কক্সবাংলা ডটকম :: চাঁদের পৃষ্ঠদেশের কথা কল্পনা করলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক নিষ্ফলা প্রাণহীন জমি। পৃথিবী থেকে চাঁদকে দেখতে যতটা মনোরম মনে হয়, বাস্তবে কিন্তু চাঁদের মাটি ততটাই রুক্ষ। পৃথিবীর যেমন উপগ্রহ চাঁদ, তেমনই গ্যালাক্সিতে থাকা বিভিন্ন গ্রহেরও চাঁদের মতো উপগ্রহ রয়েছে।
শনির যে উপগ্রহ রয়েছে, তাকে আমাদের চাঁদের জমির মতন রুক্ষ মনে হলেও নতুন গবেষণা কিন্তু অন্য কথা বলছে। অত্যাধুনিক মহাকাশ দূরবীন এবং ক্যামেরার পাওয়া ছবি বদলে দিয়েছে এই ধারণা।
সম্প্রতি শনিগ্রহের চাঁদ এনসেলাডাসের সূর্যাস্তের সময়ের কিছু ছবি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে এসেছে। সায়েন্স অ্যালার্ট-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বলা হয়েছে, শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস সাদা বরফের দেওয়ালে ঢাকা। দেখলেই মনে হয় যেন মহাশূন্যে ভাসমান এক বিশাল বড় বরফের বল।
বিজ্ঞানীদের ইনফ্রেয়ার্ড ওয়েভলেন্থের মাধ্যমে করা গবেষণায় জানা গিয়েছে, শনির চাঁদের এই বরফ পুরোপুরি তাজা এবং নতুন। এই বিষয়টি গবেষণারত বৈজ্ঞানিকরা যে-ই না জানতে পারলেন, তার পরেই তাঁদের ধারণা জন্মাল-শনির ওই চাঁদের পৃষ্ঠদেশ কিছু একটা ঘটে চলেছে।
২০১৭ সালে ক্যাসিনি স্পেসক্রাফ্ট মিশন শেষ হয়। ওই মিশন থেকেই পাওয়া যায় সূর্যাস্তের সময়ে তোলা এনসেলাডাসের এই ছবিগুলো। ২০০৫ সালে ক্যাসিনি-ই প্রথম জানায় শনির ওই উপগ্রহে নোনতা জলের ধারা বইছে। এনসেলাডাস উপগ্রহের পশ্চিম মেরুর চারটি দীর্ঘকায় ফাটল থেকে এই নোনতা জলের ধারার উত্পত্তি বলে মনে করা হয়। এই ফাটলগুলির নাম বৈজ্ঞানিকরা দেন ‘টাইগার স্ট্রাইপস’।
ক্যাসিনির সাহায্যে বৈজ্ঞানিকরা ওই ফাটলগুলিতে একশোরও বেশি উষ্ণ প্রস্রবণের সন্ধান পেয়েছেন। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস এইগুলি তৈরি হওয়ার কারণ শনির চাঁদে ঘটা জোয়ার। সব গ্রহ এবং তাদের চাঁদের ভেতর এই জোয়ার-ভাঁটা শক্তি কাজ করে। পৃথিবীর চাঁদের জন্যই আমরাও সমুদ্র এবং নদীতে জোয়ার-ভাঁটা দেখতে পাই।
বৈজ্ঞানিকদের মতে শনি এবং এনসেলাডাসের পারস্পরিক টানের ফলে এই বরফের উপর এ রকম দীর্ঘ ফাটল তৈরি হয়েছে। ওই ফাটল থেকে গরম জল বেরিয়ে এনসেলাডাসের পৃষ্ঠদেশে এসে জমে বরফ হয়ে যায়। এ রকম ভাবেই প্রতিনিয়ত ফাটলগুলির উষ্ণপ্রস্রবণ থেকে গরম জল বাইরে বেরিয়ে এসে তাজা বরফের সৃষ্টি হতে থাকে।
গবেষকরা জানিয়েছেন এনসেলাডাসের বরফের সঙ্গে পৃথিবীতে জমা বরফের মিল আছে। বরং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে থাকা বরফের সঙ্গে এনসেলাডাসে জমা বরফের মিল নেই। গবেষণার থেকে পাওয়া তথ্যগুলি, এনসেলাডাসে বহু কোটি বছর আগে সমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল কি না তা আমাদের হয়তো পরবর্তীতে জানান দেবে। তবে তা প্রমাণ করতে বিজ্ঞানীদের এনসেলাডাস নিয়ে এখনও আরও অনেক গবেষণা বাকি।
Posted ১১:২৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta