কক্সবাংলা ডটকম(২৭ মার্চ) :: প্রতিবছর বইমেলা এলেই প্রকাশিত হয় হাজার হাজার বই। সেসব বইয়ের বেশির ভাগ লেখকই নতুন, বয়সে তরুণ। এতো অল্প সময়ে এতো বেশি বই প্রকাশিত হওয়ায় বইয়ের মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তেমনি ‘ভুয়া’ লেখকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে! যারা সুযোগ বুঝে অন্যের কবিতা নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বইয়ে প্রায় ৩০টির মতো কবিতা আছে। কিন্তু অভিযোগ আছে এই কবিতার বইয়ে সকল কবিতা চুরি করা! অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় শ্রাবণ প্রকাশনী সাথে সাথে বইটি বাতিল করে। এমনকি রকমারি ডটকম থেকেও তুলে নিয়া হয় বইটি। ভুল শিকার করে ক্ষমাও চেয়েছে প্রকাশনী কর্তৃপক্ষ।
আরেক কবি শোয়েব মাহমুদ। বই মেলায় তার তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে একটি কবিতার বই হলো ‘একটি আত্মহত্যা স্থগিত করে এসেছি’। এই বইয়ের ১২নং পৃষ্টার ‘শব্দ’ কতিবার একটি অংশ ‘ইনকগনিটো’র লেখা ‘ব্যাধ’ কাব্যগ্রন্থটি থেকে হুবহু চুরি করা। ‘ব্যাধ’ কাব্যগ্রন্থটিও ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, এবার গ্রন্থমেলায় ৪ হাজার ৫৯১টি নতুন বই প্রকাশিত হয়। এরমধ্যে মাত্র ৪৮৮টি বই মানসম্পন্ন ছিল বলে। আর প্রায় আড়াই হাজার কবিতার বইয়ের অধিকাংশেরই মান খারাপ বলেও তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি।
চুরি করে কবিতা ছাপা ও মানহীন হাজার হাজার বই প্রকাশ হওয়ার জন্য প্রকাশনাগুলোকে দায়ী করেছে বাংলা একাডেমি।
এ ব্যাপারে শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান বলেন, ‘অন্যের কবিতা চুরি করা জঘন্যতম অপরাধ। এসব চোরদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। এরাতো রাস্তার চোর না, পকেটমার না, এদেরকে তো থানায় দিয়ে শাস্তি দেয়া সম্ভব না। এরা তো বুদ্ধিবৃত্তিক চোর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, কারো কবিতা বা লেখা চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করা একটা বিশাল অপরাধ। এজন্য অনেক প্রকাশকও দায়ী। টাকা হলেই বই প্রকাশ করা যায়, তাইতো এমন ঘটনা ঘটছে। আর যারা এসব কাজ করছে তাদেরকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করা উচিৎ।
প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু বলেন, এই কবিতা চুরির ঘটনাটা আমি কিছুটা জানি। তখন বেশ হৈ চৈ হয়েছিল। আসলে এটাতো একজন মানুষের সন্তান চুরির মতো অপরাধ। একজন লেখক যখন একটি কবিতা, গল্প বা ছবি আঁকে সেটাতো সে তার সন্তানের মতো করে তৈরি করে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, কবিতা বা লেখা চুরির বিষয়টি আমরা প্রায়ই শুনতে পাচ্ছি। আসলে বই প্রকাশ হওয়ার আগে তো আমরা এগুলো বুঝতে পারি না। এগুলো দেখার দায়িত্ব আসলে প্রকাশনাগুলোর। তবে আমরাও বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি।
হাজার হাজার বই প্রকাশ হলেও মানসম্মত বই খুবই কম প্রকাশ হচ্ছে কেন? এ বিষয়ে জানাতে চাইলে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, এখন অনেক প্রকাশনীরই সম্পাদক নেই, প্রুফ রিডার নেই। তারা অনেক টাকা খরচ হয় বলে এগুলো রাখে না। তারা যখন যা পায় সেভাবেই বই প্রকাশ করে। যার ফলে ভালো মানের বই একেবারেই কম।
তিনি আরো বলেন, এখন আমরা নতুন অভিযোগ পাচ্ছি প্রায় সব প্রকাশনীই টাকার বিনিময়ে বই প্রকাশ করছে। যার ফলে লেখক কি লিখলো সেটা আদৌ ছাপার উপযোগী কি না সেটা তারা খেয়াল করে না।
খুব শিগগির এ সকল প্রকাশনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
Posted ৪:১৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta