কক্সবাংলা রিপোর্ট :: সব আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে বহু প্রতিক্ষিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আবাসন প্রকল্প গড়ার পর স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করল বাংলাদেশ সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝেই বৃহস্পতিবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ওই চরটিতে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
প্রথম দিন স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে সাতটি জাহাজ।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বোট ক্লাব এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে স্থানীয় প্রশাসন তাদের এসব জাহাজে তুলে দেয়। এর আগে ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মালপত্রও জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ৬টার দিকে দুটো জাহাজে মোট ১ হাজার ১৯টি লাগেজ পাঠানো হয়। এরপর সাড়ে ১০টার দিকে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো রওনা হয়।
রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজের ছয়টি নৌবাহিনীর, একটি সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনীর জাহাজটির নাম ‘শক্তি সঞ্চার’। আরও ১৯টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে স্কট জাহাজও রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে ‘চল চল ভাসানচর চল’ লেখা সংবলিত ব্যানার লাগিয়ে রোহিঙ্গা-বহরের ৩৮টি বাস চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করে। যেসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়া হচ্ছে এতকাল ধরে তারা অবস্থান করছিলেন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে।বাংলাদেশ নৌ বাহিনী রেডি রেসপন্স বাথ ও বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে অস্থায়ী ‘ট্রান্সজিট ক্যাম্পে’ প্রথমে তাদের রাখা হয়। এসব বাসকে নিরাপত্তা দিয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে পুলিশ ও র্যাব-৯ এবং র্যাব-১৫।
সেনা অত্যাচারে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা।প্রবল শরণার্থী চাপ পড়েছে মায়ামমার সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। সমস্যা সমাধানে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসান চর এলাকায় আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানেই লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে প্রাথমিকভাবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
ভাসানচর মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এই ভাসানচরে তাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচরে তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন আবাসন ব্যবস্থা। শহরের অধিকাংশ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভাসানচরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা সরকারি খরচে রোহিঙ্গাদের জন্যে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
গত ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা নির্যাতন শুরু হলে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেন। এর আগে নির্যাতনে শিকার হয়ে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বদলে গেছে ভাসানচর: সব মিলিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য শতভাগ প্রস্তুত প্রায় ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভাসানচর। আধুনিক বর্জ্য ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা, বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে।
রোহিঙ্গাদের একটি অংশ অস্থায়ীভাবে ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ‘আশ্রয়ণ-৩’ নামে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। চরটি বসবাসের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও দ্বীপটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই প্রকল্পটির প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এরপর ভাসানচর ঘিরে আবাসন নির্মাণের লক্ষ্যে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সম্ভাব্যতা নিরীক্ষা করে প্রণয়ন করা হয় ডিপিপি। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা। বাঁধ ও জেটি নির্মাণের জন্য পরে প্রকল্প ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। বর্তমানে ভাসানচরে ৩০৬ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৯৭, নারী ১৭৬ ও শিশু ৩৩ জন। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জলসীমা থেকে আটকের পর তাদের ভাসানচরে নির্মিত ক্লাস্টারে নিয়ে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার ছবি———–
Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta