কক্সবাংলা ডটকম :: আপনি কি আজ সন্ধের পরে একটু অন্ধকারে থাকবেন? এবং তখন কি আপনার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকটা খোলা থাকবে? তা হলে আজ আপনি এক অতি বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে পারবেন!
এমন এক বিরল ঘটনা, যা ঘটে কুড়ি-কুড়ি বছরের পরে। আর, এ বারে তা এমন শতাংশে ঘটতে চলেছে, যা সাধারণত ঘটে ৮০০ বা ৪০০ বছর পর পর!
হেঁয়ালি বলে ভাবছেন বিষয়টিকে?
না, এ বিন্দুমাত্র হেঁয়ালি নয়। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টার্মে এই ঘটনাকে বলা হয়– Conjunction। আজ, সোমবার আকাশে এই কনজাঙ্কশন বা সংযোগ হতে চলেছে বৃহস্পতি আর শনি গ্রহের। আজ সূর্যাস্তের পরে দেখা যাবে এই বিরলতম মহাজাগতিক দৃশ্য।
আজ সূর্যাস্ত ৪টে ৫৮ মিনিটে। তখন দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তরেখার কাছাকাছি সৌরজগতের সব চেয়ে বড় দু’টি গ্রহ বৃহস্পতি ও শনি পরস্পরের খুব কাছাকাছি চলে আসবে। তখন দু’টি গ্রহের Angular Separation বা কৌণিক পার্থক্য ০.১ ডিগ্রি বা 6 Arcminutes (আর্কমিনিট) থাকবে। দু’টি গ্রহের এইরকম কাছাকাছি আসার ঘটনাকেই বলে Conjunction বা গ্রহসংযোগ। এই ধরনের ঘটনা গড়ে মোটামুটি ২০ বছর ছাড়া-ছাড়া ঘটে।
১৬২৩ সালের জুলাই মাসের পরে আবার বৃহস্পতি-শনি পরস্পরের এত কাছাকাছি আসছে। আজ সূর্যাস্তের পরে সন্ধের আকাশে দেখা যাবে এই দৃশ্য। মোটামুটি সন্ধে ৬টা থেকে ৬টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এই দু’টি গ্রহকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তরেখার কাছাকাছি দেখার সম্ভাবনা, অবশ্য যদি দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তরেখা তখন দৃশ্যমান হয়। ঢাকার মতো শহরে সাধারণত দিগন্তরেখা দেখার অনেকরকম প্রতিবন্ধকতা থাকে। থাকে উঁচু উঁচু বাড়ির বাধা। থাকে দূষণজনিত বাধা। এবং শহরের সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা থাকে আলো।
প্রচুর আলোয় আলোকিত শহর থেকে কোনও মহাজাগতিক দৃশ্যই স্পষ্ট দেখা সম্ভব নয়। ফলে আজ সন্ধের দিকে যদি আপনি শহর ছেড়ে একটু খোলামেলা জায়গায় পৌঁছতে পারেন, এমন জায়গা যেখান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তরেখা দৃশ্যমান, এবং আপনার চারপাশ বেশ অন্ধকার, তা হলে আপনি খালি চোখেই দেখতে পাবেন শনি-বৃহস্পতির এই ঘনিষ্ঠতা। খালি চোখে দেখা সম্ভব না হলে দূরবিন বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করাও যেতে পারে।
এই ধরনের সংযোগ সাধারণত কুড়ি বছর পরপর ঘটে থাকে। সেই হিসাবে শেষ শনি-বৃহস্পতি গ্রহসংযোগ ঘটেছিল ২০০০ সালের মে মাসে। আজকের পরে তা আবার ঘটবে ২০৪০ সালের নভেম্বর মাসে, ২০৬০ সালের এপ্রিল মাসে, ২০৮০ সালের মার্চ মাসে। এর মধ্যে ২০৮০ সালের সংযোগটি হবে সব চেয়ে কম দূরত্বের, মানে এ বারের মতো ওই বছরেও শনি-বৃহস্পতি আবার পরস্পরের অত্যন্ত কাছাকাছি আসবে। তবে, দুই গ্রহের এই কাছাকাছি আসার শতাংশের ওপর নির্ভর করেই সাধারণত সেটা কত বছর পর-পর ঘটে, সেই হিসাবটা করা হয়। ২০ বছর পর-পর ঘটলেও ঘনিষ্ঠতার দিক দিয়ে দেখতে গেলে এ বারে যেমন কৌণিক পার্থক্যে আসছে দু’টি গ্রহ, তা আগে এসেছে ৪০০ বা ৮০০ বছর আগে।
এ বারের এই গ্রহসংযোগের যা সময় (সন্ধে ৬টা থেকে ৬টা ৪৫ মিনিট) তার নিরিখে সাধারণত উত্তর গোলার্ধের বিষুবরেখা-অঞ্চলের সন্নিকটস্থ এলাকা থেকেই এই সংযোগ ভালো দেখা যাবে।
Posted ৪:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta