কক্সবাংলা ডটকম(২৫ অক্টোবর) :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট কেবল বাংলাদেশে নয়, এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়াই সংকটের একমাত্র সমাধান।
শুক্রবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকু কংগ্রেস সেন্টারে এক সাধারণ আলোচনায় একথা বলেন তিনি। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন-ন্যামের অষ্টাদশ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এখন বাকুতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক সাফল্য সত্ত্বেও বাংলাদেশ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সংকট- এ দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সংকট এবং এর মূল গভীরভাবে মিয়ানমারে প্রোথিত। তাই এর সমাধানও মিয়ানমারের অভ্যন্তরেই খুঁজতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছি। রোহিঙ্গা সংকটে আমাদের দেশ এবং এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করছি।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায় খুবই নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানাতে হবে।
এদিকে শুক্রবার সকালে বাকু কংগ্রেস সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যামের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ তাকে স্বাগত জানান। অন্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদেরও স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট ইলহাম। পরে অতিথিদের নিয়ে ফটোসেশন শেষে শুরু হয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যামের বিদায়ী চেয়ারম্যান ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। এর পর বক্তব্য দেন নতুন চেয়ারম্যান ইলহাম আলিয়েভ।
ইরানের প্রেসিডেন্ট, কিউবার প্রেসিডেন্ট, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জিবুতির প্রেসিডেন্ট, ঘানার প্রেসিডেন্ট, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, ভারতের উপরাষ্ট্রপতি, তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার প্রেসিডেন্সির চেয়ারম্যান, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধন অধিবেশনে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানদের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় তিনি যোগ দেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের দেওয়া নৈশভোজে।
মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক : ন্যাম সম্মেলনের ফাঁকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার দুপুরে বাকুর কংগ্রেস সেন্টারে এ বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের বিচার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বলেন, এ সমস্যা সমাধানে যা প্রয়োজন মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্র তার সবকিছুই করবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে এবং এর বিচার হতে হবে।’ বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, কক্সবাজারে তার দেশ হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং ভাসানচরের যে দ্বীপে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হবে, সে সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান।
শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে দ্বীপটির নিরাপত্তা এবং সুরক্ষাসহ বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বীপটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও তার কাছে ব্যাখ্যা করেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার আরও বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তিনি মালয়েশিয়ায় নিয়োজিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার বিষয়েও কথা বলেন। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ককে অত্যন্ত গভীর আখ্যায়িত করে মাহাথির ভবিষ্যতে বাংলাদেশে তার দেশের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়েও আশ্বাস দেন।
ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক : ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, তেহরান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করে যাব।’
শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট এই আশ্বাস দেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
রুহানি প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইরান রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। রোহিঙ্গা সংকটে ভূমিকার জন্য শেখ হাসিনা ইরানের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদে তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে।
রুহানি দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান আন্তরিকতাপূর্ণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং ইসলামী বিশ্ব একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, যদি নিজেদের মধ্যকার সংঘাতগুলো নিজেরাই মিটিয়ে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
Posted ১:১৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta