কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জানুয়ারি) :: তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি)। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর পর এই সম্মেলন হচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। করোনার কারণে এবার ভার্চুয়ালি ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। প্রথম দিন সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধান প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২২’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ২০ জানুয়ারি।
সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ডিসি সম্মেলনে এবার আমরা সবকিছু একটু পরিবর্তন করে দিয়েছি। এজন্য আমরা ওসমানীতে নিয়ে গেছি, যাতে পর্যাপ্ত স্পেস পাওয়া যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। শুধু ১৫ জন মন্ত্রী ও ১৫ জন সচিবকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।’
‘কার্য অধিবেশনগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিব এসে স্টেজে বসবেন, জেলা প্রশাসকরা নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবেন।’
তিনি বলেন, ‘এবার সম্মেলনে মোট ২৫টি অধিবেশন হবে। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২১টি। এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রপতির দিকনির্দেশনা গ্রহণ নিয়ে একটি, স্পিকারের শুভেচ্ছা বক্তব্য নিয়ে একটি ও প্রধান বিচারপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য নিয়ে একটি অধিবেশন হবে।’
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘সম্মেলনে মোট ৫৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশগ্রহণ করবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।’
কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৬৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রস্তাব পাওয়া গেছে ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত, এ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ১৮টি। এরপর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় (১৬টি প্রস্তাব) ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত (১৫টি) প্রস্তাব বেশি পাওয়া গেছে।’
ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা, কোভিড ম্যানেজমেন্ট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আরও ব্যবহার ও ই-গবার্ন্যান্স আরও নিশ্চিত করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন। এ বিষয়গুলোই মূলত আলোচনায় আসবে।’
জেলা প্রশাসক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হারের বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘২০১৯ সালে বাস্তবায়ন হার ছিল ৭৫ শতাংশ।’
করোনার মধ্যেও কেন ডিসি সম্মেলন জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন যেহেতু আমরা সবকিছু প্রযুক্তির উপর ছেড়ে দিতে চাই না। আমরা যখন ভিডিও কনফারেন্সিং করি তখন অফলাইনে ডেডিকেটেড ফ্রিকোয়েন্সিতে করি। সম্মেলন কিন্তু আমরা সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছি। পাঁচদিনের জায়গায় তিনদিন।’
তিন দিনের সম্মেলনের কর্মসূচি অনুযায়ী, এবার সম্মেলনে ২১টি কার্য অধিবেশনসহ মোট ২৫টি অধিবেশন থাকবে। এর মধ্যে প্রথম দিন সাত, দ্বিতীয় দিন আট এবং তৃতীয় দিন ১০টি অধিবেশন থাকবে।
প্রথম দিন
১৮ জানুয়ারি উদ্বোধনের পর সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হবে প্রথম অধিবেশন; যাতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। একইদিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে দুপুর সাড়ে ১২ টায়। অধিবেশনটি হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওতাধীন সংস্থাগুলোর সঙ্গে। পরে একে একে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সংস্কৃতি বিষয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অধিবেশন হবে। আর সবশেষে থাকবে রাষ্ট্রপতির দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য।
দ্বিতীয় দিন
১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় দিন প্রথম অধিবেশন শুরু হবে সকাল ৯টায়। অধিবেশনটি হবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। পরে একে একে কৃষি, খাদ্য, বস্ত্র ও পাট, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, শ্রম ও কর্মসংস্থান, শিল্প ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে।
তৃতীয় দিন
২০ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন শুরু হবে পৌনে ৯টায়। অধিবেশনটি হবে প্রতিরক্ষা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে। দ্বিতীয় অধিবেশন হবে পানি সম্পদ, নৌপরিবহন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। পরে তথ্য ও সম্প্রচার এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ভূমি ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, রেলপথ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে মতবিনিময় হবে।
Posted ১:২৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta