কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জুলাই) :: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ। তিনি মহাসচিব থাকতে চান না। এটি জানিয়েছেন এক বছর আগে। কিন্তু তারপরেও তিনি এখন মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল দাবিদার বিএনপি`র অবস্থা এখন এরকমই। মহাসচিব হতে রাজি নয় বিএনপির কোন নেতাই। তার কারণ একাধিক। তবে এই মুহূর্তে বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট যে তীব্র হয়েছে তার আরেকটি প্রমাণ মহাসচিব হতে রাজি নন বিএনপি`র কোন নেতাই। সাধারণত বড় দলগুলোকে বড় পদ পেতে প্রতিযোগিতা হয়, দৌড়ঝাঁপ হয় এবং আগ্রহী থাকেন অনেকে। অনেকেরই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়।
তারা দলের দ্বিতীয় প্রধানের পদটি গ্রহণ করেন। কিন্তু বিএনপি`র ক্ষেত্রে এখন পরিস্থিতি হয়েছে উল্টা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন রাজনীতিতে থেকেও নেই। কোনো রকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অংশগ্রহণ করছেন না কোন এক রহস্যময় কারণে। লন্ডনে পলাতক বিএনপি`র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া রাজনীতিতে যতটা মনোযোগী তার চেয়ে বেশি মনযোগী অর্থ আদায়ের জন্য। আর এর প্রেক্ষিতে দলের এখন মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনের পর তাকে মহাসচিব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছিল বিএনপির তৃণমূল থেকে। এমনকি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও ২০১৮ নির্বাচনের ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে ফখরুলকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সহ একাধিক নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিকল্প নেতৃত্বের দাবি তুলেছিলেন।
কিন্তু এ সমস্ত দাবিতে কর্ণপাত করেননি বিএনপির মূল নীতি নির্ধারক তারেক জিয়া। আর সেকারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বহাল ছিলেন সেসময়। কিন্তু দলের মহাসচিব হলেও দলের ভেতরে তাকে নিয়ে আস্থার সংকট রয়েছে। দলের সিনিয়র নেতারা যেমন তাকে মানতে রাজি নন তেমনি তৃণমূলের মধ্যেও তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলামের একমাত্র কাজ হলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দেওয়া। সারাদেশে যে সাংগঠনিক তৎপরতা, কমিটি গঠন এবং দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা ইত্যাদি কোন বিষয়ে সাফল্য দেখাতে পারেননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর এই পরিস্থিতিতে বিএনপিতে এক ধরনের সাংগঠনিক নৈরাজ্য চলছে। বিএনপির নেতারা বলেন যে, দলের তৃণমূলের যে বিভিন্ন কমিটিগুলো গঠন হচ্ছে তা এক ধরনের ওহীর মাধ্যমে গঠিত হচ্ছে। লন্ডন থেকে যে তালিকা আসছে সে তালিকা দিয়ে কমিটি গঠিত হচ্ছে।
অথচ সব সময় তৃণমূলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন দলের মহাসচিব। এখন আর সে অবস্থা নেই। মহাসচিব জানেনও না কোথায় কোন কমিটি হচ্ছে। এমনকি অনেক কমিটির নেতৃবৃন্দকে মহাসচিব হয়তো কোনদিন দেখেনও নি। এরকম অবস্থায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেও কিছুটা হতাশ এবং এই হতাশা থেকে তিনি দলের মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চান।
দীর্ঘদিন থেকে হার্টের অসুখ সহ নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখন তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চান। বিএনপির নেতারা বলছেন যে, ক্ষমতাহীন এরকম মহাসচিব বিএনপিতে আগে কখনো ছিল না। আর ক্ষমতাহীন থাকার কারণে হয়তো তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। আর মহাসচিব থাকতেও তিনি আগ্রহী নন। কিন্তু তিনি আগ্রহী না হলে কি হবে, বিএনপিতে এখন মহাসচিব হওয়ার ক্ষেত্রে কেউই আগ্রহী নন।
কারণ তারা মনে করছেন যে, মহাসচিবের কোনো ক্ষমতা নেই।বিএনপির মহাসচিব মানে হল এখন তারেক জিয়ার পিএস। তারেক জিয়া যা বলবেন সেটি প্রতিপালন করা। বিএনপিতে মহাসচিব হওয়ার মত যোগ্য নেতার অভাব নেই বলে মনে করেন বিএনপি`র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এমনকি রুহুল কবির রিজভীর মত নেতারাও মহাসচিব হতে পারেন। কিন্তু এই মুহূর্তে মহাসচিব নিতে কেউই আগ্রহী নন। আর সে কারণেই বিএনপিতে এখন নেতৃত্বের সংকট চরমে উঠেছে বলেই মনে করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
Posted ১০:২৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta