মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত : কোন পক্ষে থাকবো আমরা?

বুধবার, ০৯ মার্চ ২০২২
194 ভিউ
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত : কোন পক্ষে থাকবো আমরা?

কক্সবাংলা ডটকম(৯ মার্চ) :: ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা বিশ্বকে এক নতুন বাস্তবতায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে সেই বিশ্বকে, যারা ‘স্নায়ুযুদ্ধের’ দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছে, যখন পশ্চিম মূলত ব্যস্ত ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্বে, কে কার চেয়ে শ্রেষ্ঠ সেটা প্রমাণ করায়। ভারত উপমহাদেশের কথাই ধরি আমরা। প্রথম মহাযুদ্ধ থেকেই ভারতে ব্রিটিশ রাজ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে এসে যা অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং ব্রিটেনকে আসলে ভারত ছাড়তে হয়। দীর্ঘ দুইশ’ বছরকাল ধরে একটি ভূখণ্ডকে শাসন-শোষণ করে ফিরে যাওয়ার সময়ও সাম্রাজ্যবাদ তার শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করতে ভোলেনি। ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে রেখে যায়। বিস্ময়কর হলো, ভারত ভাগে এ দেশের মানুষের চেয়ে সাম্রাজ্যবাদী শাসককুলের আগ্রহ, উৎসাহ ও অংশগ্রহণ অনেকটাই বেশি ছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মানচিত্র তৈরি থেকে শুরু করে বানরের পিঠা ভাগের মতো সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারায়ও ব্রিটিশ শাসকদের কূটচাল ছিল লক্ষণীয়।

স্নায়ুযুদ্ধের তুঙ্গাবস্থায় যখন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠা নয়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাঙালির পক্ষে ছিল না। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়, এর আগে বা পরে কখনোই দেশে সাম্রাজ্যবাদী/ দখলদারী/ স্বৈরতন্ত্র ইত্যাদি অগণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় এই দুটি দেশ কখনও দ্বিমত পোষণ করেনি, বরং একত্রিত হয়ে কাজ করেছে, বিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে এবং তারপরে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়েও।

হয় তোমরা আমাদের সঙ্গে, নয় তোমরা আমাদের শত্রুপক্ষ– এই স্লোগান নিয়ে নব্বইয়ের দশক থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীময় একচ্ছত্র ‘রাজ’ চলছে। কেউ প্রতিবাদ করার নেই, কেউ প্রতিরোধ করার নেই।

এক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন গোটা বিশ্বকে কখনও গণতন্ত্রের নামে, কখনও পারমাণবিক অস্ত্র দমনের নামে পুরোপুরি দমিয়ে রাখাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তো আছেই, তার সঙ্গে যোগ করুন মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফ-এর মতো প্রতিষ্ঠানসমূহের খবরদারি। কোনও রাষ্ট্রকেই কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে বিস্ময়করভাবে চীন ও ভারত দুটি দেশই উঠে দাঁড়িয়েছি নিজস্ব বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কারণে। উৎপাদন-অর্থনীতির এই সময়কালে সস্তা শ্রমিকের জোগান দেওয়া গেলে তার দুঃখ থাকার কথা নয়– ভারত ও চীনের উন্নয়নের জাদু এখানেই। বাংলাদেশকেও বিশেষজ্ঞরা এই কাতারেই রেখে থাকেন। নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য স্বৈরশাসনের অবসানের সঙ্গে দেশজ বাজার-ব্যবস্থাকে ঘিরে পরিকল্পনা গ্রহণ নিঃসন্দেহে ভালো ফল দিয়েছে। ওদিকে সব চাপ ও বৈষম্যের ভেতরে বসেও রাশিয়া পুতিনের নেতৃত্বে ‘পশ্চিম’ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ক্রমশ আগোয়ান অবস্থাটুকু ধরে রাখতে পেরেছিল। সেটা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল তা সবার জানা থাকলেও সে বিষয়ে দু’কথা না বললে, লেখাটি দাঁড়াবে না।

১৯৯১ সালে যখন নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা ও রক্তপাতের ভেতর দিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাচ্ছিল– তখন একজন ছাত্রী হিসেবে সেখানে লেখাপড়া করার কারণে খুব কাছ থেকে সেই ভাঙন প্রক্রিয়া দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়েছিল। পশ্চিমপন্থী গর্বাচেভ এবং ‘ভদকাপন্থী’ ইয়েলৎসিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভাঙার প্রতি পদক্ষেপে হোয়াইট হাউজের পরামর্শ নিতেন বলে পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত তথ্যাবলি থেকে জানা যায়। কমিউনিজম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনানন্দে পশ্চিম তখন বিভোর। ধনতান্ত্রিক শিবিরে তখন চলছে বিবিধ উদযাপন। রুবল থেকে বেরিয়ে ইউক্রেন প্রথমে যেদিন ‘কার্বনসেভ’ নামে নয়া মুদ্রা চালু করে সেদিন দানিয়েস্ক স্টেইট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক মন্তব্য করেছিলেন, ‘যেকোনও ভাঙনের কুফল অনাগতকাল ধরে মানুষকে বহন করতে হয়, এখানেও তাই-ই হবে’। কথাটি এ কারণেই মনে লেগে আছে যে এই উপমহাদেশ ভাঙনের কুফলও আসলে এ দেশের জনগণকে প্রতি পদে পদে দিতে হয়, হচ্ছে এবং হবে। পরবর্তী সময়ে ‘কার্বনসেভ’ থেকে ইউক্রেন তাদের নিজস্ব মুদ্রা ‘গ্রিভনা’-তে গিয়েছে, ভাঙন আরও দীর্ঘ এবং শঙ্কুল হয়েছে। আর এই ভাঙনের মাঝে ঢুকেছে ‘পশ্চিমা শক্তি’, যারা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের ‘টুল’ ন্যাটোকে সম্প্রসারিত করতে করতে একেবারে রাশিয়ার বুকের ওপর নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে। যদিও ১৯৯১ সালেই কথা ছিল যে ন্যাটোর আর কোনও সম্প্রসারণ ঘটবে না, পৃথিবী থেকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা চিরতরে বন্ধ হবে। কিন্তু সেটাতো হয়নি বরং ১৯৯১ সালের পর থেকেই রাতারাতি ন্যাটোর সদস্য সংখ্যা কেবল বেড়েছে, বাড়তে বাড়তে চারদিকে রাশিয়াকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সোভিয়েত সংঘ ‘ওয়ারশ প্যাক্ট’ না থাকলে মার্কিন সংঘ ‘ন্যাটো’ কেন থাকবে সে প্রশ্ন এখন আর কারও আলোচ্যসূচিতে নেই। স্বভাবতই রুশ জাতীয়তাবাদী চেতনায় আঘাত এসেছে এবং সেই চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের মতো শাসক রাশিয়ায় বছরের পর বছর ‘রাজত্ব’ করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রকৃত গণতন্ত্রকে আটকে দেওয়ার এই পদ্ধতি কিন্তু কেবল রাশিয়ায় নয়, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এশিয়া সর্বত্রই লক্ষমাণ। কোনও দেশকে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সব দিক থেকে যখনই দলবেঁধে কোণঠাসা করা হবে, সেসব দেশে জাতীয়তাবাদী চেতনা দৃঢ়তর হতে বাধ্য।

রুশ প্রেসিডেন্টকে আমরা সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করতে পারি কিন্তু তিনি তার দেশকে বিদেশি শক্তির আক্রমণ ও পশ্চিমা অক্ষশক্তি থেকে রক্ষা করতে যেকোনও পদক্ষেপ নেবেন তাতে রুশ জনগণের ব্যাপক সংখ্যার সমর্থন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। ভুলে গেলে চলবে না যে সোভিয়েত আমল থেকে রুশ জনগণ কেবল পশ্চিমা অক্ষশক্তির বিরূপতাই দেখে এসেছে, রাশিয়ার প্রতি বন্ধুতা কেউ কখনও দেখেনি। এমনকি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদানকে অস্বীকার করার মতো অভদ্রতাও পশ্চিম দেখিয়েছে। যে বিপুল সংখ্যক মানুষ সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হারিয়েছে তার তুলনায় পশ্চিমের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ক্ষতি সামান্যই। তবু সোভিয়েত রাশিয়াকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে বিশ্বকে ‘ডান’ ও ‘বামে’ ভাগ করে যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে কোণঠাসা করা হয়েছে সেই স্মৃতি এত দ্রুত রাশিয়া ভুলে যাবে? প্রশ্নই ওঠে না। ফলে আজকে রুশ সৈন্য যখন ইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাচ্ছে তখন পুতিন বারবার এ কথাটিই তার দেশ ও গোটা বিশ্বকে বোঝাতে চাইছেন যে এটা তিনি চাননি, তাকে বাধ্য করা হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতোই রাশিয়াকে পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে, হচ্ছে।

এ তো আসলে রুশ জনগণ ও রাশিয়ার বিশালত্ব দেশটিকে এখনও টিকিয়ে রাখতে পারছে। জনসংখ্যা কম ও অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় এখনও লড়ে যাচ্ছে রাশিয়া, না হলে তো রাশিয়ার অবস্থা ইরাক কিংবা সিরিয়ার মতো হতো। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে হয়েও যেতে পারে।

ঠিক এই সময় রাশিয়ার পাশে কে আছে আর কে নেই তা নিয়ে নতুন করে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার পাশে তারাই আছে যারা আসলে ‘গণতান্ত্রিক’ নয়। খুব সরলীকরণ এই বিশ্লেষণ। বিশেষ করে সেসব দেশকেই গণতান্ত্রিক বলা হচ্ছে যারা রাশিয়াকে (পড়ুন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে) ক্ষমতায়, অর্থনীতিতে, সামরিক শক্তিতে সব দিক দিয়ে ঘিরে ও চাপে রেখে পৃথিবীতে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে চাইছেন। বলাই বাহুল্য, এর নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তারাই দেশে দেশে ‘গণতন্ত্রের’ সার্টিফিকেট ফেরি করে বেড়াচ্ছেন। তারাই বলছে যে জাতিসংঘে যারা রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং ভোটদানে বিরত থেকেছে তারা ‘গণতান্ত্রিক’ নয়। আত্মরক্ষায় ‘খুনকেও’ আইনি ভাষায় ভিন্নভাবে দেখা হয়, অপরাধের মাত্রা বিচারে এক্ষেত্রে ‘আত্মরক্ষাকে’ বিচার্য বিষয় হিসেবে ধরা হয়। রাশিয়া নিজেকে রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ‘দনবাছ’ ও ‘লুগানস্ক’ নামে দুটি রুশ-অধ্যুষিত প্রদেশকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার যুদ্ধেও নেমেছে, যারা আসলে পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থায় নির্যাতিত বাঙালির মতোই ইউক্রেনের হাতে ‘নিধনের’ শিকার।

পৃথিবীকে ‘শিকার’ ও ‘শিকারি’ হিসেবে পক্ষ-বিপক্ষে বিভক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা শক্তিসমূহ যখন নিজেদের ‘গণতন্ত্রী’ আর বাকিদের ‘গণতন্ত্রের বিপক্ষ’ শক্তি বলে তকমা দেয় তখন ব্যক্তি-মানুষ কোন পক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে সে প্রশ্ন মুখ্য হয়ে ওঠে। ইউক্রেনের সাধারণ জনগণের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা ভেবে তাদের ওপর অন্যায় রুশ-আক্রমণকে নিন্দা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনকে ‘ছলে-বলে-কৌশলে’ কিংবা লোভে-চাপে রুশবিরোধী অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করে আজকের এই যুদ্ধ পরিস্থিতি যারা সৃষ্টি করেছেন, সেসব গণতন্ত্রের ‘বাবা-মা’দের আমরা কোথায় রাখবো, কীভাবে দেখবো সেটাও ভাবতে হবে।

যুদ্ধ হলে কারা অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হয়, অস্ত্রের বাজারে কারা রথী-মহারথী সেটাও বোঝা দরকার। গণতন্ত্রকে দেশে দেশে দুর্বলতর করে রাখার ক্ষেত্রে বিরাট বিরাট গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের দায়কেও অগ্রাহ্য করলে আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতা জানা যাবে না, জানা গেলেও তা হবে অর্ধসত্য, পুরো সত্য নয়।

লেখক-মাসুদা ভাট্টি : এডিটর ইনচার্জ, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি

194 ভিউ

Posted ১১:৪০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৯ মার্চ ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com