কক্সবাংলা ডটকম(২০ মার্চ) :: এই দুনিয়ায় হীরের চাইতে দামি কোনো বস্তু না থাকলেও মহাকাশের কথা আলাদা! সেখানে হীরা পানির মতোই সস্তা। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা তেমনটাই বলে থাকেন। কখনও কখনও মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এমন মহাজাগতিক হীরা চলে আসে। যা আদতে মহাকাশের অন্য কোনো নক্ষত্রে কিংবা গ্রহে সৃষ্টি।
বিজ্ঞানীদের দাবি, মহাকাশে এমন অনেক গ্রহ রয়েছে যেখানে পানির মতোই হীরা বৃষ্টি হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, পৃথিবীতে হীরা মূল্যবান হলেও মহাকাশে এটি খুব সাধারণ পদার্থ। প্রচুর পরিমাণে তা ছড়িয়ে রয়েছে। যা উৎপন্ন হচ্ছে প্রচণ্ড তাপ, চাপ আর কার্বনের আধিক্যের কারণে! কেননা হীরা তৈরির জন্য এই উপাদানগুলোই প্রধান। যা মহাকাশে ছড়িয়ে রয়েছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশে এমন গ্রহও আছে যা হীরা দিয়েই তৈরি। যেমন পৃথিবী তৈরি হয়েছে মাটি দিয়ে। সেসব গ্রহের হীরের গঠন, মান আবার একেক রকম। অর্থাৎ বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে হীরার মানের তারতম্য রয়েছে।
অবশ্য সেসব গ্রহের উপাদান মূলত গ্যাসীয়। একারণেই গ্রহগুলোয় হীরা সহজেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। যেমন শনি এবং বৃহস্পতি গ্রহে গ্যাসীয় উপাদান বেশি থাকায় হীরার পরিমাণ বেশি।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহেও প্রচুর পরিমাণে হীরা বৃষ্টি হয়ে থাকে। কেননা সেখানকার বায়মণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে মিথেন রয়েছে। যা বজ্রপাতের কারণে হাইড্রোজেন ও কার্বনে রূপান্তরিত হয়। পরে এই উপাদান দু’টি প্রচণ্ড তাপ ও চাপের কারণে দ্রবীভূত হয়ে হীরায় পরিণত হয়।
হীরায় রূপান্তরিত হওয়ায় সেগুলো বৃষ্টির মতো গ্রহগুলোর মাটিতে ঝড়ে পড়ে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে এমন হীরা উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি হীরা বৃষ্টিও নামাতে সফল হয়েছেন তারা।
অবশ্য মহাকাশে হীরা উৎপন্নের বিষয়টি নতুন নয়। অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক হীরার সন্ধান পেয়েছিলেন। অবশ্য সেগুলোর আকার পৃথিবীর আকারের তুলনায় খুবই ছোট। সেসব গ্রহাণুর মধ্যে পাওয়া হীরায় মাত্র ৩ ভাগ কার্বনের দেখা পান বিজ্ঞানীরা। যা আদতে ন্যানো ডায়মন্ডে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, হীরার আধিক্য রয়েছে এমন গ্রহে উল্কাপাতের কারণে সেগুলো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় কোনো কোনোটির আকার থাকে প্রকাণ্ড। অবশ্য পৃথিবীর মতো গ্রহের বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে সেগুলো জ্বলে ক্ষয় হয়ে অত্যন্ত ছোট আকার ধারণ করে। কিন্তু গঠনগত উপাদান একই থাকে।
পৃথিবীতে এমনই একটি উল্কাপাতের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা রাজ্যের পাওয়া সেই উল্কার ভেতরে ক্ষুদ্রাকৃতির হীরার সন্ধান পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেবার গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, সম্ভবত কোনো কার্বন সমৃদ্ধ তারকা থেকে ছিটকে সেই গ্রহাণু মহাকাশে ভেসে পৃথিবীতে চলে এসেছিল।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মহাকাশে সাদা বর্ণের হীরক সমৃদ্ধ একটি তারকার সন্ধান পেয়েছেন। পৃথিবী থেকে প্রায় ৯শ’ আলোকবর্ষ দূরের ওই মৃত নক্ষত্রটি কার্বন এবং অক্সিজেন দিয়ে তৈরি বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। যেটির তাপমাত্রা ২ হাজার ৭শ’ সেলসিয়াস বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এবং সেটি ঠাণ্ডা হতে নাকি ১১শ’ কোটি বছর লেগেছে।
ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার কারণে সেই মৃত নক্ষত্রটি মহাকাশে বিশাল আকারের হীরার টুকরোয় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও ৪ হাজার আলোকবর্ষ দূরে এমন আরও একটি উত্তপ্ত গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, বৃহস্পতি’র চাইতেও ১০ গুণ ঘন ওই গ্রহে প্রচুর পরিমাণে কার্বন রয়েছে। এবং তা প্রচণ্ড চাপে ও তাপে ঘন হয়ে রয়েছে। তবে সেটি ঠাণ্ডা হলে আরও চাপের কারণে হীরায় পরিণত হবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
একারণেই পৃথিবীতে হীরা দুষ্পাপ্য হলেও মহাকাশে তা একদমই নয়। পুরো মহাকাশেই ছড়িয়ে রয়েছে তাই রাশি রাশি হীরা।
Posted ১:১৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta