কক্সবাংলা ডটকম :: নানা ধরনের বিতর্কের কারণে তারকাদের ক্যারিয়ার গ্রাফ বদলে যায়। কিন্তু তাতে কি তাদের ক্যারিয়ার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়? প্রশ্নটি বিগত কয়েক মাসে আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে জনি ডেপের মামলা, মাদক মামলায় আরিয়ানের গ্রেফতার এমনকি সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু বিতর্ক একাধিক তারকা ও শিল্পীর ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ফেলেছে। মাদক মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন আরিয়ান। অ্যাম্বারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলায়ও জিতেছেন জনি ডেপ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অ্যাম্বারের করা মামলার কারণে ক্যারিয়ারে সমূহ ক্ষতি হয়েছে জনি ডেপের। সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার পাশাপাশি বাদ পড়েছেন অনেক সিনেমা থেকে। নতুন করে ফিরতে পারবেন কিনা সেটাও অনিশ্চিত।
জনি ডেপ বলেছিলেন, ‘প্রযোজকদের পক্ষ থেকে “নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত অপরাধী” ধরা হয়েছিল আমাকে।’ তিনি বাদ পড়েছিলেন ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস ও পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে। মামলায় জিতে গেলেও এসব সিনেমায় তার ফেরা অনিশ্চিত। এদিকে অস্কার মঞ্চে থাপ্পড় কাণ্ডের পর একাডেমি থেকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন উইল স্মিথ। এর মধ্যেই তার একাধিক সিনেমা পিছিয়ে গেছে। ১০ বছরে তার ক্যারিয়ার গ্রাফ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা অজানা। শিশু নিগ্রহের মামলার কারণে ভুগতে হয়েছে রোমান পোলানস্কিকে। জনি ডেপের করা মানহানির মামলার কারণে কাজ না হারালেও পারিশ্রমিক কমেছে অ্যাম্বার হার্ডের।
জনি-অ্যাম্বারের মতো বহুল চর্চিত হয়েছেন আরিয়ান খান। গত বছরের অক্টোবরে নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো গ্রেফতার করে শাহরুখ পুত্রকে। গত মাসে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু এরই মধ্যে সংবাদপত্র থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু কথা হয়েছে তাকে নিয়ে। শোবিজের তারকা হন কিংবা কোনো ব্যবসায়ী, যখন বিতর্কের মুখে পড়েন তার সামাজিক মর্যাদা হানি হয়। এসব ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা অনুসারে গ্রেফতার হলো তদন্তের শেষ পর্যায়। আরিয়ানের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যহার হয়েছে বলে মনে করেন আইনজীবী মাজিদ মেনন। তার মতে, ‘এর মধ্য দিয়ে যে মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি হয় তার প্রতিকার সম্ভব হয় না।’
প্রথম সারির অভিনেতা না হলেও সূর্য পাঞ্চোলি ভুগছেন জিয়া খান কেসের জন্য। মূলত শোবিজ জগিট মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। এখানে প্রযোজকরা তাদেরই সুযোগ দেন যাদের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ থাকে। যখনই কোনো বিতর্ক ওঠে কোনো মানুষকে ঘিরে, নীরবভাবে তার ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে কাস্টিং ডিরেক্টর কুনাল শাহ বলেন, ‘কাস্টিং একটা সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি যখন সিনেমার জন্য অভিনেতাদের বাছাই করি, বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। কোনো অভিনেতা বা তারকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রযোজকরা তাদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে দোনোমনা করেন। কেননা দর্শক হয়তো বিয়টি ভালোভাবে নেবে না।’
শোবিজে প্রতিটি কাজ অনেক টাকার ব্যাপার। প্রযোজকরা কখনো চান না তাদের টাকা আটকে থাকুক। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে ওই অভিনেতার সুযোগ হারিয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো এ মামলাগুলো নিষ্পত্তি বা বিতর্কগুলোর সমাধান হওয়ার পরও বিতর্কের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাপন ও কাজের সুযোগ পান না। সূর্য পাঞ্চোলির মামলা এখনো চলছে। অন্যদিকে সুশাস্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ক্ষেত্রে রিয়া চক্রবর্তীকে আটক করা হয়েছিল। ২৮ দিন পর জামিন পান তিনি। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে তার ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এমনকি পুলিশি নিষেধাজ্ঞার কারণে এখনো তিনি দেশের বাইরে যেতে পারেন না।
এ ধরনের বিতর্কের ক্ষেত্রে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তারকাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও অনেক ক্ষেত্রে শুভানুধ্যায়ী, সহকর্মী, পরিচালকরা তাদের পাশে থাকেন। যেমন রিয়া চক্রবর্তীর পাশে ছিলেন রুমী জাফরি। এ ধরনের বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়গুলো তাদের অত্যন্ত প্রভাবিত করে। এমনকি যতক্ষণে তারা অভিযোগ থেকে মুক্ত হন, ততক্ষণে ক্ষতিটা যা হওয়ার হয়ে যায়। বহু বছর ধরে ভোগান্তি পোহাতে হয়। আরিয়ানকে নিয়ে প্রেস ও মিডিয়ায় যেভাবে কথা বলা হয়েছে, খেয়াল করুন। রিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাদের জন্য এসব অনেক বড় ক্ষতির কারণ।’ পর্নোগ্রাফি তৈরি-সংক্রান্ত মামলায় রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেফতার করার পর গণমাধ্যমে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে একাধিক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন শিল্পা শেঠি।
এসব বিতর্কের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড ভ্যালু প্রভাব রাখে। সামাজিক ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে তারা এড়িয়ে যেতে পারেন। যেমন সালমান খান নিজের এমন ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করতে পেরেছেন। বিইং হিউম্যান দিয়ে তিনি সামাজিক সহায়তামূলক কাজ করছেন। অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত সুখেশ চন্দ্রশেখরের সঙ্গে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের জড়িত থাকার কথা উঠেছিল। এরপর ইয়োলো নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে দাতব্য কাজ শুরু করেন তিনি। শোবিজে নিজের অবস্থান ফেরানোর এ রকম নানা চেষ্টাই দেখা যায়। পরিচালক প্রহ্লাদ কক্কর এ সম্পর্কে বলেন, ‘সালমান খান অনেকটা বুলেটপ্রুফ হয়ে গিয়েছেন। তাকে খুনি বলা হয়, কিন্তু তবু তার কাজের অভাব হয় না। তার ব্র্যান্ড ভ্যালু যখন ক্ষতিগ্রস্ত হলো তিনি শুরু করলেন বিইং হিউম্যান। এ থেকে তার কোনো মুনাফা হলো না, কিন্তু ক্যারিয়ার বেঁচে গেল।’
ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে তাকে ক্যারিয়ারের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত কিনা এ তর্ক বহু পুরনো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিতর্ক সংশ্লিষ্ট সামাজিক কাদা ছোড়াছুড়ির কারণেই তারকারা আগের জনপ্রিয়তা ফিরে পান না। কাজ হয়তো তারা নতুন করে কিছু পান তবে সেগুলো দর্শক গ্রহণ করে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়। যেমন সালমান খান করতে পেরেছেন। হয়তো জনি ডেপও পারবেন। কিন্তু রিয়া চক্রবর্তী বা সূর্য পাঞ্চোলির পক্ষে সম্ভব হয় না। তারা কেবল অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে একটি ‘স্বাভাবিক’ জীবন চান। সূর্যের বাবা আদিত্য পাঞ্চোলির ভাষায়, ‘হয়তো ছয় মাসের মধ্যে মামলাটির সমাপ্তি হবে। আমরা এ কেসের সমাপ্তি চাই।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
Posted ৯:৩৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta