এইসব জাঙ্ক কলগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। ফোন তুলিই না, ম্যাসেজ দিয়ে যায় জোচ্চরের দল, দিক – ক্ষতি নেই । তারপরে টের পেলাম আসল হ্যাপা। কেউ আমার আই আর এস একাউন্ট হ্যাক করে আমার নামে অগ্রিম ট্যাক্স ফাইল করে রিটার্ণ দাবী করে বসে আছে। কি মুশকিল। এই নিয়ে কদিন খুব চাপ গেলো। খুব ছোটাছুটি, খুব মনের চাপ।
তারপর কদিন পরেই আমার বাবাটা চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে হুট করেই – মন খারাপের এই তুমুল সময়ে কিছু স্বজনও ফিরিয়ে নিলো মুখ। বিপদ যখন আসে – সার বেঁধেই কি আসে! গতকাল একটা ক্রেডিট একাউন্ট থেকে রিপোর্ট পেলাম আমার কার্ড ব্যবহার করে কেউ ৪৫০ ডলারের ক্রিসমাস শপিং করেছে আমাজন থেকে অনলাইনে । টানা চারঘন্টা ক্রেডিট কোম্পানীর সাথে, -আমাজনের সাথে যুদ্ধ করতে হলো। এরপরেও কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে!
আর কোন্ কোন্ কার্ড হ্যাক হয়েছে তাও বা কে জানে। ক্রেডিট ব্যুরোকে জানানো হয়েছে, তারপরও কি নিস্তার আছে? আগে ছিলো ক্যাশ দিয়ে বাজার করা, এখন আর বাজারে যাবার দরকার নেই, সবই অনলাইনে বাজার । এমনকি চাল ডাল পর্যন্ত । অর্ডার দাও আর বাড়ির দোরগোড়ায় এসে ডেলিভারী দিয়ে গেলো কয়েকঘন্টা পরেই । তারপর সে টাকা শোধ করো একমাস পরে । কি মজা! সেই মজারই উসুল তুলছে এখন এই সকল সঙ্ঘবদ্ধ জোচ্চরের দল।
গভীর বেদনার কথা হলো এই যে, সম্প্রতি যে দুইটি সঙ্ঘবদ্ধ দলকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বমাল হাতেনাতে ধরেছে এই সকল দুষ্কর্মের জন্যে, তারা সকলেই ভারতীয়, বাংলাদেশী, পাকিস্তানী, সিরিয়ান বা মিশরীয় । মানে এশীয় বংশোদভূত ! কি লজ্জার কথা! এই বিদেশেও আর মান সম্মান বলে কিছু থাকল না !
আমাদের বাপ ঠাকুরদার আমলে এইসব হ্যাপাগুলো তাঁদের নিতে হয়নি। তাঁদের জীবন ছিলো সরল জীবন। আধুনিকতার হ্যাপা যে কম নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, আর একটা অলীক আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি – আবার না কোন্ নতুন যন্ত্রণা কোথায় শুরু হয়। কতরকমের জোচ্চরে যে ভরে গেছে সারাপৃথিবী তার কোন ইয়ত্তা নেই । এখন কিছুই যেন মানুষকে তেমন দোলাতে পারে না খুব, সে যেমনই অঘটন হবে হোক, এ যেন খুব গা- সওয়া ব্যাপার, ভাবটা এমন যে, এ আর এমন কি।
ক’বছর আগে এই নিউইয়র্ক থেকেই বেশ কিছু বাংলাদেশীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রিয়েল এস্টেট ও আই আর এস ফ্রড করার জন্যে। অপরাধের বীজ রক্তে লুকিয়ে থাকে, সুযোগ পেলেই মাথা তুলে ছোবল মারে সাপের মত। অন্যের ক্ষতি করে নিজের লাভের চিন্তায় মশগুল মুখোশ পড়া মানুষ যে কে আশেপাশে চেনার উপায় তো নেই । কার কোন ফাঁদে কে যে বিপদে পড়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই ।
মুখোশ খুলে, মুখোশের নীচের মানুষের মুখটাকে সূর্য্যের আলোয় একটু শুদ্ধ করে নিতে কে বলতে পারে এইসব মুখোশধারী জোচ্চরদের, যদি না তাদের বিবেক জাগ্রত হয়! কতভাবে অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা এইসব অপরাধের বীজ পুষে রাখা মুখোশধারীদের – তার কোন সীমা পরিসীমা নেই । কখনও রাজনীতির ছত্রছায়ায়, কখনো ধর্মের লেবাসে, কতভাবে অন্যের অকারণ ক্ষতি করছে এই মুখোশধারীগুলো – কে ঠেকাবে তাদের, যদি না নিজের বিবেক তাদেরকে না ঠেকায় !
নিউইয়র্ক,যুক্তরাস্ট্র
Posted ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta