কক্সবাংলা ডটকম(২৭ ডিসেম্বর) :: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ন্যাটো ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়ে বিভ্রান্তিকর বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
ওয়াশিংটনের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক, এমন কৌশল থেকে দূরে রাখতে ইরান ও রাশিয়ার ওপর অবরোধও আরোপ করেছিল এই প্রশাসন।তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন ইয়েমেন, সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে সামরিকভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বহাল রাখবে বলে মনে হচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র কেবল সৌদি আরবে অস্ত্র সরবরাহ করেই ক্ষান্ত থাকছে না, সিরিয়া পুনর্গঠনে রিয়াদকে উৎসাহিতও করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বদলে সিরিয়া পুনর্গঠনে সৌদি আরবই অর্থ প্রদান করবে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বেশ খুশি করেছে।
সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না বলেই মনে হচ্ছে। একদিকে অর্থনৈতিক চাপ, অন্যদিকে ব্যাপক হতাহতের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এসব দেশে সৈন্য মোতায়েন রাখা কঠিন হয়ে পড়ছিল। এই প্রেক্ষাপটেই আফগানিস্তান থেকে প্রায় সাত হাজার এবং সিরিয়া থেকে দুই হাজার সৈন্য প্রত্যহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজের প্রভাব বাড়ানো ও চীনা প্রভাব হ্রাস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই লক্ষেই এশিয়া-প্যাফিফিক কৌশলকে বলা হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল। এতে ভারতকে এই অঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসা হয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রযুক্তি, জ্বালানি, অবকাঠামো খাতে ১১৩ মিলিয়ন ডলার প্রদানের ঘোষণা করেন জুলাই মাসে। এছাড়া নতুন নিরাপত্তা তহবিলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করেন।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ জুলাইতে বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বে প্রবেশ করছে।
তবে ওয়াশিংটনের মনে হয়েছে, চীনকে সংযত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-ভারত-অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে চার দেশীয় জোট গঠনে মার্কিন কৌশলের প্রতি পুরোপুরি সমর্থন দিচ্ছে না ভারত। অথচ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে বেইজিং যে প্রভাব সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে, তা সংযত রাখারজন্য চার দেশীয় জোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে।
আবার পাকিস্তানের প্রতিও খুব বেশি আস্থা রাখতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানের ব্যাপারে পাকিস্তান কতটুকু সহায়তা করতে পারবে তা নিয়ে সংশয়মুক্ত হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে কোরিয়া উপদ্বীপকে পরমাণুমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ার। এই লক্ষ্যেই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার ধ্বংসের ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার রাশিয়ার সাথে করা ঐতিহাসিক ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়া ও চীনকে নিয়ে বৃহত্তর চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
মনে রাখতে হবে যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি কেবল প্রাকৃতিক সম্পদেই সম্পদশালী নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ ও জ্বালানিতে বিশেষভাবে সম্পদশালী। তাছাড়া এখানেই বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক।
আবার অনেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলটি হবে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির অর্ধেকের স্থান। আর ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলো হবে বিশ্বের শীর্ষ ৫ অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত।
Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta