কক্সবাংলা ডটকম(৭ এপ্রিল) :: সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানি। সাজ্জাদানশীন ও মোন্তাজেম, দরবারে গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারি, মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। এ ছাড়া পার্লামেন্ট অফ ওয়ার্ল্ড সুফিজ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি।
শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী মাইজভাণ্ডার দরবারের এ গদিনশিন সামাজিক ও জনবান্ধব কাজে বেশ জনপ্রিয়। পির-মুরিদির প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে কিছুটা নতুনত্ব লক্ষ করা যায় তার কর্মকাণ্ডে।
মাইজভাণ্ডার দরবারের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে তার মুখোমুখি হয়েছেন- তানজিল আমির
প্রশ্ন: মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠা, উদ্দেশ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই। মাইজভাণ্ডার দরবারের যাত্রা শুরু হলো কীভাবে?
সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি : মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানায় একটি আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান। মূলত মাইজভাণ্ডার একটি প্রাচীন গ্রামের নাম। মাইজভাণ্ডার গ্রামে মগ, চাকমারা নিজেদের ধনভাণ্ডার, খাদ্যশস্য ও রসদের একটি ভাণ্ডার তৈরি করে এবং সেখানে তারা তা জমিয়ে রাখত অনেক প্রাচীনকাল থেকেই। তো সেখান থেকেই মাইজভাণ্ডার নামকরণ। এ এলাকায় কয়েকজন আল্লাহর ওলির আগমন ঘটে। যাদের পূর্বপুরুষ বাগদাদ থেকে এসেছেন।
১৫৭১ সালে আব্দুল কাদের জিলানির বংশধর সৈয়দ হামিদুদ্দিন আল কাদেরি গৌরী তিনি সে সময় বাগদাদে বিচারক ছিলেন। বাংলাদেশের তখনকার সুলতান তাকে গৌরে নিয়ে আসেন বিচারের কাজ করার জন্য। সে থেকেই তারা এ দেশেই রয়ে গেছেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামে চলে যান। আমাদের পূর্বপুরুষরা চট্টগ্রামে ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন। এ ধারাবাহিকতায় মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফে আমাদের পূর্বপুরুষরা অবস্থান করেন।
সৈয়দ আহমাদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা সমাপন করে সে সময় ওকালতির পড়াশোনা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও মুহাদ্দিস হিসাবে আত্মনিয়োগ করেন এবং যশোরে তাকে সরকার কর্তৃক বিচারবিভাগীয় কাজে নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর তিনি সেখানে পাঁচ বছর সম্মানের সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করে আবারও চট্টগ্রামে ফিরে আসেন ও আধ্যাত্মিকতার এক নতুন ধারার সূচনা করেন।
প্রশ্ন : মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের মাধ্যমে ২০০ বছরের মতো এ দেশে ইসলামের কাজ চলছে, তো এই দীর্ঘ সময়ে মাইজভাণ্ডার দরবারের উল্লেখযোগ্য অবদান কী কী?
সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি : সৈয়দ আহমাদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারি চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে ইসলামের বাণী পৌঁছাতে শুরু করেন। বাংলার মাটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আইন প্রয়োগের সুষম বণ্টনে তার অনেক অবদান রয়েছে। তখন থেকেই এ জায়গাটি একটি আধ্যাত্মিকতার জায়গা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব ধর্মের মানুষ এখানে আসত। নিজেদের আত্মার শান্তি ও তৃপ্ত হৃদয় নিয়েই তারা আসা যাওয়া করত।
আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর অনুগ্রহশীল বান্দা তাদের কাছেই আল্লাহর রহমত রয়েছে। আউলিয়া কেরামের দরবারই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আসার উৎস। এ দরবারে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এসে নিজেদের আত্মার প্রশান্তি পেত। পাশাপাশি তারা ইসলামের আলো ও কালেমার দাওয়াতে আলোকিত হয়েছেন। মূল কথা হচ্ছে খারাপ মানুষদের ভালো করাই আল্লাহওয়ালাদের কাজ। সেই চর্চাই মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফে অব্যাহত রয়েছে। আমার পিতা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ এ দরবারের কার্যক্রমকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চালু করেছেন।
জাতিসংঘ থেকে ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিকভাবে যেসব সংস্থা আছে সেখানে দেশ ও ইসলামের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সেখানে ইসলামের পক্ষে ও মদিনার সনদের আলোকে কথা বলেছেন। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়াস পিস প্রোগ্রাম যা জাতিসংঘের সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানে তিনি গিয়েছেন। সর্বদা তিনি ইসলামের পক্ষে ও মানবতার পক্ষে কাজ করে গেছেন। আমিও সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
আমরা চেষ্টা করি মানুষকে আলোকিত করার। কারণ একজনকে আলোকিত করলে তার মাধ্যমে ১০০ মানুষ আলোকিত হবে। এ ১০০ মানুষের সঙ্গে যারা সম্পর্ক রাখবে তারাও আলোকিত হবে। এভাবে হাজার হাজার মানুষ আলোকিত হবে।
সুফিবাদের মাধ্যমে ইসলামকে ছড়িয়ে দেওয়াই মাইজভাণ্ডার শরিফের মূল উদ্দেশ্য। সুফিজমই হচ্ছে আসল ইসলাম যারা মানুষের ক্ষতি করে না। সব সময়ই কল্যাণ চিন্তা করে। কারণ ইসলাম হচ্ছে শান্তি, কল্যাণ ও সম্প্রীতির ধর্ম। সে ধারাতেই মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ যুগ যুগ ধরে পরিচালিত হচ্ছে।
এ দরবার সব সময়ই মজলুমের পক্ষে ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এ বাংলার মানুষের পাশেই ছিল মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ। বাংলার মানুষের গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে দরবারের অনুষ্ঠানের যে সূচি আছে তা বাংলা তারিখ প্রাধান্য দিয়ে বানানো হয়েছে। এর মাধ্যমেই বাংলাভাষার স্বীকৃতিকে আরও প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে পির-মুরিদিকেন্দ্রিক যেসব রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তাদের মুরিদরা পির হিসাবে যতটা গ্রহণ করে নেতা হিসাবে ততটা নয়, ভোটের ক্ষেত্রেও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আপনিও কি তাই মনে করেন?
সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি : সব দল যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তখন আসলে ভোটের চিত্র অন্যরকম হবে। সে হিসাবে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। এর কারণ একটিই, জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার অভাব। ওয়াজ নসিহতভিত্তিক বা পিরমুরিদিভিত্তিক, মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যেসব কার্যক্রম তারা ধরে রেখেছে সে হিসাবে জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের খুব একটা বেশি দেখা যায়নি।
আমরা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির পক্ষ থেকে সেই পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। আমরা চাই সবাই যেন এভাবেই নিজেদের পরিবর্তন করে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হবে মানুষের সেবা। রাজনীতি করলে যেন মানুষের জন্য করা হয় নিজের জন্য না করা হয়।
Posted ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta