কক্সবাংলা ডটকম(২১ জুলাই) :: রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে র্যাবের হটলাইনে ১৫১টি অভিযোগ পাওয়ার পর তথ্য নথিভুক্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। র্যাবের হাতে সাহেদের ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণও এসেছে বলে জানা গেছে। পুরনো মামলাগুলোর নথিপত্র থেকে সর্বশেষ অবস্থা জানার চেষ্টা করছেন র্যাবের তদন্ত উইংয়ের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি আইনের আশ্রয় না নেওয়া ভুক্তভোগীদের মামলা করার ক্ষেত্রে সহায়তাও করছেন তাঁরা।
গত সোমবার রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ৭৬ শ্রমিক-কর্মচারীর করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করে মেট্রো রেলের নির্মাণকাজে জড়িত একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাহেদের বিরুদ্ধে ৬৬টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার (যে মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন সাহেদ) তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছ থেকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেড় শ ভুক্তভোগী আমাদের হটলাইনে অভিযোগ করেছেন। আমরা ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পেয়েছি। অভিযোগ যাচাই করে ভুক্তভোগীদের আইনগত সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হটলাইন আরো দুই দিন, অর্থাৎ মোট পাঁচ দিন চালু থাকবে।’
ডিবি ও র্যাবের সূত্র জানায়, সাহেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যসূত্রে অভিযান চালিয়ে জাল টাকা, মাদক, চেক, গাড়িসহ আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিবি অভিযানে গিয়ে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদের ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে কিভাবে তিনি একের পর এক অপকর্ম করেছেন এবং নিজের চরিত্র আড়াল করে ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ বনে গেছেন সেসব তথ্য খতিয়ে দেখছে ডিবি। সাহেদের সঙ্গে মিডিয়ার অনেকের সম্পর্কের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে দুই নারীকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের কারণে তাঁদের দাম্পত্য কলহ তৈরি হয় বলেও তথ্য মিলেছে।
সাহেদের তিন স্ত্রী এবং আরো কয়েকজন বান্ধবীসহ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হচ্ছেন নতুন নতুন ভুক্তভোগী। তাঁরা জানাচ্ছেন হয়রানি ও প্রতারণার দুঃসহ অভিজ্ঞতা। সূত্র জানায়, গত ১৭ জুলাই চালুর পর গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত র্যাবের হটলাইনে ১৫১টি অভিযোগ এসেছে। এই হটলাইনের নম্বর ০১৭৭৭৭২০২১১, ই-মেইল rabhq.invest@gmail.com|
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন কুমার সাহা বলেন, মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ করছে এমন একটি সাবকন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে রেজাউল করীম নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা করেন। বাদী রেজাউল বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে ৭৬ জন শ্রমিকের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন জানা যাচ্ছে তাদের দেওয়া রিপোর্টগুলো ভুয়া ছিল।
গত ৬ জুলাই উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালটির আট কর্মীকে আটক করেন। ওই দিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করে র্যাব। ১৬ জুলাই আদালত সাহেদ ও এমডি মাসুদ পারভেজের ১০ দিন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল পর্যন্ত ডিবির হেফাজতে থাকা এই তিন আসামিকেই র্যাব হেফাজতে নেবে বলে জানা গেছে।
সাহেদের প্রতারণার শিকার শোভন এন্টারপ্রাইজের হুমায়ুন কবির বলেন, রিজেন্টের কেসিএল লিমিটেডে মোটা বালু সরবরাহ করা বাবদ ৩১ লাখ টাকা পাবেন তিনি। ২০১৯ সাল থেকে বালু সরবরাহ করে আসছিলেন তিনি। তাকে দুটি চেক দেওয়া হলেও তা ডিজঅনার হয়েছে। সাহেদ গ্রেপ্তারের পর এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
Posted ২:১৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta