সরওয়ার কামাল,মহেশখালী :: মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের বড় কুলাল ও ছোট কুলাল পাড়া গ্রামটি এক সময় মৃৎশিল্প গ্রাম হিসেবে সবার পরিচিত ছিল। আদিকাল থেকে এই দু”গ্রামে অন্তত শতাধিক লোকজন মৃৎশিল্প তৈরি করে বাজারে বেচা-কেনা করত।
তখনকার লোকজন বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করত এই মৃৎশিল্পের বিভিন্ন পন্য। কিন্তু আধুনিকতার ছোয়াঁয় আদিকালের মৃৎশিল্পটি এখন বিলুপ্তের দ্বার প্রান্তে।
জানা গেছে, অত্র এলাকা দ্বয়ের বেশিরভাগ লোকজন মৃৎশিল্পের উপর নির্ভরশীল। দারিদ্রতা ও আর্থিক সহযোগিতার অভাবে শিল্পটি আজ ধ্বংসের পথে। এ কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ওঠানে বসে হাড়ি, পাতিল তৈরি করছে মৃৎশিল্পীরা।
তারা জানান, সমাজে আধুনিকতার ছোয়াঁ লাগার কারণে এ শিল্পটি আজ ধ্বংসের পথে। কারণ এক সময় এ মৃৎশিল্পের পণ্য সামগ্রীর গ্রামে-গঞ্জে বেশ চাহিদা ছিল। এখন এ শিল্পের তেমন আর চাহিদা নেই বললেই চলে। ফলে এ পেশায় থেকে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা ।
বেশ কয়েকজন মৃৎশিল্পী বলেন, সকল মানুষের কাছে ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতীক মৃৎশিল্পটি। সময়ের যাত্রাকালে পিষ্ট হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। তদাস্থলে আধুনিক সরঞ্জামসহ প্ল¬াস্টিক, স্টিল ও মেলামাইন সামগ্রীর ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে।
মৃৎশিল্পের সাথে জড়িতরা জানিয়েছেন শত শত বছর ধরে নানান প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে আমাদের কুমার সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় এ শিল্পকে আজও টিকিয়ে রেখেছেন।
এক সময় সর্বসাধারণের ভাত খাওয়ার জন্য প্লে¬ট, রান্না করার হাঁড়ি ও গৃহস্থলির নানা কাজে ব্যবহার হত মৃৎশিল্প। এমন কি রাজা মহারাজারা ও ব্যবহার করত এ শিল্প। বিভিন্ন ধরণের সৌখিন সামগ্রী হিসেবে তাদের গৃহে শোভা পেত মাটির তৈরি মনোমুগ্ধকর শিল্পটি। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়া লেগে তার স্থলে প্ল¬াস্টিক সামগ্রী সহজলভ্যতা ও ব্যবহার এতটাই সুবিধাজনক।, মৃৎশিল্প ব্যবহার সবাই ছেড়ে দিচ্ছে। বর্তমানে প্ল¬াস্টিক, সিরামিকের প্রতিযোগিতার বাজারে মৃৎশিল্পটি হার মানতে বসেছে।
প্রায় ২০ বছর আগে মাটির তৈরি থালা-বাসন, হাঁড়িসহ নানান সামগ্রী ব্যবহার করত এখানকার লোকজন। কিন্তু সেখানে আজ হাতেগোনা কয়েকটি সৌখিন শিল্পকর্ম গৃহে শোভা পাচ্ছে। মৃৎশিল্পীরা বলেন, কয়েক বছর পূর্বে দুইশ লোকজন মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন ২০/৩০ জন লোকজন জড়িত রয়েছে।
মৃৎশিল্পরা সরকারী ও বেসরকারী সেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলেই এই মৃৎশিল্পটি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হত বলে জানিয়েছেন। সৌখীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পের ব্যবহার অপরিহার্য মনে করেন শিল্পিরা।
Posted ৭:২১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta