কক্সবাংলা রিপোর্ট(৬ ফেব্রুয়ারি) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে কক্সবাজার সফরে আসা সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বারসেট বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরো বলেন,‘এটা খুবই জরুরি যে,এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে হতে হবে এবং রোহিঙ্গাদেরকে পূর্ণ মর্যাদার সাথে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশকে সকল প্রকার সহযোগীতা করবে সুইজারল্যান্ড সরকার।
এসময় তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াঁনোয় বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সি প্রশংসা করে বলেন,রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে একত্রে কাজ করবে সুইজারল্যান্ড।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুইজারল্যান্ড প্রেসিডেন্ট বারসেট সুইস এয়ারফোর্সের বিশেষ বিমানে করে কক্সবাজার বিমান বন্দরে পৌঁছান।
এরপর তিনি সরাসরি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসা নেয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে যান। তিনি সুইস সহযোগিতাপ্রাপ্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সুইস অনুদান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। স্থানীয় কমিউনিটির পাশাপাশি আগত রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদান করার জন্য হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, তারও প্রশংসা করেন তিনি।
এরপর তিনি দুপুর সাড়ে ১২টায় বালুখালী ও কুতপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান।সেখানে তিনি ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কাছ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের নির্মম কাহিনী শুনেন। তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সান্তনা দিয়ে নারী-পূরুষ ও শিশুদের সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করেন তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এ সময় তিনি ক্যাম্পে বসবাসরত নারী ও শিশুদের পরিস্থিতি এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার ওপর জোর দেন।
পরে তিনি কুতপালং ডি-৫ ক্লকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে সুইস প্রেসিডেন্টের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইস মাহমুদ আলী,সাংস্কৃতিক বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও সুইস এনজিও,আইওএম এবং ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে সুইস এয়ারফোর্সের বিশেষ বিমানে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বারসেট।
এদিকে সুইস পেসিডেন্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকে ঘিরে মেরিন ড্র্রাইভ সড়ক এবং লিংক রোড থেকে উখিয়া পর্যন্ত নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। তিনি পরিদর্শন শেষ করে না যাওয়া পর্যন্ত রাস্তায় কোন যানবাহন চলেনি। জনকোলাহল পুর্ণ এলাকায় দোকানপাট ও বন্ধ করে দেয়া হয়।
জানা যায়, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতপালং-বালুখালীসহ টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেই কক্সবাজারে এসেছেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট।
এছাড়াও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জরুরি মানবিক সাহায্য প্রদানের জন্য তার দেশ গত অক্টোবরে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে আট মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (৮ মিলিয়ন ডলার) সহায়তা প্রদান করে।আর প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে আরও ১ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার (১ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ) (এক’শ ২৮ কোটি টাকা) সহায়তা দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন সুইজারল্যান্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসে।এ সহায়তার ফলে শরণার্থী সংকটের দ্বারা প্রভাবিত কক্সবাজার এলাকার স্থানীয় জনসাধারণও উপকৃত হবে।
Posted ৪:২৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta