কক্সবাংলা ডটকম :: সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বন্ধ হচ্ছে না। তাই হুন্ডি ঠেকাতে রেমিট্যান্সের প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন। পাশাপাশি ডলার ও টাকার বিনিময় হার যুক্তিসংগত করা, বন্ডের বিপরীতে সুবিধা বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে এসব সুপারিশ করেছে হাইকমিশন।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনাকালে হুন্ডির কোনো উপায় না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাধ্য হন প্রবাসীরা। ফলে সে সময় রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়ে যায়। কিন্তু গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ অর্ধেকে নেমে যাওয়ার কারণে আবারও হুন্ডি বেড়েছে।
তাই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে বেশ কিছু সুপারিশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
হাইকমিশনের চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা যুক্তিসংগত। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তির নামে প্রভিডেন্ড ফান্ডের মতো করে ব্যাংক হিসাবে জমা রেখে পরবর্তী সময়ে লভ্যাংশসহ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসীরা উৎসাহিত হবেন।
হাইকমিশনের লেখা চিঠিতে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে (করোনা মহামারি চলাকালীন) প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার; যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশেরও বেশি। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্সপ্রবাহ প্রায় ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়নে নামে। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। হুন্ডি বা অবৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স পাঠানোকে এ পতনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহের অন্যতম উৎস মালয়েশিয়া থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ২ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে ১ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
হাইকমিশনের মতে, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে টাকার দর এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশের কোম্পানির দর ওই দেশের হুন্ডি রেটের সমান বা বেশি হয়। প্রয়োজনে দেশভিত্তিক টাকা ও ডলারের দর নির্ধারণ করা যেতে পারে।
বন্ডের বিপরীতে সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাব, ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এনআইডি বাধ্যতামূলক না রেখে ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের মতো পাসপোর্টের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা। একই সঙ্গে বন্ড ক্রয়ে ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করে লভ্যাংশের হার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে হাইকমিশন।
বর্তমানে একজন প্রবাসী সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রায় ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরতরাও এ বন্ড কিনতে পারেন। বিভিন্ন স্লটে যেমন ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ এবং ৫০ লাখ টাকায়ও কেনা যায়।
দেশের অভ্যন্তরে মোবাইলে টাকা স্থানান্তরে কঠোর নজরদারির পরামর্শ দিয়ে দূতাবাস বলেছে, বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে আসে। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন আরও কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। দৈনিক বা মাসিক লেনদেনের সীমা যতদূর সম্ভব কম রাখা এবং অবৈধ অর্থের বিতরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ফৌজদারি শাস্তির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
এ ছাড়া প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়ার ব্যয় মেটাতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মতো স্বল্পসুদে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করে বৈধ পথে পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে তা পরিশোধের ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত প্রবাসী যাত্রীদের ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার বহন নিরুৎসাহিত করা এবং হুন্ডির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে শাস্তির দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি একটি সরকারি ব্যাংকের রেমিট্যান্স হাউস ও দুটি বেসরকারি ব্যাংকের মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশ দূতাবাসের এসব সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। এই তিন প্রতিষ্ঠানের সুপারিশও দূতাবাসের চিঠিতে সংযুক্ত করা হয়।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেছেন, ‘জনশক্তি রপ্তানিতেও দেশে সুবাতাস বইছে। বিদায়ী ২০২২ সালে আমরা সাড়ে ১১ লাখ লোককে কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। কিন্তু অবৈধ হুন্ডির কারণে সে তুলনায় রেমিট্যান্স বাড়ছে না। প্রণোদনার পরিমাণ ৫ শতাংশ করলে হুন্ডি বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি।’
Posted ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta