্তু ভারতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সেটিও হয়তো সময়মতো হবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বৈশ্বিক চাহিদা পূরণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে ভারত।

১৩০ কোটি বা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মানুষের দেশ ভারত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের এ দেশে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৭০ লাখের মতো মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জন।

296 ভিউ

Posted ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com