কক্সবাংলা ডটকম :: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেনের উত্থানে শেষ হয়েছে। মুলত প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার খবরে আজ সূচক ও লেনদেনে লাফ মেরেছে। আজ ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ৫১ পয়েন্ট। আর লেনদেন ছাড়াল হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার বান্ধব বাজেট ঘোষণা না আসায় সব মহলে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর থেকে টানা দরপতন সব মহলে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন মহলে নেড়ে চড়ে বসে। এরপর গত গতকাল বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম দুটি মন্তব্য করেছেন।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ তারা দিয়েছেন, সেই টাকার একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে বলেই তাদের বিশ্বাস। তিনি বলেন, বাজেটে আরও যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোও বাজারকে চাঙা করার আত্মবিশ্বাসের কথা তিনি বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হলে পুঁজিবাজারে তার প্রভাব পড়বে এবং বাজারে চাঙাভাব বিরাজ করবে। আমাদের দেশের অর্থনীতি ভালোভাবে চলছে। প্রবৃদ্ধিও ভালো হচ্ছে। সারা বিশ্বের তুলনায় আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার শক্তিশালী অবস্থানে। কাজেই পুঁজিবাজার ভালোভাবে চলবে আমাদের প্রত্যাশা।’
অন্যদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ইঙ্গিত দেন, বাজেট পাসের সময় কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হতে পারে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম-সিএমজেএফের এক আয়োজনে তিনি শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে বলেন, ‘এই সুযোগ দেয়া হলে একদিকে কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত হবে, অন্যদিকে তা শেয়ারবাজারকে গতিশীল হতে সাহায্য করবে।’
মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী এই দুই সদস্যের বক্তব্যের পরদিন বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হয় সূচকের উত্থান প্রবণতা দিয়ে। আজ সময় যত গড়িয়েছে, সূচকও তত বেড়েছে। আর লেনদেনেও দেখা দিয়েছে নতুন গতি। বিনিয়োগকারীরাও আস্থার সঙ্গে শেয়ার কেনায় মনোযোগী ছিলেন।
ডিএসইর তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩৮১টি প্রতিষ্ঠানের ২৫ কোটি ৯৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯টি শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৩৫টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির দাম।
এদিন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫১ দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ২৬ পয়েন্ট।
এদিন ডিএসইতে ১ হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৯৪৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার শেয়ার। আজ সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। এরপর যথাক্রমে রয়েছে, শাইনপুকুর সিরামিক, আরএকে সিরামিক, আইপিডিসি, মুন্নু ফেব্রিকস, জেএমআই হাসপাতাল, সাইফ পাওয়ার, ইউনিক হোটেল, ওরিয়ন ফার্মা এবং এইচ আর টেক্সটাইল লিমিটেডের শেয়ার।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।বাজারটিতে ২৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১০০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৫ টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪২ কোটি ৬০ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ টাকা।
৩০ টাকার শেয়ার মাত্র তিন টাকা দরে কেনাবেচা
তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটেছে শেয়ারবাজারে। ৩০ টাকার শেয়ার মাত্র তিন টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। বীমা খাতের এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মোট চার লাখ ৩০ হাজার ৯৮০টি শেয়ার ১২ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়েছে এমন দরে।
প্রকৃত দর ৩০ টাকায় কেনাবেচা হলে, এ শেয়ারের লেনদেন মূল্য হতো প্রায় এক কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি। লভ্যাংশ ঘোষণার পরদিন শেয়ারদরে সার্কিট ব্রেকার না থাকায় বৃহস্পতিবার এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্নিষ্টদের দাবি, ৩০ টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ বসাতে গিয়ে ভুল করে ৩ টাকায় লেনদেন অর্ডার বসানো হয়েছিল। এটা অনিচ্ছাকৃত বলেও দাবি তাদের। তবে সার্বিক তথ্য বিশ্নেষণ করে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে হয়ে থাকতে পারে।
সন্দেহজনক হওয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেনটি বৃহস্পতিবারই বাতিল করেছে। লেনদেন বাতিল হলেও কী করে এমনটি হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে স্টক এক্সচেঞ্জটি। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও খতিয়ে দেখছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত শেয়ার লেনদেনে বিক্রেতা ছিল ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ নামের ব্রোকারেজ হাউস। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে এ শেয়ার বিক্রির আদেশ দেয়। ওই আদেশ দেখে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ওই দরে পুরো শেয়ার কিনে নেন লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এক নারী গ্রাহক। তার নাম-পরিচয় অবশ্য জানা যায়নি।
জানতে চাইলে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সিইও খোন্দকার সাফফাত রেজা বলেন, ওই বিনিয়োগকারী তার মোবাইল অ্যাপ থেকে শেয়ার কিনেছেন, সরাসরি ব্রোকারেজ হাউস থেকে লেনদেনটি হয়নি। তবে এ বিষয়ে ফারইস্ট লাইফ সিকিউরিটিজের সিইও মো. নাজমুন মনিরের কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
সন্ধ্যায় এ বিষয়ে ফোন করা হলে জানান, তিনি ডিএসইতে এ বিষয়ে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ সেকেন্ডে ৩১ টাকা ৪০ পয়সা দরে মোট আড়াই হাজার শেয়ার কেনাবেচার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন শুরু হয়।
আলোচিত লেনদেনের সবগুলো (মোট ৫টি) সম্পন্ন হয় সকাল ১০টা ৩৩ সেকেন্ডে। ওই এক সেকেন্ডেই আরও দশটি লেনদেনে মোট ৮৩ হাজার ২০টি শেয়ার কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে ৩০ টাকা দরে ২০ হাজার এবং ৩০ টাকা ১০ পয়সা দরে পাঁচ হাজার, ৩০ টাকা ২০ পয়সা দরে ৮ হাজার শেয়ার কেনাবেচা হয়। বাকি শেয়ারগুলো কেনাবেচা হয় ৩০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩১ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে।
কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, শেয়ার লেনদেনে অনেক সময় কাছাকাছি কোডের শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ভুল করে এক শেয়ারের পরিবর্তে অন্য শেয়ার কেনা বা বেচার অর্ডার বসানো হয়। একইভাবে শেয়ারদরের ক্ষেত্রেও ভুল হয়। তবে এ লেনদেনটি পূর্বপরিকল্পিত হয়ে থাকতে পারে।
সন্দেহের কারণ, কেউ ভুল করে ৩০ টাকার শেয়ার তিন টাকায় বিক্রির আদেশ বসাতে পারে, কিন্তু একবারে এত সংখ্যক শেয়ার বিক্রির আদেশ বড় প্রতিষ্ঠান সাধারণত বসায় না। তাছাড়া লেনদেনের শুরুর মাত্র ৩৩ সেকেন্ডে লেনদেন অর্ডার বসানোয় খুব এক্সপার্ট না হলে এত দ্রুততায় ক্রয় অর্ডার বসানো প্রায় অসম্ভব, বিশেষত মোবাইল অ্যাপে।
এদিকে সার্বিক হিসাবে বৃহস্পতিবার ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। তুলনামূলক দরবৃদ্ধি পাওয়া শেয়ার সংখ্যা ছিল বেশি, সূচকও বেড়েছে। এমনকি এক মাস বা ২৩ কার্যদিবস পর ডিএসইর লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ১৯৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে। বিপরীতে ১৩৫টির দর কমেছে, অপরিবর্তিত ৪৮টির দর।
ডিএসইএক্স সূচক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে ৬৪২৫ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। সূচকের বৃদ্ধিতে খাতওয়ারি হিসেবে বেশি অবদান ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার, যা বুধবারের তুলনায় ১০২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি।
Posted ২:৪২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta