কক্সবাংলা ডটকম(৯ এপ্রিল) :: ব্রিটিশ সরকার করোনাভাইরাস মোকাবিলা ও সংক্রমণ রোধ করতে ২২ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন জারি করেছে। এই আপদকালীন সময়ে দেশের জনগণের জন্য বড় অংকের তহবিলও ঘোষণা করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক লাখ বাংলাদেশিসহ দেশটিতে বসবাসরত ১০ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীর ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং এই আপদকালীন সময়ে তাদের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারেও কিছু বলেনি।
এতে করে এসব অবৈধ অভিবাসীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভুক্ত না থাকায় আছেন দুশ্চিন্তায়। আর কাজ করতে না পারায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ হাজার ১১১ জন ব্রিটিশ নাগরিক। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬১ হাজার ৪৮৭ জন।
করোনা মহামারির কারণে ইউরোপের দেশ পর্তুগাল অবৈধ অভিবাসীদের চিকিৎসা সেবা ও জীবন যাপনের জন্য জনগনের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ঘোষনা দিয়েছে। গত কয়েক বছর থেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ প্রায় ৪০টি মানবাধিকার সংগঠন যুক্তরাজ্যর অবৈধ অভিবাসীদের নিয়মিত করার আহবান জানিয়ে আসলেও সরকার বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী বিষয়টি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছেন। কিন্তু সরকার থেকে এখনও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
লন্ডনের ইমিগ্রেশন আইনজীবি ও কমিউনিটি নেতা সলিসিটর বিপ্লব কুমার পোদ্দার বৃহস্পতিবার বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রিটেনে বসবাসের কাগজপত্রবিহীন অবস্থায় যারা বসবাস করছেন তারা সীমাহীন শংকায় দিন কাটাচ্ছেন। অবৈধ অভিবাসীদের বেশিরভাগই রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। করোনাভাইরাস জনিত সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। রেস্টুরেন্টের পেছনে বা উপরের তলায় সাধারণত কর্মীরা থাকতেন। লকডাউনের কারণে অনেকে থাকার জায়গাটুকুও হারিয়েছেন।
বিপ্লব কুমার আরও বলেন, ধারণা করা হয় যুক্তরাজ্যে প্রায় লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্তোরাঁয় কাজ করে থাকেন। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় সরকারের লকডাউন ঘোষণায় এসব শ্রমিকরা চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এদের না আছে টাকা, না আছে থাকার জায়গা।
যুক্তরাজ্যে রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ও অভৈধ অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি আবু তাহের আজিজ। তিনি বলেন, বৈধ কাগজপত্রবিহীন অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। এগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থাকার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে এসব মানুষ এখন পথে পথে ঘুরছেন।
যুক্তরাজ্যব্যাপী হাজারখানেক কমিউনিটি সংগঠন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসছে না এসব অবৈধ অভিবাসীদের সহযোগিতায়।
ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের ট্রেজারার সাংবাদিক সাইদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, এই আপদকালীন সময়ে যুক্তরাজ্যে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি আবেদন জমা দিয়েছি। এই পিটিশনে ১০ হাজার লোক সাক্ষর করলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তা আমলে নেবে। আর এক লাখ লোক স্বাক্ষর করলে তা পার্লামেন্টের আলোচ্যসূচীতে আসবে।
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতা গ্রহণের পরই ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরত প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়টি দ্রুত বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ব্রিটেনে বসবাস করছেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাদের বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
তখন অনেকে ধারণা করেছিলেন, নতুন জনশক্তি আমদানি না করে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতা দিলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। ব্রিটিশ অর্থনীতির মুল ধারায় যুক্ত করে এদের কাছ থেকে কর আদায় করতে পারবে সরকার।
এ ব্যাপারে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ বলেন, বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা এখন ব্রিটেনে সীমহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশেষত করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ব্রিটেনে এসব মানুষ যাতে চিকিৎসাসহ মৌলিক সেবাগুলো পায় তা এখন মানবিক দাবি।
ব্রিটেনে রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ)-এর সভাপতি এম এ মুনিম বলেন, ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশিদের বৈধতার দাবি বাস্তবায়নে সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
Posted ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta