কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(১৪ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শিগগির তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা এর প্রশংসা করি। বিশেষ করে এই অঞ্চল ও এর বাইরে যেকোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা জরুরি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্যারিস পিস ফোরাম ২০২১-এর চতুর্থ সংস্করণে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অস্থিরতা, এক রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) এক নেতার মৃত্যুর পর ক্যাম্পের নিরাপত্তাজনিত সমস্যাগুলো সামনে এসেছে।
মাদক ব্যবসা, অস্ত্র পাচার, মানব পাচার এবং সহিংসতার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, যা এখন ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, এগুলো বন্ধ করা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারে নৃশংস সামরিক দমন-পীড়নের কারণে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ একটি বড় আঞ্চলিক সংকট এড়াতে সাহায্য করেছে। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়া সরকারের পক্ষে সহজ কাজ ছিল না।
তবুও আমরা উদারভাবে আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছি। আমরা আর্থিকভাবে, পরিবেশগত দিক থেকে এবং নিরাপত্তা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও এই বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে যেন নিরাপদ জীবন পেতে পারে সেজন্য সরকার কঠোর পরিশ্রম করছে।
২০১৭ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন চুক্তি সই করার পর ৪ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য কিছু করেনি এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতাও দুঃখজনক।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছে। দুঃখের বিষয় হলো, মিয়ানমার সরকার এখনো সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি।
ইতোমধ্যে ক্যাম্প এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধ্বসের ঝুঁকি, মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং কক্সবাজারে উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ, সেইসঙ্গে কক্সবাজার শরণার্থী শিবির এলাকায় পরিবেশগত অবক্ষয় মোকাবিলা করতে সরকার রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসান চরে স্থানান্তরের জন্য আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা তৈরি করেছে। যদিও আমাদের সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চলেছে, কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা অত্যন্ত হতাশাজনক।
আমরা আশা করি বিশ্ব নেতারা শুধু এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসাই করবেন না, সমগ্র অঞ্চলের স্বার্থে আর দেরি না করে মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য জোরদার ভূমিকা পালন করবেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে নিজেদের জনগণকে ফিরিয়ে না নিলে ‘সংকট থেকে তৈরি নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু আমাদের সীমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না’।
আমরা আশা করি বিশ্ব নেতারা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।
Posted ১২:১৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta