কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(১ ফেব্রুয়ারি) :: ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর যাতে কোনো রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে সেই জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, মো. আব্দুল মজিদ খান, নাবিল আহমেদ এবং নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বৈঠকে করোনা এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসিতে’ গৃহীত কার্যক্রম, বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে বিড়ম্বনা এবং তুরস্কে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন আর কোনো রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে, সেজন্য বিজিবিকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে সুপারিশ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষা ও বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন জরুরি। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে যে মানবিকতা ও বদান্যতা দেখিয়েছেন তা বিশ্ববাসীর কাছে একটি উদাহরণ। বিশ্বদরবারে সব মহলে প্রশংসিত হয়ে তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হলে দফায় দফায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় দেন। আয়তনে ক্ষুদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সহায়তায় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকার নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসন জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে তদবির করেছে, যাতে করে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যায়, যার মধ্যে প্রতিবেশী ভারত এবং মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র চীন রয়েছে। কিন্তু কোনো দেশই সেভাবে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এর অন্যতম কারণ হলো, বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থান এবং মিয়ানমারে চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ। গাম্বিয়া ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস (আইসিজে) মামলা করেছে।
বলা অত্যাবশ্যক যে, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। তারা এখন বিশ্বের জন্যও হুমকি। রোহিঙ্গাদের যদি দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া না হয় এ সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন দেশ এই সমস্যা জিইয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব সত্ত্বেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে তাদের ওপর মানসিক নির্যাতন করছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের নিরাপত্তা আজ ঝুঁকিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মিয়ানমার এমন একটি রাষ্ট্র, যার সঙ্গে কোনো ধরনের কূটনৈতিক আলোচনা কখনোই সহজ নয়। মিয়ানমার সবসময়ই সামরিক বাহিনী কর্তৃক প্রভাবিত একটি রাষ্ট্র। তবে দেশটির ভেতরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
বিশেষ করে সামপ্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের বৈরী মনোভাবে পরিবর্তন লক্ষণীয় ও মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সমর্থন মুসলিম রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের বৌদ্ধদের মধ্যে ঐক্যের মেলবন্ধনের ইঙ্গিত বহন করে ও সামপ্রতিককালের সীমান্তে উত্তেজনা বাংলাদেশের জনগণের মনে আরও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। মিয়ানমারের সংলগ্নে অবস্থিত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষের মনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বোধ কাজ করছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর যাতে কোনো রোহিঙ্গা যাতে ঢুকতে না পারে, তার ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনে জোর দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া মিয়ানমার সামরিক সরকারের ওপর বিনিয়োগকারী দেশসমূহের চাপ সৃষ্টি করাও দরকার। বিশেষত ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং ভারতসহ বেশ কিছু দেশের। যদিও সামরিক সরকারকে বয়কট করেছে কয়েকটি দেশ। এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে বাংলাদেশকে।
Posted ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta