মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গা আসার পর কক্সাবাজারে পাহাড় কাটা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে

শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১
250 ভিউ
রোহিঙ্গা আসার পর কক্সাবাজারে পাহাড় কাটা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক :: পাহাড়ধসে গত এক যুগে আড়াই শতাধিক লোকের প্রাণহানি দেখেছে কক্সবাজার। দুই দিন আগে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ ১২ জন একইভাবে মারা গেছে, তার মধ্যে পাঁচটি শিশু রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছে, বর্ষাকালে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও এ সময়েই বেশি পাহাড় কাটা হয়। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পাহাড় কাটার ‘যন্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কক্সবাজার শহর ও শহরতলির পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। অথচ এখনো অনেক এলাকায় নির্বিচার পাহাড় কাটা চলছে। করোনার কারণে জারি করা লকডাউনও পাহাড় কাটার জন্য ‘আশীর্বাদ’ হয়ে এসেছে।

শীত ও বর্ষাকালেই বেশি পাহাড় কাটা হয়। শীতকালে মাটির জন্য পাহাড় কাটা হয়, যা ব্যবহার হয় বিভিন্ন উন্নয়নকাজে। বর্ষাকালে পাহাড় কাটে দখলবাজরা। এ সময় এক কোদাল কাটলে বর্ষণে আরো তিন কোদাল ভেঙে যায়। কাটা মাটি পরিবহন করতে হয় না, বৃষ্টির পানিতে সহজেই চলে যায় নালা-নর্দমায়। এতে করে নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

কক্সবাজারের সচেতন মহলের মতে, ২০১৭ সালে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সাবাজার জেলাজুড়ে পাহাড় কাটার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া-টেকনাফ জুড়ে পাহাড়ি বনভূমিতে লাখ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ৩৪টি শিবির করতে গিয়ে কমপক্ষে ১০ হাজার একর পাহাড়ি ভূমি উজাড় করা হয়। এতে স্থানীয় লোকজনও যুক্তি পেয়ে গেছে। তারা বলছে, রোহিঙ্গাদের জন্য যদি পাহাড় কাটা ‘জায়েজ’ হয়, তাহলে তারা কাটলে দোষ হবে কেন?

এক যুগে আড়াই শতাধিক প্রাণহানি : কক্সবাজারে গত এক যুগে পাহাড়ধসে ছয় সেনা সদস্যসহ আড়াই শতাধিক লোকের প্রাণহানির তথ্য দিয়েছেন কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলসের নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল মজিদ। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, ২০০৮ সালে টেকনাফের ফকিরামুরা ও টুইন্যামুরায় মারা যায় ১৩ জন, ২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে পাঁচজন; ২০১০ সালের ১৫ জুন সবচেয়ে মর্মান্তিক পাহাড়ধসের ঘটনায় মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় ছয়জন সেনা সদস্য প্রাণ হারান। তাঁরা মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। একই বছর পাহাড়ধসে মোট ৬২ জন নিহত হয়। ২০১২ সালে মারা যায় ২৯ জন। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ১৯ জন করে এবং ২০১৬ সালে ১৭ জন মারা যায়। চলতি বছরের গত বুধবার পর্যন্ত একাধিক পাহাড়ধসে ১৫ জন মারা গেছে।

ঝুঁকিপূর্ণ বসতি, তবু পাহাড় কাটা চলছে : কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী, খুরুস্কুল, মহেশখালী, রামু, টেকনাফ ও উখিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতির সংখ্যা গত তিন বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে। জেলা শহর ও শহরতলির পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে। কিন্তু লাইটহাউস, সৈকতপাড়া, সার্কিট হাউসসংলগ্ন এলাকা, মোহাজেরপাড়া, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মধ্যম ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলী, কলাতলী আদর্শগ্রাম, ঝরিঝরিকুয়া, সদর উপজেলা কার্যালয় সংলগ্ন ও লিংক রোড পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় কাটা চলছেই।

রোহিঙ্গারাই পাহাড় কাটার ‘যন্ত্র’ : শহরের একাধিক স্থানে পাহাড় কাটায় নেতৃত্ব দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। তারাই শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। স্থানীয় লোকজন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের দৈনিক মজুরির চুক্তিতে পাহাড় কাটার কাজে লাগায়। জেল-জরিমানাকে স্থানীয় দিনমজুররা বাড়তি ঝামেলা মনে করে পাহাড় কাটার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে আগ্রহী হন না। তাই রোহিঙ্গাদের পাহাড় কাটার কাজে লাগানো হয়। এ ছাড়া স্থানীয় শ্রমিকদের চেয়ে রোহিঙ্গাদের মজুরিও দিতে হয় কম।

এ ছাড়া রোহিঙ্গারা নিজেরাই এখন পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলছে। শহরতলির কয়েকটি এলাকায়ই রোহিঙ্গাদের শতভাগ বসতি হয়ে গেছে। শহরের পাহাড়তলী, সিরাজের ঘোনা, ইসলামপুর, শাহনুরনগর, হালিমাপাড়া, ইসুলুঘোনাসহ বেশ কিছু স্থানে রোহিঙ্গারা বেপরোয়াভাবে পাহাড় কাটছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, ‘বাস্তবে নতুন রোহিঙ্গার চেয়ে পুরনো রোহিঙ্গারাই এ জনপদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরনো রোহিঙ্গারা এখানকার সব কিছু সম্পর্কে জানে বলে তারা সহজেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বেশি জড়ায়।’

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে কক্সবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছরই বিপদ দেখা দিলেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। এরপর কোনো খবর থাকে না।

কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা : কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বসতিসহ পাহাড় দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তোহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ২৫টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের নির্দেশে কক্সবাজার শহর ও পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক বলেন, লকডাউন-পরবর্তী সময়ে জেলাব্যাপী পাহাড় কাটার ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান আহমদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশ বিভাগ, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি গঠনের পর কার্যক্রম ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু কমিটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে নাগরিকরা সমস্যা থেকে রেহাই পায় না।’

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাহাড় দখল ও পাহাড়ে বসবাস ঠেকাতে সমন্বিতভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন তিনি।

তোফায়েল আহমদ,কালের কণ্ঠ

250 ভিউ

Posted ৩:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com